বনগাঁ: চিরাচরিত সামাজিক নিয়ম না মেনে একদম নতুন নিয়মে বিয়ের আসর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়া এলাকায়। সব কিছু ঠিক থাকলেও দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য নিয়ম। অগ্নিসাক্ষী রেখে বিয়ের ঋত্বিক হলেন মহিলা পুরোহিত।
আর পাঁচটা বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই সেজে উঠেছিল চাঁদপাড়ার সুভাষ বৈদ্যর একমাত্র মেয়ে সারিকার বিয়ের অনুষ্ঠান। আলিপুরদুয়ারের অরবিন্দ নগরের বাসিন্দা তপন কর্মকারের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হয় সারিকার। কর্মসূত্রে দু’জনেই কলকাতায় একই বিভাগে সরকারি চাকরিতে কর্মরত। কিন্তু সব ঠিক থাকলেও বাঙালি বিয়ের রীতিকে না মেনে একেবারে আলাদা নিয়মে বিয়ে হল বৈদ্যবাড়িতে। বিয়ের আসরে পুরুষ পুরোহিতের বদলে দেখা গেল মহিলা পুরোহিতকে। বদল করা হয় কন্যা সম্প্রদানের নিয়মও। এ বিষয়ে বৈদ্যবাড়ির সদস্যরা বলেন, মেয়েরা কোনও পণ্য নয়। অতএব কন্যাদান যে রীতি আছে সেটা আমরা মানি না। কারণ মেয়েরাও মানুষ। দান কথার অর্থ কোনও বস্তুকে দেওয়া। মেয়েরা কোনও বস্তু নয়। এছাড়াও বিয়ের পরে মায়ের ঋণ শোধ করার যে নিয়ম থাকে, সে বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য, মায়ের ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। সুতরাং এই নিয়মও আমরা মানবো না।
আরও পড়ুন: Accident in Maharashtra: মহারাষ্ট্রে ব্রিজ ভেঙে গাড়ি দুর্ঘটনা, বিজেপি বিধায়কের ছেলে সহ মৃত ৭
এ ব্যাপারে সারিকা বলেন, আগে সমাজে যে নিয়মে মেয়েদের বিয়ে হত তাতে মেয়েরা বিয়ের পর সংসার সামলাত। এখনকার যুগের মেয়েরা সাবলীল। সব কিছুই করতে পারে, যেমন একটি মেয়ে চাঁদেও যেতে পারে, দেশ ও রাজ্য চালাতেও পারে। ঠিক তেমনি মেয়েরা পৌরোহিত্যও করতে পারে, কন্যাদান শব্দটি আমরা মানছি না কারণ মেয়েরা কোনও পণ্য নয়।
এ বিষয়ে নববধূর স্বামী তরুণ কর্মকার বলেন, আমরা যে নিয়ম পালন করছি আমাদের জানা উচিত কেন তা পালন করছি। আর বিয়ের পর মেয়েরা যখন শ্বশুরবাড়ি যায় মায়ের কাছে চাল ছুড়ে দেয় মা-বাবার ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। এটাই আমি মনে করি।
মহিলা পুরোহিত অনিতা মুখোপাধ্যায় জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুজো করে আসছি। অনেক দূরে আমন্ত্রণ করা হয় পুজো করার জন্য। আমি বলি আমাকে ষোলআনা দক্ষিণা দিন, আমার কোন দাবি নেই, আর দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। মূলত সেই নিয়মটাকে আমি বদলানোর চেষ্টা করছি, এটাই বোঝানোর জন্য যে মেয়েরা চাইলে সব পারে।
বৈদ্যবাড়ির সদস্যদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে পুরুষশাসিত সমাজে এই প্রথা চলে আসছে, মূলত মানুষের চিন্তা ধারাকে বদলানোর জন্যই এই পদক্ষেপ।