জেলা

Close

Sign In

New User? Sign Up

Sign Up

Have an account? Sign In

আপনি রিপোর্টার

  • সেরা খবর
  • রাজ্য
  • কলকাতা
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • সম্পাদকীয়
  • বিনোদন
  • খেলা
  • কোথায় কী
  • মতামত
  • ব্লগ
  • জীবনধারা
  • প্রযুক্তি
  • সাহিত্য বই
  • আরও বিভাগ
  • ভ্রমণ
  • স্বাস্থ্য
  • মেয়ে বেলা
  • উনি বলছেন
  • আপনি রিপোর্টার
  • Sign In
  • অনুসন্ধান
  • আপনি রিপোর্টার
  • জেলা
  • ফটো গ্যালারি
Live Tv

Click To Watch Live TV


Breaking News

  • রহস্য মৃত্যু শিল্পপতি পরিবারের বধূর আরও পড়ুন
  • যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস, ইস্তফা বিজেপি মন্ত্রীরআরও পড়ুন
  • শিবরাত্রির দিন নন্দীগ্রামে মমতার মনোনয়ন পেশ! আরও পড়ুন
  • লেপার্ডের আতঙ্কে এলাকা ছাড়লেন চা-শ্রমিকরাআরও পড়ুন
  • অনুরাগ-তাপসীর বাড়িতে আয়কর দফতরের হানাআরও পড়ুন
  • “জরুরি অবস্থা ঘোষণা ঠাকুমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”- রাহুল গান্ধী আরও পড়ুন
  • ভোট পুজো ও জনতা!আরও পড়ুন
  • তুলোর গোডাউনে আগুন ঘিরে চাঞ্চল্যআরও পড়ুন

ইটালিয়ান সেলুন

Written By নীলার্ণব চক্রবর্তী

আকাশে সরসরে পেঁজা-তুলো মেঘের সোনামনা খেলাটা তখনও স্বপ্ন। তখন শুধুই আকাশ ভরা মা-তারার অঙ্গ-রঙা মেঘমালা।  ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রুগির হাগুপটির ন্যায় আকাশ ঢালছে। ঢালছেই। চারপাশে জলের জগৎ। ফুটপাতে পা পাতলে জল জয় করে  পেতে হচ্ছে জন্মভূমি। ফলে ইটালিয়ান সেলুনওলারা কপালে হাতুড়ি ঠুকছেন। তাদের মুখগুলি অন্ধকারের সান্দ্র তরলে পুরোটা চোবানো।

ইটালিয়ান সেলুন দেখতে ইতালি যেতে হবে না। এই শহরের ফুটপাতে ফুটফুটে সৌন্দর্য হয়ে দীর্ঘকাল ধরেই তারা রয়েছে। ইটের ওপরে (ইট ছাড়াও মাটিতে নানা কিছু সিট হয়ে থাকে, আবার অনেক ইটালিয়ান তো চেয়ারে উঠছে) বসিয়ে চুল (মাথা, বগলের) ও দাড়ি কাটা হয় বলে এর নাম ইটালিয়ান সেলুন। কে বা কারা এ নাম দিয়েছে, জানা নেই। তবে, ইষদুষ্ণ ব্যঙ্গ লবঙ্গের স্বাদের মতো মেশানো রয়েছে এই নামে। বড়লোক-হাফ বড়লোক-মেজোলোক ও ফান্টুস ছোটলোকদের কেউ সাতমহলা সেলুনে এসির সুবাসে দাড়ি-চুল কাটার পর গা চটকানো খেতে খেতে ফুটপাতিয়া সেলুনকে গালির বন্যা দিতে দিতে এই নামটা নিশ্চই দিয়েছে। কিন্তু সে জানতই না—  জিসকো রাখে সাঁইয়া মার সকে না কোই। যারা দিন আনা দিন খায়, তাঁদের জন্য ইটালিয়ান সেলুনই চুল কাটানোর উৎকৃষ্ট ও একমাত্র ঠিকানা।

