Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
Pic Courtesy by ISRO
কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছিল অনেকদিন আগেই। এখন শেষ মুহূর্তের প্রতীক্ষা। আর কয়েক ঘন্টা পরেই আসবে সেই প্রতিক্ষিত ক্ষণ। আর সেই ইতিহাসের সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো। শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটিতে অবতরণ করতে চলেছে চন্দ্রযান ২’র ল্যান্ডার বিক্রম। আর বিক্রমের এই সফল অবতরণের পর ভারত হবে চতুর্থ দেশ যে, আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চিনের পর এই কৃতিত্ব অর্জন করবে। এই বিষয়ে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা একবাক্যে স্বীকার করছেন, ‘সারা দেশ একটি চরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে একথাও ঠিক যে, ল্যান্ডারের অবতরণের সময় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’ চাঁদের মাটিতে নামার সময় সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যাতে কোনও ভুল না হয় তার জন্য আগে থেকেই তাতে একটি স্বয়ংক্রিয় সেন্সর স্থাপন করে দিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কারণ চাঁদের মাটিতে নামার সময় বিক্রমের ৪টি পায়া যাতে সমান ভাবে মাটিতে নামতে পারে তার জন্য চাঁদের মাটিতে স্থান নির্ণয় ও নামার সময় চাঁদের ধুলো ঝড় থেকে রক্ষা পেয়ে বিক্রমের ভেতর থেকে সঠিক ভাবে রোভার প্রজ্ঞানকে চাঁদের মাটিতে নামানোর পুরো প্রক্রিয়াটাই স্বয়ংক্রিয় ভাবে করবে ল্যান্ডার বিক্রম। বিক্রমের চারটি পায়া সমান ভাবে মাটিতে না নামলে রোভার তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাই ইসরোর বিজ্ঞানীরা সেরকম প্রযুক্তিই ব্যবহার করেছেন। কারণ এর আগে প্যালেস্তাইনের চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়েছে, শুধু এই ধুলো ঝড় ও ল্যান্ডিং সমস্যার জেরে। তবে এই ধুলোঝড় বন্ধ হওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ল্যান্ডিংয়ের প্রায় ৪ ঘন্টা বাদে রোভার বেরিয়ে আসবে বিক্রমের ভেতর থেকে।
ইসরোর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট গতিতে নির্দষ্ট কক্ষপথে এখনও পর্যন্ত ঠিকঠাক ভাবেই ঘুরে চলেছে বিক্রম। এরপর গতিবেগ কমানোর পাশাপাশি কক্ষপথের দূরত্ব কমিয়ে তাকে চাঁদের মাটিতে নামতে হবে। যার জন্য সময় ধরা হয়েছে ১৫ মিনিট। আর এই ১৫ মিনিটই আতঙ্কের। তার কারণ প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি সেকেন্ডে যে সঙ্কেত পাঠানো হবে ইসরো থেকে, সেগুলি চন্দ্রযান ২ ও বিক্রমকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে কাজ করতে হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিক্রম একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে চাঁদকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। ৩৫ কিলোমিটার গুণিতক ১০১ কিলোমিটার। গতিবেগ প্রায় ৬১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। সেখান থেকে ধাপে ধাপে তার গতিবেগ কমিয়ে নিয়ে আসা হবে। চাঁদের মাটি থেকে ৪০০ মিটার উচ্চতায় সে যখন আসবে তখন তার গতি কমতে শুরু করবে। এখান থেকেই সে ছবি তুলে পাঠাতে শুরু করবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানীরা তা বিবেচনা করে দেখবেন, যেখানে নামছে, সেখানে নামাটা সফল হবে কিনা। তারপর ১০০ মিটার উচ্চতায় যখন আসবে, তখন বিক্রমের ওপরে থাকা পাঁচটি ইঞ্জিন একসঙ্গে ফায়ারিং হবে। তবে এই ফায়ারিং গতিবেগ বাড়ানোর জন্য নয়। ফায়ারিং হবে উল্টোদিকে, গতিবেগ কমানোর জন্য। এর ফলে পাখির পালকের মতো ধীরে ধীরে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে ল্যান্ডার বিক্রম। অবতরণের পরই সেন্সর কাজ শুরু করে দেব। এরফলে পাঁচটা ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যাবে। ’ তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, চাঁদের মাটিতে যে মসৃণ ধূলিকণা রয়েছে, তা বিক্রমকে ক্ষতি করতে পারে। তাই অবতরণের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ধূলো খুব বেশি না ওড়ে। শুক্রবার রাত ১টা বেজে ৫৫ মিনিটে চাঁদের মাটিতে ধীরে ধীরে অবতরণ করবে বিক্রম। বিক্রমের এই অবতরণের বিষয়টি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাংক্ষাৎকারে ইসরোর প্রধান ডঃ কে সিভান জানিয়েছেন, ‘হঠাৎ করেই কেউ এসে আপনার হাতে এক নবজাতককে তুলে দিল। নির্দিষ্ট কায়দা না জানলে আপনি কী তাঁকে ধরে রাখতে পারবেন? শিশুটি নিজের ইচ্ছেমতো হাত-পা নাড়বে, কিন্তু আমাদের তাকে সামলে নিয়ে ধরে রাখতে হবে। ঠিক এইরকমই, ল্যান্ডার একবার এদিকে যাবে তো একবার ওদিকে যাবে, কিন্তু আমাদের ঠিক ওই নবজাতক সামলানোর মতোই তাঁকে সামলাতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং এই অবতরণ প্রক্রিয়াটি সরাসরি দেখতে মধ্যরাতে বেঙ্গালুরুর ইসরো সদর দফতরে উপস্থিত থাকবেন। তাঁর সঙ্গে ৬০টিরও বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার এই মুহূর্তের সাক্ষী থাকবেন। এদের মধ্যে বাংলার দুজন পড়ুয়া রয়েছেন। যারা গত মাসে ইসরোর তরফে সারাদেশের মধ্যে আয়োজিত মহাকাশ সংক্রান্ত ক্যুইজে সফল হয়ে এই সুযোগ পেয়েছেন। চন্দ্রযান ২ মিশন সফল হলে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পর চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদে সঠিক ভাবে অবতরণের কৃতিত্ব অর্জন করবে ভারত। এমনকী চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার ফলে চাঁদের অজানা দিকের রহস্য উন্মোচিত হবে পৃথিবীবাসির কাছে। কারণ চাঁদের এই দিকটি এখনও মানুষের কাছে অজ্ঞাতই রয়ে গেছে।