Written By বুদ্ধদেব গুহ
আমার তখনও লেখক পরিচিতি হয় নি। তখন আমি তরুণ চার্টাড অ্যাকাউটেন্ট।আমাদের মক্কেল ছিলেন বেঙ্গল পাবলিশার্স। যার মালিক ছিলেন সাহিত্যিক মনোজ বসু এবং শচীন মুখোপাধ্যায়। ওঁরা একটা সাহিত্যের কাগজ বার করতেন। নাম ছিল ‘সাহিত্যের খবর’। নানা জঙ্গলে শিকারে যাওয়া ছাড়াও অফিসের কাজেও আমাকে নানা জায়গায় যেতে হত। লেখালিখির ইচ্ছে ছেলেবেলা থেকেই ছিল। শুকতারা কাগজে এবং পরে সেন্ট জেভিয়ার্সের কলেজ ম্যাগাজিনে বাংলা ও ইংরেজি দুই লেখায় লিখেছি। কবিতাও লিখেছি। আমার প্রথম বই কবিতার। সেই বইটির নাম ছিল ‘যখন বৃষ্টি নামল’।
‘সাহিত্যের খবর’ পত্রিকাতে মাঝে মাঝেই আমার শিকারের গল্প চেয়ে নিতেন ওঁরা। শিকারের গল্প লিখে আমার মুর্শিদাবাদ জেলার লালগুলার রাজারাও ধীরেন্দ্রলাল রায় হওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। আমার ইচ্ছে ছিল সাহিত্যিক হওয়ার। একদিন শচীনবাবু আমাকে একটি পরিচয়পত্র লিখে দিলেন। দিয়ে বললেন, ‘আনন্দবাজারে গিয়ে রবিবাসরীয় সম্পাদক রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করবেন এই চিঠি নিয়ে।’ চিঠিতে লিখলেন পত্রবাহক আমাদের অডিটর। যিনি শিকার করেন এবং লেখেনও। আপনার পত্রিকাতে কোন লেখা যদি প্রকাশ করতে পারেন তাহলে খুশি হব।
শচীনবাবুর চিঠি সঙ্গে করে আমাদের অফিসের খুব কাছেই সুতারকিং স্ট্রিটে আনন্দবাজার অফিসে গিয়ে রবিবাসরীয়র ঘর খুঁজে উপস্থিত হলাম একদিন বেলা বারোটা নাগাদ। দেখলাম চশমা পড়া কৃষ্ণবর্ণ, তীক্ষ্ণ নাশা এক ভদ্রলোক তসরের পাঞ্জাবি আর মিলের ধুতি পরে চেয়ারে বসে দুটি পা টেবিলের ওপর তুলে দিয়ে সিগারেট খাচ্ছেন। পাশে একটি ছোট টেবিলে এক দীর্ঘাকৃতি ভদ্রলোক নিবিষ্ঠ মনে কী যেন পড়ছেন। বুঝলাম যে প্রথোমক্ত ভদ্রলোকই হলেন রমাপদ চৌধুরী। আমি নমস্কার করে শচীনবাবুর চিঠিটি তাঁকে দিলাম এবং যে লেখাটি সঙ্গে নিয়ে গেছিলাম সেটিও দিলাম।
ভদ্রলোক শচীনবাবুর চিঠিটি ভ্রুকুঞ্চিত করে পড়লেন এবং পড়ার পরে আমার সামনেই কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দিলেন। আর লেখাটি পাশের টেবিলের ভদ্রলোককে ছুড়ে দিলেন। দিয়ে বললেন, ‘সুনীলবাবু এই লেখাটি অন্য সব লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দিন।’ বলেই আমাকে বললেন, ‘আপনি এবার আসতে পারেন!’ আমি তো ভদ্রলোকের অভদ্রতায় এবং রূঢ়তায় হতবাক হয়ে আবার একটি নমস্কার করে ওঁর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ভালো কথা,সুনীল মানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নন। পরে জেনেছিলাম ওঁর নাম সুনীল বসু। উনি একজন কবি এবং রবিবাসরীয় বিভাগে রমাপদ চৌধুরীর একমাত্র সহায়ক।