কলকাতার ফুটে কত ইটালিয়ান আছে, তা গুনে ওঠা সম্ভব হয়নি। এর একটা সেনসাস হতেই পারে। তবে, আমার মনে হয়েছে, ওই আকাশ যেমন তারায় ভরা, তেমনই কলকাতার ফুটপাতগুলি ইটালিয়ান-খচিত। অধিকাংশই বিহারের, কিছু ইউপি, কিছু ওড়িশা, কিছু এ রাজ্যের  লোকজন সেই কবে, যেন শুরুর সে  দিনটিতে এ শহরে এসে হরেক ব্যবসার মতোই ফুটপাতে গুছিয়ে একটু স্থান করে প্রতিষ্ঠা করেছে ইটালিয়ান ঈশ্বরকে।

তো, শুরুতে ছিলাম যেখানে, সেই বর্ষায় ফিরি। বর্ষা মানেই ইটালিয়ানদের আর্তনাদের সিজন। এক দারুণ সময়। গাল-ভরা সাবানে ব্লেড-ভরা রেজারের এক টান পড়েছে কি পড়েনি, শুরু: রিম ঝিম ঝিম ঝিম...রিম...। আর ফুটপাতে বৃষ্টির নূপূর বেজে ওঠা মাত্র পাশে গুটিয়ে রাখা দাদাজিকে যুগকা ছাতা খাটিয়ে বাকি দাড়িটা কাটার চেষ্টাও। কিন্তু বৃষ্টি ততক্ষণে মুষল, ফলে হাফ-দাড়ি শেভের পরই কাপড় দিয়ে সাবান মুছিয়ে-টুছিয়ে কাস্টমারকে সায়োনারা জানাতেই হচ্ছে। ওই হাফ-শেভের শ্রম তো মায়ের ভোগে। কাস্টমার রণচণ্ডী হলেও, অবস্থা নাচার। তাই ইটালীয় মালমেটিরিয়াল জলদি গুছিয়ে নাপিতবাবাজি কাছের শেডের নীচে গুটিসুটি। কাস্টমারটি ততক্ষণে আগলা জনম মে তু শালা শুয়ার হোগা বলে যেন বৃষ্টির ফাঁক গলে-গলে ভ্যানিস। এমনই চলছে যুগে যুগে, বর্ষাকাল বা অকাল বর্ষায়। 

আসলে, এইসব কথা  ৮ আনা বাংলায় ৮ আনা ভোজপুরি মিশিয়ে আমায় জানালেন শিয়ালদায় সরস্বতী প্রেসের সামনে গাছের নীচের বেদিতে বসা প্রবীণ ক্ষুরকার অর্জুন শর্মা। তখন একটা বাচ্চার মাথা ন্যাড়া করছিলেন।  পাশেই ছাতুর দোকান। যেখান থেকে তাল তাল ছাতু বিক্রি হচ্ছে— মুফতে লঙ্কা। বর্ষা ছাড়া অন্য সময়ের দুপুরগুলিতে বেশ ভিড় হয় অর্জুন শর্মার ইটালিয়ানে। অনেকেই অপেক্ষা করতে ছাতুর দলা চিবোন। আমাকে তিনি ছাতু অফার করলেন। ঠিক তখনই আকাশে ভেসে এল কিউমুলোনিম্বাস মেঘের একটা বড় দলা। চারপাশে ঝুপ করে নামল অন্ধকারও। বুঝাতা কি এইসন বারখা হোই, সব খতম হো যাই। আকাশে চোখ বুলিয়ে  স্বগতোক্তি শর্মাজির।

বছর পঁচিশ এখানে চুল-দাড়ি কাটছেন। বিহারের নওয়াদা জেলার বাসিন্দা। পোস্ট: বাহাদুরপুর। গ্রাম: করিগাঁও। পারিবারিক পেশা ক্ষৌরকর্ম হলেও চাকরির আশায় ‘কলকাত্তায়’ এসে হাজির হন। এ শহর তাঁর কাছে আগমার্কা অচেনা। কিন্তু কয়েক জন জানল-সুনল লোগ ছিল এখানে। তাঁদের একজনকে ধরে চাকরিও জোটালেন ডালহৌসিতে এক অফিসে। কিন্তু সেখানে তালা ঝুলল কয়েক বছর যেতে না যেতে। তখনও শরীরে বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ, মনও মায়াবী।  উপার্জনে অর্জুনের লক্ষ্য স্থির। একদিন ফুটপাতের এই এক চিলতে জায়গাও তাই মিলল। সেই থেকে চুল-দাড়ি বানিয়ে যাচ্ছেন এখানেই— অনর্গল। জানালেন, চুল দাড়ি নিয়ে তার ৩০ টাকা রেট।  চুল ১৫, দাড়ি ১৫। নো ডিজাইনের চুল কাটাকাটি। কেউ এমন আবদার করলেই অর্ধচন্দ্র।

