Written By শাজাহান আলি
ফের খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে বুনো দাঁতাল দের হামলা গ্রামবাসীদের ওপর।ঝাড়গ্রামে ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুটি স্থানে পরপর হামলায় মৃত্যু হয়েছে দুজনের, আহত হয়েছেন দুজন। বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা ছাড়াও দুটি বিদ্যালয় ভেঙে মিড ডে মিলের চাল ও সামগ্রী লুট করে খেয়েছে হাতির দল।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম থানার চাঁদাবিলা এলাকায়। চাঁদাবিলা রেঞ্জের বনকর্মী বিশ্বেশ্বর জানা জানিয়েছেন-গত কয়েকদিন ধরে হাতির একটি দল এই এলাকায় ছিল। বুধবার বিকেলে ওই হাতির দল ফসলের ক্ষতি করছে দেখে তাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সন্ধের সময় ওই হাতির দলের একটি অংশ গ্রামে ঢুকে যায়, গ্রামের বাসিন্দা নগেন মাহাতো সমীর মাহাতো কে সামনে পেয়ে আছাড় মারে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু জনকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এই হাসপাতালে সমীর মাহাতো (৩৫) মারা যায়। প্রসঙ্গত বেশ কিছুদিন ধরেই নয়াগ্রাম থানা এলাকার বিভিন্ন জঙ্গল গুলিতে প্রায় পঞ্চাশটি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ দিনের হামলার ঘটনার পরে অনেক রাত পর্যন্ত ওই ডা তালের দলটিকে এলাকাছাড়া করানোর চেষ্টা করেছে বনদপ্তর।
অপর হাতির হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত চাঁদড়া রেঞ্জ এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাত একটা নাগাদ হাতির দল রোজকার মতো চাপাশোল ঝরিয়া এলাকায় কৃষকদের জমিতে নেমে পড়েছিল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে দেখে গ্রামবাসীরা হুলা নিয়ে হাতি গুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করে। ওই বিক্ষিপ্ত হাতিরা পাশেই সুন্দরলাটা গ্রামে প্রবেশ করে। সেখানে ওই সময় বাড়ি থেকে বাথরুমে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলেন বৃদ্ধ অমূল্য মাহাতো (৭৫)। একটি হাতি তাকে সামনে পেয়ে সুঁরে তুলে আছাড় দিয়ে মাথায় পা দিয়ে পিষ্ট করে মেরে ফেলে।ওই গ্রামে আহত হয়েছেন আরও একজন৷ এরপর বেশ কয়েকটি হাতি বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন দিকে গ্রামে ঢুকে হামলা করে। পাশের গ্রাম ঝরিয়া তে প্রবেশ করে ঝরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি প্রাচীর ভেঙে দেয়। এরপর ভেতরে ঢুকে বিদ্যালয় এর জানালা ভেঙে ভেতরে থাকা মিড ডে মিলের চাল খেয়ে ফেলে হাতির পাল।পাশেই থাকা শ্যামাপদ মাহাতোর ধানভানা মেসিন ঘরও ভেঙ্গে চাল খাওয়ার চেষ্টা করে হাতি ৷ অন্যদিকে হাতির পালের আরো একটি অংশ পাশের গ্রামে থাকা বাঘঘরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজির হয়। চালের খোঁজে গ্রিলের দরজা তে লাথি মেরে ভেঙ্গে দেয়। ততক্ষনে গ্রামবাসীরা এসে ওই হাতই গুলিকে তাড়িয়ে দিলে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা হয়। গত দু'দিন ধরে ঝরিয়া তে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও বাঘঘরাতে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ভেঙে চাল ডাল লুট করে খেয়েছে হাতির দল। পুরো ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পাশাপাশি গ্রামগুলিতে। সুন্দর লাটা গ্রামের বাসিন্দা নকুল মাহাতো বলেন-প্রতিনিয়ত আমরা প্রাণ হাতে করে নিয়ে জীবনযাপন করছি। বনদপ্তর এ হাতি তাড়ানোর নাম করে যেন ব্যবসা শুরু করেছে। আমাদের বাঁচানোর কোনো ভূমিকাই দেখতে পাচ্ছি না বনদপ্তর এর পক্ষ থেকে। অবিলম্বে হাতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমাদেরকে এলাকা ছাড়তে হবে। ঘটনার পর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন বনদপ্তর এর ডি এফ ও রবীন্দ্রনাথ সাহা। তিনি বলেন-গ্রামবাসীদের সতর্ক আগেও করা হয়েছিল, ফের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হাতিগুলোকে তাড়িয়ে অন্যত্র সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণেরও।