Written By আশিস চট্টোপাধ্যায়
অনেকের মতে স্বদেশ চেতনার বীজটি উপ্ত হয়েছিল চিত্তরঞ্জনের স্কুল জীবনেই। সেই কাহিনিতে যাবার আগে একবার সংক্ষেপে দেখে নিই তাঁর বিদ্যার্জনের গতিপথটি। ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় চিত্তরঞ্জন দাশের জন্ম। তিনি ছিলেন ভুবনমোহন ও নিস্তারিণী দেবীর প্রথম সন্তান। বাবা-মায়ের ইচ্ছানুসারে তাঁর লেখাপড়া একটু দেরি করেই শুরু হয়েছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন, একেবারে শিশু অবস্থায় বইপত্রের ভার চেপে বসলে শৈশবের আনন্দ নষ্ট হয়ে যাবে। ৮-৯ বছর বয়সে চিত্তরঞ্জনের শিক্ষা শুরু হয় প্রথমে কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় স্থানীয় একটি স্কুলে, পরে তাঁর বিদ্যালয় শিক্ষা হয়েছিল লন্ডন মিশনারি সোসাইটির কলকাতাস্থিত স্কুলে। তবে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেবার আগে চিত্তরঞ্জনকে হিন্দু স্কুলে ভরতি করা হয়েছিল। স্কুলের পড়াশোনায় তিনি তেমন ভালো ছিলেন না। কারণ হিসেবে তাঁর জীবনীকাররা জানিয়েছেন, কয়েকটি বিষয় নিয়ে তাঁর দারুণ আগ্রহ থাকলেও গণিতের মতো কয়েকটি বিষয় তার পছন্দ ছিল না। দু'বারের চেষ্টায় স্কুল স্তরের শেষ পরীক্ষায় ১৮৮৬ সালে পাশ করে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। স্কুলে থাকাকালীনই চিত্তরঞ্জন কবিতা পড়তেন, বহু বাংলা ও ইংরেজি কবিতা মুখস্ত করেছিলেন। ওই বয়সেই তাঁর বক্তৃতা করবারও একটা নেশা ছিল, বন্ধু-বান্ধব জুটিয়ে নানা বিষয়ে তর্ক, বক্তৃতা করতেন।
তাঁর এক সমবয়সি আত্মীয় স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে লিখেছেন, 'চিত্তরঞ্জন ক্লাসের পড়াশোনার প্রতি বিশেষ মনোযোগী ছিলেন না। মাস্টার মহাশয় পড়াইতেন। তিনি বঙ্কিমবাবুর বই পড়িতেন অথবা কবিতা লিখিতেন।' ওই বয়সেই তিনি বঙ্কিমের সে পর্যন্ত প্রকাশিত সব বই, বঙ্কিমের পরিচালিত পত্রিকা 'বঙ্গদর্শন' নিয়মিত পড়তেন। 'বন্দেমাতরম'-এর ভাবনা চিত্তরঞ্জনকে খুবই আলোড়িত করে এবং দেশপ্রেমিক মন গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। অবশ্য চিত্তরঞ্জনের বাব-মা, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের মধ্যে একটা জ্ঞানপিপাসা ও জিজ্ঞাসু পরিমণ্ডল জাগ্রত ছিল। পরবর্তীকালে দেশবাসী দেখেছে, চিত্তরঞ্জন কত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, মেধা ও পাণ্ডিত্বের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয় স্তরের সব বিষয় পছন্দ না হওয়ায় এবং সেসব সাবজেক্ট এড়িয়ে যাবার ফলেই তাঁকে হোঁচট খেতে হয়েছিল।
১৮৯০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন চিত্তরঞ্জন। এই প্রেসিডেন্সি কলেজে পঠন-পাঠনের সময়েই চিত্তরঞ্জনের মনে রাজনীতির বোধ ও দেশপ্রেম জেগে ওঠে। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা পড়ে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এসব বিষয়ে যাবার আগে তাঁর আই.সিএস হবার চেষ্টার কথা বলা যাক।
বি.এ পাশ করে চিত্তরঞ্জন ইংল্যান্ড যান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে। আই.সিএস হবার জন্য চিত্তরঞ্জনের খুবই ইচ্ছা হয়েছিল, তার কিছু পারিবারিক কারণও আছে। আগেই বলেছি, তাঁর বাবা ভূবনমোহন ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সলিসিটার। দান-ধ্যানের জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। তাই তাঁর আয় ভালো হওয়া সত্ত্বেও খুব একটা সঞ্চয় ছিল না। এরই মধ্যে তাঁর এক মক্কেলের জন্য তিনি ৩০ হাজার টাকার জামিনদার হয়েছিলেন। মক্কেলটি পালিয়ে গেলে ভূবনমোহনকে ৩০ হাজার টাকা সরকারের ঘরে দিতে হয়। এই ধাক্কাটি আর সামলাতে পারলেন না তিনি, সাংঘাতিক ভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। বাবার সমস্ত ঋণ মেটাবার দায়িত্ব মনে মনে নিয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন। আর সে কাজে ভালো চাকরি দরকার। তাই তিনি আই.সি.এস হতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি তা হতে পারেননি। কেন? সেই গল্প পরের কিস্তিতে।
(চলবে)
22nd April, 2021 09:51 pm
22nd April, 2021 07:31 pm
22nd April, 2021 06:50 pm
22nd April, 2021 05:49 pm