কথায় কথায় ফ্যামিলি-টকও: দুটো ছেলে। বড় ছেলেটার বয়স ১৮-১৯। পড়াশুনো করছে— এই ইটালিয়ান-অর্থে। পড়া শেষে চাকরি করতে চায় সে। উ ই কাম না করি, উ নোকরি করি। অর্জুনের গলায় আত্মবিশ্বাস।

শিয়ালদা থেকে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছলাম মহাজাতি সদনের সামনে। খবর ছিল, এখানে কাছে-পিঠে ইটালিয়ান-দঙ্গল বসে ভোর থেকে সন্ধে। একটু খোঁজ করতে পেয়েও  গেলাম। মহাজাতি সদনের উলটো দিকে বাল মুকুন্দ মক্কর রোডে। ডানদিকের ফুটপাতে সেলুনের সারি। তবে, এখানে অনেক ইটালিয়ান চেয়ারে উন্নীত। দুটি ধরন এর। প্রথম: দেওয়ালে আয়না ঝোলানো, সামনে চেয়ার।  দ্বিতীয়: শুধুই চেয়ার, দেওয়াল নেই, ফলে নেই আয়নাও ।

আলাপ ভগবৎ শর্মার সঙ্গে। বয়স ৪৫। চেহারা দোহারা। ১৯৮২তে কলকাতায় এসেছেন। প্রথমে যন্ত্রটন্ত্র বাক্সে পুরে চুল-কাটা পথে পথে ফেরি করতেন। তারপর বিহারের এই বাসিন্দা এই ফুট-স্থান পেলেন। প্রথমে মাটিতে বসেই চলত হস্তশিল্প। ক্রমে চেয়ার হল, সামনের দেওয়ালে ঝোলানো হল আয়নক, এবং মাথার ওপরে উঠল ঢাকনি। ভগবৎ বলছিলেন, যদি কম বরখা হোই তো মাথা তোপলা সে কাম চল যাই, লেকিন বেশি হোকলা সে বাচল মুশকিল হো যাই। আপনার তো ব্যবসা ভালই, বলতে উত্তর: রওনা লাগোতা কি গাঁহক বা লোগ, লেকিন ইয়ে গপ মারত বা লোগ। হঠাৎই পাশ থেকে একজন গপ-কারী বলে উঠলেন, দাদা, অমিতজির স্টাইলে চুল কাটতে ভগবৎ ওস্তাদ। এ তল্লাটে ওর খুব নাম। অমিতজি মানে বুঝলেন তো অমিতাভ বচ্চন। ওকে তো সবাই ভগবৎ বচ্চন নামেই ডাকে।

আমি ভগবতের দিকে তাকাতেই, উনি লাজুক হলেন। যথাসম্ভব বাংলায় বললেন: ঝুট বলব না দাদা, তখন শোলে রিলিজ করল। আমি প্রথম আমিতজিকে সিনেমায় দেখলাম। তখনই ঠিক করে নিলাম, এই ভদ্দরলোকের স্টাইলে কেশ কাটতে হবে। তারপর উনকর ছবি জোগাড় করে নিলাম। কাগজে বেরিয়ে ছিল, পোস্টারে ছিল। কেটে নিলাম। তারপর হাত পাকালাম। আবহি কেশকে এইসন ডিজাইন বানায়ন, কি অমিতাভ বচ্চন লাগব। কান এঁটো করে হাসতে থাকলেন ভগবৎ।

বচ্চন নয়, সলমন খানের কথা মনে এল এ জে সি বোস রোডের ফুটপাতে সারিবদ্ধ ইটালিয়ানদের একজনের গল্পে। শিয়ালদা ফ্লাইওভার শেষে বাসস্ট্যান্ডের পিছনে এদের পরপর দেখা যাবে। টিপিকাল ইটালিয়ান ঘরানা (তবে ইটের সিট রূপান্তরিত হয়ে ব্যাটারির বডি হয়েছে)।  বিহারের গয়া জেলার কিষাণ ঠাকুর আমায় সেই সলমন মনে-পড়ানো গল্পটি শোনান:  তখনও এই বাসস্ট্যান্ড হয়নি। আমরা একটু ওদিকে বসতাম। একদিন কী হল একটা বাস ব্রেকফেল করে একেবারে ফুটপাতে উঠে এল। আমার দুই ভাই আমার পাশেই বসত। তার পাশে বসত আমার বাবা। বাসটা দুই ভাইকে ধাক্কা দিয়ে ওই থানায় (মুচিপাড়া এক্সসাইজ ব্যারাক) ঢুকে গেল। হাড়গোড় সব ভেঙে গেল ভাইদের। লেগেছিল মাথাতেও। মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হল। তিন-চার মাস হাসপাতালে ছিল ওরা। কিন্তু তাও একজন ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। আরেক জনের মাথাটা একটু কেমন হয়ে গেছে। ওরা গাঁও চলে গেল। বাবারও চোট লাগল, তবে কম চোট। আমার কানের পাশ দিয়ে বাসটা চলে গেল, একটুর জন্য বেঁচে গেলাম।

সেসময় যেন এক দমকা দখিনা হাওয়ায় আমি হাজির হলাম গিয়ে দক্ষিণ কলকাতার ফুটে। যে কলকাতায়  আকাশকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেওয়া আঠাআঠা অট্টালিকা। তাতেই ফুটে-ফুটে ছড়ানো-ছিটোনো ইটালীয় ইতিকথা।

ক্যালকাটা গার্লস স্কুলের সামনে ঊনকোটি চৌষট্টি চুল-দাড়ি ছাঁটার আয়োজন সহ  ধপধপে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে এক কাকভুষণ্ডীর দেখা মিলল। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যিনি চুল কাটছেন ফুটপাতে। উপেন্দ্র ঠাকুর। কত উত্থানপতনের কথা যে তাঁর তিনের নামতার মতো মুখস্ত, ইয়ত্তা নেই। সত্তরোর্ধ উপেন্দ্রর বাড়ি বিহারের মধুবনীতে। সেখানে তার নাতিপুতি ছেলে-বউয়ে ভরা সংসার। নিজে পড়ালেখা শিখতে পারেননি বলে ভিতরে দুঃখ ছিল, তাই ছেলেকে পড়িয়েছেন। বি-কম পাশ করে ছেলে এখন ব্যবসাদার। উপেন্দ্র এখন গাছের গায়ে আয়না ফিট করে কেশ কাটার কাজ করেন। মাথার ওপর কালো রঙের ভারি প্লাস্টিকের ঢাকনাও। প্রায় নিখুঁত বাংলায় বললেন: সেটা সাতাত্তর সাল হবে। তখন মাটিতে বসে কাটি। কী হল একদিন, একটা ছেলে এল আমার কাছে দাড়ি বানাতে। তার চাপ দাড়ি। কালো কুচকুচ। কেশ খুব ভাল ছিল। খুব তার গ্লেজ, আর খুব ঘন! আমাকে বলল, দাড়িটা পুরো নামিয়ে দিতে। শুনেই মন খারাপ হয়ে গেল। এত ভাল দাড়ি পুরো কাটতে বলছে। আমি বললাম, পুরো কেন কাটবেন, ট্রিম করে নিন না। ভাল লাগবে। তো উনি সে সব করাবেন না, পুরোটাই কাটাবেন। আমি আর কী করব, পুরো দাড়িটাই কাটতে লাগলাম। দাড়ি কাটার পর ও আমায় গোঁফ পুরো কাটতে বলল। কেটে দিলাম। এবার দুটো জুলপিও পুরো কাটতে বলল। আমি তো অবাক। তখন বড় আয়না ছিল না আমার। দাড়ি-চুল কাটা হয়ে গেলে, ছোট আয়না বার করে দেখিয়ে দিতাম। দাড়ি-গোঁফ-জুলপি কাটার পর, সামনে আয়না ধরতেই, ছেলেটা বলল— ধরে থাকতে।  তারপর দুটো নকল লম্বা জুলপি লাগিয়ে নিল দুদিকে। আমি— হাঁ। এ তো ছদ্মবেশ নিচ্ছে। কপালে লাল তিলকও দিয়ে নিল। তারপর জানতে চাইল, কেমন লাগছে?  আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল, বলল, ওর সঙ্গে একটু আড়ালে যেতে। সামনে একটা দেওয়ালের পিছনে যেতেই ছেলেটা পকেট থেকে একটা কালো জিনিস বার করে আমার হাত টেনে নিয়ে রেখে দিল। আমি দেখে বোবা হয়ে গেছি। ছেলেটা বলল, এটাকে রিভলভার বলে। এটা দিয়ে গুলি ছোটে। এখনও মনে আছে, ছেলেটা বলল, ওদের রিভলশনে কাজে লাগবে। বলল, ছদ্মবেশের কথা কাউকে না বলতে। বললে রিভলশন হবে না।  আমাকেও ওরা বাঁচতে দেবে না। তারপর অস্ত্রটা নিয়ে সামনে হাঁটা দিল। আর কোনও দিন ওর দেখা পাইনি। আচ্ছা রিভলশন মানে জানেন নাকি দাদা?