আমি এমনই অপমানিত বোধ করেছিলাম যে ঠিক করলাম আর কোনওদিন এই অফিসে ঢুকব না। এর মাসখানেক পরের কথা। সুন্দরবনে শিকারে যাচ্ছি। সঙ্গে বাবা এবং বাবার কিছু বন্ধু বান্ধবও ছিলেন। ঠিক ছিল ক্যানিং থেকে আমরা লঞ্চে উঠব। ক্যানিং অবধি গাড়ি নিয়ে আমার ছোটভাই বিশ্বজিৎ আমাদের পৌঁছে দিতে এসেছিল। আমরা তিনদিন পরে ফিরব এক রবিবারে। সেদিন আমার ভাই আবার এসে ক্যানিং থেকে আমাদের তুলে নিয়ে কলকাতায় ফিরবে। এরকমই কথা ছিল। সুন্দরবন থেকে যেদিন ফিরলাম, ফিরতে ফিরতে প্রায় দুপুর হয়ে গেছিল। দেখলাম ভাই দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে ক্যানিংয়ের জেটির পাশে। আমরা নেমে যেতেই আমার ভাই একটি রবিবারের আনন্দবাজার কাগজ আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘তোমার লেখা বেরিয়েছে। তুমি কি লেখা দিয়েছিলে?’ আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। যে লেখার এমন রিসেপশন ঘটেছিল তা যে প্রকাশিত হবে,এ কথা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। গল্পটির নাম ছিল ‘পূর্ণাকোটে বাইসন শিকার’। সেই লেখাটি দেখলাম রবিবাসরীয়র প্রথম পাতাতে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছে। আর লেখার সঙ্গে যে ইলাষ্ট্রেশন ছাপা হয়েছে তা অতি উচ্চ মানের। যিনি এঁকেছেন তাঁর নাম সুধীর মৈত্র। ইলাষ্ট্রেশনটি এতই ভালো হয়েছে যে আমার মনে হল ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুললেও বোধহয় এত পুঙ্খানুপুঙ্খ সে ফটো হত না। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আনন্দবাজারের অফিসে আমি আর যাব না। এরপর বাড়ি ফিরে গেলাম এবং লেখাটির কথা একপ্রকার ভুলেই গেছিলাম। তারপর দিন সাতেক বাদে আমার নামে তিরিশ টাকার একটি মানি অর্ডার এল। তাতে লেখা আছে, ‘আপনার গল্পটির জন্য সম্মানী পাঠালাম।’ আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। এখন তিরিশ টাকা অবশ্য কোন টাকাই নয় কিন্তু ১৯৬০ এর গোড়ার দিকে এই টাকার কিছু মূল্য ছিল। তারও তিন চারদিন পরে আবার একটি পোস্টকার্ড এল। পোস্টকার্ডটি সাদা কিন্তু তার ওপরে ছাপানো আনন্দবাজার পত্রিকার নাম। তাতে সুনীল বসু লিখেছেন, ‘আপনার লেখা আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আপনি এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করুন। আমরা আরও লেখা চাই। ইতি, সুনীল বসু।’ চিঠি পেয়ে তো আমি ফের অবাক। তখন আমি কলার তুলে আনন্দবাজার অফিসে গেলাম। সেই পোস্টকার্ডটি পকেটে নিয়ে। কারণ আমাকে তো ডেকেছে তাঁরা, আমি তো উপযাচক হয়ে যাচ্ছিনা। তাঁদের আমন্ত্রণেই আমি যাচ্ছি। কাজেই মাথা উঁচু করেই গেলাম। কিন্তু সেদিন রবিবাসরীয়র ঘরে ঢোকার পরেও সম্পাদক আমার দিকে তাকালেন না, কোনও কথাও বললেন না। সুনীলবাবু বললেন, বসুন। বসলাম। ওঁনার উল্টোদিকের চেয়ারে।
বললেন, ‘আমার পোস্টকার্ড পেয়েছেন?’ বললাম,হ্যাঁ পেয়েছি। তারপর বললেন, ‘আমাদের আরও লেখা দিন। আপনার লেখা খুব ভালো লেগেছে আমাদের।’ শুনে বললাম, ঠিক আছে দেবো। এখানে বলে রাখি যখন এসব কথা চলছে তখন কিন্তু সম্পাদক আমার দিকে ফিরে একবারও তাকালেন না, কোনও কথাও বললেন না আমি যতক্ষণ ছিলাম ওখানে। তিন চারদিন পরে আরও একটি লেখা লিখে আমার অফিসের বেয়ারাকে দিয়ে আনন্দবাজার রবিবাসরীয় বিভাগে পাঠিয়ে দিলাম। আশ্চর্য হয়ে গেলাম দেখে যে সেই লেখাটি সেই সপ্তাহের রবিবারের রবিবাসরীয়-তে প্রকাশ পেয়েছে। এরপরে পরপর প্রায় আট-দশটি লেখা প্রকাশিত হল ওই রবিবাসরীয়তে। এবং যথারীতি প্রতিটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পরে আমার নামে মানি অর্ডার আসতে লাগলো। এরপরে আরেকদিন গেছি নতুন একটি লেখা নিয়ে। সেদিন যেতেই সম্পাদক রমাপদ চৌধুরী আমার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘তাড়া আছে?’ তাড়া অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমি বললাম, না নেই। এবার বললেন, ‘বসুন’। বলে ওঁর চেয়ারের পাশে যে চেয়ার ছিল সেখানে আমাকে বসতে বললেন। গিয়ে বসলাম। তারপরে উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘যে চা খাবেন?’ আমি তো আরও অবাক। যে মানুষ কথাই বলেন না, আমার দিকে ভালো করে তাকান পর্যন্ত না তিনি আমাকে বসতে বলে আবার চা খাওয়ানোর কথা বলছেন! একটু অবাক হয়েই বললাম,হ্যাঁ খাবো। আমার জন্য চায়ের অর্ডার চলে গেল। চা আসার পর বললেন, ‘আপনি লিখুন,লিখে যান। আমি আছি। আপনার লেখা আমি ছাপিয়ে যাবো।’ এইভাবে রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচিতি গড়ে উঠল। এরপরে প্রায়ই যেতে থাকলাম রবিবাসরীয়-র ঘরে রমাপদ চৌধুরীর কাছে।
আরো কিছুদিন পরের কথা। ততদিনে আমার অনেকগুলি লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর সেসব লেখা বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। তখন আমি বললাম যে, শিকার ছাড়া অন্য লেখা লিখতে বলবেন না আমাকে? তখন রমাপদবাবু বললেন,’আগে এই লেখাই লিখুন। মানুষ আপনার নামটি জানুক। আপনার নাম জানলে আর যদি এই লেখা তাঁদের ভালো লাগে তখন আপনি যাইই লিখবেন তাই লোকে আগ্রহ নিয়ে পড়বে। তাই আগে আপনার নামটির সঙ্গে লোকের পরিচিতি হোক।’
একদিন আনন্দবাজারের লিফটে এক ছোটখাটো চেহারার ভদ্রলোক আমাকে বললেন, ‘আপনিই বুদ্ধদেব গুহ?’ বললাম, হ্যাঁ। উনি ফের বললেন, ‘খুব ভালো হচ্ছে লেখা। একদম অন্য ভেইন-এর লেখা। লিখে যান। বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন ধারার প্রবর্তন হচ্ছে।’ শুনেটুনে আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তা আপনি ..... উনি তখন বললেন, ‘আমার নাম গৌরকিশোর ঘোষ’।
এইভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। আমার অনেক লেখা রবিবাসরীয়তে প্রকাশিত হয়েছে। তখন রবিবাসরীয়-তে প্রেম পর্যায়ের ছোট ছোট লেখা বেরোচ্ছিল। ওই পাঁচশো শব্দের আশেপাশে। বিভিন্ন বড় বড় সাহিত্যিকরা এসব লেখা লিখছিলেন। তা একদিন নিজের দফতরে বসে আড্ডার ফাঁকে ওই লেখা নিয়ে আলোচনায় রমাপদবাবু আমাকে বলে উঠলেন, ‘ধুর মশাই এঁরা কেউ কোনওদিন প্রেম করেননি। এঁরা প্রেমের লেখা কী লিখবেন? আপনি একটা লিখুন তো!’ শুনলাম। শুনে তারপর আমি প্রথম একটা ‘নন শিকার’ লেখা লিখে ওঁনাকে দিয়ে এলাম। প্রেম নিয়েই লেখা। সেই লেখাটি প্রকাশিত হতেই হইহই পড়ে গেল। খুবই প্রশংসিত হল। তার কিছুদিন পরে আনন্দবাজারের বার্ষিক সংখ্যা যখন বেরোবে তখন রমাপদবাবু আমাকে বললেন, ‘এবারে আপনি একটা লেখা এখানে লিখতে পারেন। যেটা শিকার নিয়ে নয়। অন্যরকম কোনও লেখা,যে ধরণের লেখা আপনি লিখতে চাইছিলেন। দেখি কেমন লেখেন!’
