Written By অনিরুদ্ধ সরকার
রাজস্থান ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বে আজ অম্বর বা আমের দুর্গের কথা।জয়পুর থেকে অম্বরের দূরত্ব ১১ কিমি।আরবল্লী পাহাড়ের ঢালে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই অম্বর ফোর্ট।
জয়পুর থেকে অম্বর ফোর্ট অবধি পুরো সফরটা যদি আপনি বাদশাহি ভাবে করতে চান তাহলে অবশ্যয় হাতির পিঠে চড়ে অম্বর ফোর্ট যাবেন।আলাদা,রোমাঞ্চ রয়েছে।
ইতিহাস,অ্যাডভেঞ্চার,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব মিলিয়ে অম্বর সফর বেশ মজাদার।
এক সময় রাজপুত রাজাদের রাজধানী ছিল অম্বর।অম্বর দুর্গ নির্মান শুরু করেন রাজা মান সিংহ। পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে অম্বর
দুর্গের যে নির্মানকাজ শুরু হয়েছিল ,তা শেষ হয় প্রায় একশো বছর পর।অম্বিকেশ্বর শিবের নামে কাছোয়া রাজপুতদের রাজধানীর নাম হয় 'অম্বর'।অনেক ঐতিহাসিকের মতে দূর থেকে ছোট্ট এই শহরটিকে নাকি দেখতে লাগে আমের মত, সেকারনে নাকি নাম রাখা হয়েছিল 'আমের'।আবার অনেকে মনে করেন দেবী অম্বার নামানুসারে নাম হয় অম্বর বা আমের। রাজা মান সিংহ প্রতিষ্ঠিত এই শহরের কেন্দ্রবিন্দু আমের দুর্গ, যে দুর্গ নির্মান হয়েছিল একশো বছর ধরে।ভাবা যায়! এই দুর্গের নির্মাণশৈলীতে হিন্দু ও রাজপুত স্থাপত্য লক্ষ্য করা যায় ।
অম্বর দুর্গ যেন আস্ত এক শহর।প্রাসাদ, জঙ্গল,জলাধার কি নেই এখানে।সে সময় দুর্গের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজপুত রাজারা যে চিন্তাভাবনাগুলি করেছিলেন তা আজও তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত।মার্বেল, লাল ও হলুদ বেলেপাথরে তৈরি এই দুর্গ ছিল অভেদ্য।
অম্বর ফোর্টের তোরণদ্বার দিয়ে প্রবেশ করার সময়ই মনে হল মানসিংহ, জয়সিংহের মত পরাক্রমশালী রাজপুত রাজারা ঘোড়া নিয়ে এই পথ দিয়েই দুর্গে প্রবেশ করতেন।সেসবই আজ ইতিহাস। শুধু উপলব্ধিতেই রোমাঞ্চ।
তোরণদ্বার পার হয়েই দেওয়ান-ই-আম।রাজপুত রাজাদের দরবারকক্ষ।এখানকার পাথরের স্তম্ভগুলির কারুকাজ অসাধারণ।
অম্বর ফোর্টে বিখ্যাত হল গণেশ পোল।এর কারুকাজ দেখলে চোখ ফেরানো যায় না, এত সুন্দর। এই গণেশ পোল পার হয়ে মূল অম্বর প্রাসাদ।
রাজা জয়সিংহ তাঁর বারোজন রানির জন্য তৈরি করিয়েছিলেন বারোটি মহল।যার মধ্যে শিশ মহল,যশ মন্দির,সোহাগ মন্দির, জয়মন্দির,সুখ নিবাসের কারুকাজ অসাধারণ সুন্দর। শিশ মহলের কাঁচ ও আয়নার কারুকাজ দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়।অন্যান্য মহলগুলিতে পাথরের কাজ, সূক্ষ্ম জালি- জাফরির কাজ, হাতির দাঁতের সৌখিন কারুকাজ,ফ্রেস্কোগুলির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয়।
রয়েছে দেওয়ান- ই- খাস।রাজদরবার জুড়ে কাঁচ ও আয়নার এক অদ্ভুত প্রয়োগ করেছেন রাজকীয় শিল্পীরা। একটি মাত্র দেশলাই এর কাঠিতে সারা দরবার উজ্জ্বল আলোয় অলোকিত হয়ে উঠল।
অম্বর ফোর্টের সিংহ দরওজার পাশে শীতলামাতা মন্দির।দরজায় রূপোর কারুকাজ। মন্দির জুড়ে অসাধারণ সব জাফরির কাজ,পাথরের নক্সা।
মা কালী রাজপুতদের কাছে শীতলা মাতা রূপে পূজিতা।আর আছে যশোরেশ্বরী দেবীর মূর্তি।রাজা মান সিংহ যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত করে যশোরেশ্বরী দেবীকে অম্বর নিয়ে আসেন ও প্রতিষ্ঠা করেন।শ্বেত পাথরের অষ্টভুজা মূর্তি।পদ তলে কিন্তু মহাদেব নেই।
মাওথা লেক:
পাহাড়ের কোলে মাওথা লেক।অম্বর ফোর্ট থেকে লেকটি দেখতে পাওয়া যায়। অসাধারণ সুন্দর। লেকের বাগানটিও বেশ সাজানো গোছানো।
রাজা তমান সিংহ ও রাজা প্রথম জয় সিংহের সমাধি মন্দিরের কারুকাজও বেশ সুন্দর।
অম্বর ফোর্ট থেকে পুরো জয়পুর শহরকে দেখুন আর অবশ্যয় সে দৃশ্য ফ্রেমবন্দী করতে ভুলবেন না যেন।
জেনে নিন:
অম্বর ফোর্টে কোনো বাস যায় না।প্রাইভেট কার,শেয়ার গাড়ি পাবেন জয়পুর থেকে।হাতির পিঠে চড়েও সফরের আনন্দ নিতে পারেন। জয়পুর থেকে অম্বর ফোর্ট ১১ কিমি।
কীভাবে যাবেন:
বিমান - জয়পুর শহর থেকে বিমান বন্দর ১২ কিমি।
ট্রেন - হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে জয়পুর যাওয়ার একাধিক ট্রেন রয়েছে।যোধপুর এক্সপ্রেস, আজমের এক্সপ্রেস, অনন্যা এক্সপ্রেস, প্রতাপ এক্সপ্রেস সহ রয়েছে একগুচ্ছ ট্রেন।এছাড়া দিল্লি হয়েও জয়পুর যাওয়া যায়।দিল্লি থেকে ঘন্টা চারেকের দূরত্বে জয়পুর।
জয়পুর থেকে অম্বর বা আমের ১১ কিমি।
সড়কপথ - জয়পুর যাওয়ার জন্য সরকারি কিম্বা বেসরকারি বাস চলছে রাজস্থানের নানা প্রান্ত থেকে। এছাড়া অন্যান্য রাজ্য থেকেও বাস চলছে।দিল্লী থেকে বাসে জয়পুর সময় লাগে কমবেশী সাত ঘন্টা। জয়পুরের বাসস্টান্ডের নাম সিন্ধি ক্যাম্প।
একনজরে জয়পুর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সড়কদূরত্ব - দিল্লি ২৫৮কিমি, আগ্রা ২৩০কিমি, আজমের ১৩৩কিমি , পুষ্কর ১৪৫কিমি,যোধপুর ৩৩৫ কিমি, বিকানের ৩২০কিমি,উদয়পুর ৪০৭কিমি, জয়সলমের ৬২২কিমি, ইন্দোর ৫৮০কিমি।
কোথায় থাকবেন :
RTDC র হোটেল ছাড়াও জয়পুরে রয়েছে একাধিক ছোটো বড় হোটেল আই সি টি রাজপুতনা, রামবাগ প্যালেস,রয়্যাল হেরিটেজ হ্যাভেলি,দি ললিত হোটেল,
জয়পুর ম্যারিয়ট হোটেল। তবে একটু খোঁজ করলে নাম মাত্র ভাড়ায় বড় বড় হাভেলির রুম ভাড়া পাওয়া যায়
হোটেল ভাড়া ৮০০-৫০০০ এর মধ্যে।
যোগাযোগ করতে পারেন রাজস্থান পর্যটন বিভাগের সাথে-
Tel:+91-141-5155163
6th March, 2021 11:13 pm
6th March, 2021 10:38 pm
6th March, 2021 07:54 pm
6th March, 2021 07:25 pm