বুঝতে পারলাম রেভোলিউশনের কথা বলছেন উনি। কিন্তু এ সব বোঝানো তো ঝক্কি! মাথা নেড়ে না বলে সেখান থেকে ফেটে গেলাম।

একটু এগিয়ে গিয়েই বিজন সেতু। একডালিয়া রোডের ফুটপাতে পরপর ইটালিয়ান। মাধব, মহেশ ঠাকুররা জনা আটেক চুল-কাটিয়ে এখানে বসেন। টানটান চেহারায় বুড়ো বয়স লুকিয়ে রাখা মহেশ ঠাকুর বললেন, কিতনা দিন সে হাজামত বানাবত বানি ইয়াদ নাহি খে। (তারপর আমার অনুরোধে বাংলা ভাষায়) তখন ওই ব্রিজ ছিল না। এত দোকানপাটও ছিল না। মনে আছে, হাওড়া থেকে বালিগঞ্জ এলাম বাসে। ১৩ আনায় দাড়ি  কেটেছি। আবহি হাম ১০টাকায় দাড়ি কাটছি।

বিহারি ছাড়া বাকি প্রদেশের যাঁরা এই পেশায় পেষাই হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে এক বঙ্গতনয়ের কথা এবার বলবো। এবং এই লেখাটিতেও দি এন্ড টাঙাবো।

একডালিয়ার ইটালিয়ান ঠাকুরদের জিজ্ঞাসিয়া ওই বাঙালির খোঁজটা পেয়েছি। তবে, সেই সঙ্গে কটাক্ষও: বাঙালি লোক পারে না টানা ডিউটি দিতে। ওদের দম বেরিয়ে যায়!

বিজন সেতুর মুখ থেকে অটোয় পৌঁছালাম রুবি মোড়। সেখানে একটু খোঁজ করতেই পেয়ে গেলাম, দুদিকে টাইপ রাইটারদের সারির মাঝে এক ইটালিয়ানকে। নাপিতের নাম রামকৃষ্ণ শীল। বাড়ি নোনাডাঙায়। চেয়ারে বসিয়ে কাটেন। সামনে গাছের গায়ে পেরেক পুঁতে ঝোলানো আরশি। বলছিলেন, ২০ বছর চুল কাটছি। কিন্তু এখানে তো উচ্ছেদ অভিযানের হেভি ঝামেলা। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি।  সেদিন দোকান চালু হওয়ার কথা, তার আগের দিনের কথাটা এখনও মনে পড়ে। চেয়ার কিনলাম, আয়না ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনে এখানে রেখে বাড়ি গেছি। ফিরে এসে দেখলাম সব ভাঙচুর হয়ে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। তারপর কয়েক জনের কাছ থেকে টাকা চেয়েচিন্তে ফের জিনিসপত্র কিনে সেলুন খুললাম। এই কুড়ি বছরে কম করে ১৫ বার ভাঙা পড়েছে সেলুন। কাজ সেরে বাড়ি ফিরি ভয়ে ভয়ে, কী জানি কী হবে!  আমাদের ভাঙচুরের কপাল, বুঝলেন তো!

আর বৃষ্টি হলে কী করেন?

ওই দেখছেন বাসস্ট্যান্ড। দাঁড়িয়ে থাকা কোনও বাসে উঠে অপেক্ষা করতে থাকি বৃষ্টি থামার।

কখনও ভাল একটা সেলুন করতে ইচ্ছে করে না? যেখানে এসি থাকবে। গদি দেওয়া চেয়ার থাকবে। টিভি থাকবে।

না, না...(বেশ জোর দিয়ে)

সেকী!... কেন?

