ইম্ফল: ৬২ দিন ধরে মণিপুরের দুটি থানায় ধুলোর পাহাড় জমেছে দুটি এফআইআরে। কিন্তু, কেউ সাড়া দেয়নি। অথচ দুই মহিলাকে শারীরিক নির্যাতন এবং নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়াচড়া পড়ে গিয়েছে। এফআইআর হয়ে পড়ে রয়েছে, কেউ জানেই না। দফায় দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, শান্তি আলোচনা চলছে, উপরন্তু নির্বিকার বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের পুলিশ-প্রশাসন। ঘটনা হল এই এফআইআর নির্দিষ্ট থানায় জমা হতেই গড়িমসি করে মাসখানেক কেটে গিয়েছিল। ততক্ষণে নির্যাতিতারা প্রাণের ভয়ে তাঁদের ঘর ছেড়ে অন্য জেলায় গিয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন।
নারী নির্যাতনের এহেন বর্বর ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গোটা বিশ্ব। মুখ পুড়েছে দেশের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত মণিপুর নিয়ে তাঁর মৌনী ভেঙেছেন। তখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সাফাই দিয়ে বলেন, হিংসাত্মক ঘটনা নিয়ে প্রায় ৬ হাজার এফআইআর হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরই পুলিশ এই কেসটার খোঁজে নেমে পড়ে। মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চারজনের মধ্যে একজন হল ৩২ বছরের হুইরেম হিরোদাস মেইতি। অন্যদের পরিচয় জানাতে অস্বীকার করেছে পুলিশ।
মূল বিষয় হচ্ছে, পুলিশের খাতায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও গত ২৭ মে চিফ অফ আর্মি স্টাফ মনোজ পাণ্ডে রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন। সেখানে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু নড়ে বসেনি। এরপর ২৯ মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চারদিনের সফরে মণিপুর আসেন। তিনিও দফায় দফায় বৈঠক করেন সকল স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। ৪ জুন কেন্দ্রীয় সরকার গুয়াহাটি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অজয় লাম্বার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। তখনও পুলিশ নড়েনি।
উত্তর-পূর্ব ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের প্রধান তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ইম্ফলে এসে বীরেন সিং এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করেন। পুলিশ পদক্ষেপ করেনি। ২৪ জুন দিল্লিতে অমিত শাহ সর্বদলীয় বৈঠক করেন। পুলিশ নীরবেই ছিল। ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করেন শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং পেট্রলিয়াম মন্ত্রী। মণিপুর পুলিশ তখনও ঘুমিয়ে ছিল। এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা নিঃসঙ্কোচে বলেন, আমাদের কাছে কোনও প্রমাণ না থাকায় পদক্ষেপ করা যায়নি। ভিডিওটি দেখার পরই বিষয়টি আমরা জানতে পারি। এখন ভিডিওটি আমাদের কাছে প্রমাণ। আমরা পদক্ষেপ করেছি এবং গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে।
অভিযোগ, ওই দুই মহিলাকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। যদিও সেকথা অস্বীকার করেছে পুলিশ। ওই পুলিশ কর্তার সাফাই সেদিন উত্তেজিত জনতা থানা আক্রমণ করে। তারা অস্ত্র লুটের চেষ্টা করছিল। পুলিশ থানা বাঁচাতে ব্যস্ত ছিল। নির্যাতিতা দুই মহিলার মধ্যে একজনের অভিযোগ, আমাদের গ্রাম আক্রমণ করার সময় পুলিশ সেখানে ছিল। পুলিশই আমাদের বাড়ির কাছ থেকে নিয়ে আসে কিছুদূর গিয়ে আমাদের রাস্তায় ছেড়ে দেয়। ওদের হাতে পুলিশই আমাদের তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ এক মহিলার।