 (ঠোঁট দুটো একটু শক্ত হয়, মুখটায় আবেগ ভিড় করে আসে রামকৃষ্ণের) ওদের আছে গদি-টিভি-এসি। আমাদেরও আছে দাদা, অনেক কিছু। এই যে গাছের নীচে বসে চুল কাটাতে পারছেন, এটা কি কম, বলুন? আর কত সস্তায় সাফসুতরো হয়ে যাচ্ছেন ভাবুন একবার! টিভি-এসিতে বসিয়ে ওরা তো আপনার পকেট কেটে নিচ্ছে! (তারপর দুদিকে টাইপের কাজ করিয়েদের দিকে আঙুল দেখিয়ে) এই যে দেখছেন, এরা সব আমার ফিকসড কাস্টমার। আমায় কত ভালবাসে জানেন? পুজোয় আমাকে নতুন জামা দেয়, আমার ছেলেকেও দেয়। বউয়ের জন্য শাড়ি আনে। আমার মনটা ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল হয়ে যায়। বড়লোকের সেলুনে এত ভালবাসা আছে নাকি? থাকতেই পারে না। আর একটা কথা, যেমন আছেন, তাতেই খুশি থাকতে জানতে হয়, বুঝলেন না! আপনারা এসব বুঝবেন না, না!

রামকৃষ্ণের দু-চোখের কোনায় চিকচিকিয়ে ভেসে ওঠে মুক্তোর মতো দুটো জলবিন্দু।

4th October, 2019 01:47 pm

Please login to add comment

সম্পর্কিত খবর

  • রহস্য মৃত্যু শিল্পপতি পরিবারের বধূর 

    3rd March, 2021 05:18 pm

  • যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস, ইস্তফা বিজেপি মন্ত্রীর

    3rd March, 2021 04:03 pm

  • শিবরাত্রির দিন নন্দীগ্রামে মমতার মনোনয়ন পেশ!

    3rd March, 2021 02:59 pm

  • দীপিকার বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ

    3rd March, 2021 02:41 pm

আপনি রিপোর্টার

আপনাদের চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ খবর আমাদের পাঠান

খবর এই মুহূর্তে

  • ‘একেবারে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল’, ঠাকুমা ইন্দিরার জরুরি অবস্থা নিয়ে অকপট রাহুল গান্ধী

    3rd March, 2021 11:23 am

  • তেলেঙ্গানার বিদ্যুৎ পরিষেবাতেও চীনা হানা, সরকারি তৎপরতায় বিভ্রাট মুক্ত

    3rd March, 2021 11:25 am

  • শিবরাত্রির দিন নন্দীগ্রামে মনোনয়ন দাখিল মমতার, খবর সূত্রের

    3rd March, 2021 11:25 am

  • জোট জটিলতার মধ্যেই ৮ মার্চ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বাম- কংগ্রেস-আইএসএফ

    3rd March, 2021 11:27 am

  • অভিনেত্রী সায়ন্তিকা যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে

    3rd March, 2021 12:01 pm

  • করোনার টিকা নিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ

    3rd March, 2021 01:07 pm

  • তাপসী পান্নু ও অনুরাগ কাশ্যপের বাড়িতে আয়কর হানা

    3rd March, 2021 01:53 pm

  • দিল্লি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে জয়ী আপ, ধরাশায়ী বিজেপি

    3rd March, 2021 05:22 pm

ফটো গ্যালারি

অন্যান্য বিভাগ

খেলা

  • ছুটি নিয়ে বিয়েটাই সেরে ফেলছেন বুমরাহ !

  • পুলিশ হেফাজতে একরাত কাটিয়ে জামিন বার্তোমেউয়ের

  • কোহলি-শাস্ত্রীর পরিকল্পনায় হতবাক শোয়েব আখতার

  • জাতীয় শিবিরে ডাক পেলেন সন্দেশ, মনবীর, প্রীতম, শুভাশিস, প্রবীর, সার্থকরা

  • এ এফ সি কাপে মোহনবাগান খেলবে মলদ্বীপে

  • কোহলিদের জীবন ‘দুর্বিষহ’ যে দু'জনের জন‍্য!

  • মনোজের হয়ে প্রচার করতে চান লালু পুত্র তেজস্বী

  • আরও তিন কোচকে আনা হল রুটদের দেখভাল করতে

বিনোদন

  • দীপিকার বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ

  • ছুটি নিয়ে বিয়েটাই সেরে ফেলছেন বুমরাহ !

  • শিশুদের ডাকটিকিট উপহার দিলেন মডেল-অভিনেত্রী

  • বাংলা ছবি 'ওয়ার..' এর ট্রেলার লঞ্চ

  • ভূপেন হাজারিকার ডাই-হার্ড ফ্যান 'সুর' পাগল অমিত রঞ্জন

  • ইছামতী পাড়ে শুরু হল লিটল ম্যাগাজিন মেলা

  • অক্ষয় আউট,রাজকুমার ইন

  • রবি,অবনের পাশে এবার সলমনও!

জীবনধারা

  • ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ‘হেরিটেজ কারে হেরিটেজ ট্যুর’

  • ঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে ক্যান্সার সম্পূর্ণ সেরে যায়

  • জটায়ুর মত আমিও জীবনকে খুব সহজভাবে দেখি : অনির্বাণ

  • বেস্ট ফেলুদা সৌমিত্র,ফিটেস্ট টোটা : সৃজিত

  • মারাদোনার সম্পত্তি, দাবিদার ছয় নারীর ১০ সন্তান

  • সবাইকে চমকে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চাইলেন কিম

  • নিরাপদ পোষ্যরা

  • মায়ের গর্ভেই ‘গর্ভবতী’ সদ্যোজাত!

ভ্রমণ

  • সিমলার ‘লাভার্স হিল’ ও রাজা ভূপিন্দরের ভ্যালেন্টাইন

  • জটায়ুর মত আমিও জীবনকে খুব সহজভাবে দেখি : অনির্বাণ

  • বেস্ট ফেলুদা সৌমিত্র,ফিটেস্ট টোটা : সৃজিত

  • মারাদোনার সম্পত্তি, দাবিদার ছয় নারীর ১০ সন্তান

  • সবাইকে চমকে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চাইলেন কিম

  • শীতের ভ্রমণ (পর্ব ১৭) সত্যজিতের স্মৃতি, ধর্মমঙ্গল কাব্য আর লাউসেনের ‘ময়নাগড়’

  • শীতের ভ্রমণ (পর্ব ১৬) অরণ্যের দিন-রাত্রি, ইতিহাস আর মিথে ঘেরা ঝাড়্গ্রাম

  • শীতের ভ্রমণ (পর্ব ১৫) ডাচদের শহর ‘শ্রীরামপুর’ আর মাহেশের রথ

স্বাস্থ্য

  • জটায়ুর মত আমিও জীবনকে খুব সহজভাবে দেখি : অনির্বাণ

  • বেস্ট ফেলুদা সৌমিত্র,ফিটেস্ট টোটা : সৃজিত

  • মারাদোনার সম্পত্তি, দাবিদার ছয় নারীর ১০ সন্তান

  • সবাইকে চমকে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চাইলেন কিম

  • জাগছে জীবাণুরা

  • করোনা প্রতিরোধে ক্লোরোকুইন

  • সু-করোনা টিকা, শুরু মানবদেহে পরীক্ষা

  • করোনা ওষুধ দূরে নয়?

  • আরও পড়ুন

    • সেরা খবর
    • রাজ্য
    • কলকাতা
    • দেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • সম্পাদকীয়
    • বিনোদন
    • খেলা
    • কোথায় কী
  • আরও পড়ুন

    • মতামত
    • ব্লগ
    • জীবনধারা
    • প্রযুক্তি
    • সাহিত্য বই
    • আরও বিভাগ
    • ভ্রমণ
    • স্বাস্থ্য
    • মেয়ে বেলা
    • মহানগরের মহাপুজো
    • কলকাতা দর্পণ
    • উনি বলছেন
    • আপনি রিপোর্টার
  • আরও পড়ুন

    • অনুসন্ধান
    • আপনি রিপোর্টার
    • জেলা
    • ফটো গ্যালারি
  • যোগাযোগের ঠিকানা

    Kolkata TV

    Email id: info@kolkatatv.org

    Helpline Numbers (8AM to 10PM)

    +91-9674166589, +91-8336919262

    Phone Numbers :

    033-22250159, 033-22250160

    18 Rabindra Sarani, Poddar Court, Gate No - 1
    6th Floor, Kolkata- 700001

© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved
kolkatatv.org