বার্ষিক আনন্দবাজারের সংখ্যা তখন প্রকাশিত হত দোলের আগে। আমরা তখন একসঙ্গে আবিরের সঙ্গে সেই দোল সংখ্যাও কিনতাম। এবং সেটি অত্যন্ত উচ্চমার্গের পত্রিকা হত। ভালো ভালো লেখকেরা তাঁদের ভালো ভালো লেখা সেই পত্রিকায় দিতেন। তা আমি একটি লেখা লিখলাম। প্রেমের বড়গল্প। নাম দিলাম ‘হলুদ বসন্ত’। কিছুদিন কেটে গেছে। দোল আসছে সামনেই। আমি অফিসে বসে একমনে কাজ করছি এমন সময় ফোন বেজে উঠল। রমাপদবাবু ফোন করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘খুব ব্যস্ত?’ আমি বললাম, না বলুন। কেন? ফের প্রশ্ন এল, ‘একবার আসতে পারেন?’ জবাব দিলাম, যাচ্ছি এক্ষুনি। আমার অফিস থেকে ঢিল মারলেই আনন্দবাজার। হেঁটে যেতে দশ মিনিটও লাগে না। গেলাম। রমাপদবাবুর ঘরে ঢুকতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে চশমাটি চোখ থেকে খুলে জোরে বলে উঠলেন, ‘আরে কী করেছেন কী মশাই?’ আমি ভাবলাম কোনও অপরাধ হয়েছে বোধহয়। আমি বললাম,কেন? উনি বললেন, ‘আপনার এই লেখা যেমন আরম্ভ তেমন প্রতিটি চ্যাপ্টার ভাগ,তেমন শেষ। আপনি তো পাকা লেখক মশাই!’ একটু থেমে আরও বললেন, ‘আপনার প্রতি আমি খুব অন্যায় করেছি আপনাকে শিকার ছাড়া অন্য লেখা লিখতে না দিয়ে।’ বলতে ভুলে গেছি তখন রমাপদবাবুর পাশে সুধীর মৈত্র বসেছিলেন। ওই এক টেবিলেই। সুধীর মৈত্র মশায়ের সঙ্গে পরে আমার খুবই পরিচয় হয়। অত ভালো ইলাষ্ট্রেটর আমি খুব কম দেখেছি। আমার উপন্যাসসমূহের অধিকাংশই প্রচ্ছদ সুধীর মৈত্রের করা। এরকম ফিগার ড্রয়িং খুব কম শিল্পীই করতে পারেন। তাছাড়া উনি এত সৎ ছিলেন যে একটি উপন্যাস আগাগোড়া পড়ে সেই উপন্যাসের প্রচ্ছদ আঁকতেন। আর সেই প্রচ্ছদের নায়ক নায়িকার চরিত্র যেরকমভাবে পরিস্ফুট হত যে যিনি লেখক তিনি একমাত্র তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারতেন। তা যাইহোক যেটা বলছিলাম। তখন রমাপদ চৌধুরীও সুনীলবাবু আমার লেখার প্রুফটি দেখছিলেন। সেই দেখতে দেখতেই রমাপদবাবু আর ধৈর্য্য না ধরতে পেরে আমাকে টেলিফোন করেছেন। তারপর তো এই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। এই মিতবাক সম্পাদক সেদিন এই কাণ্ড করেছিলেন। জানিয়ে রাখি, রমাপদবাবু কিন্তু সামনাসামনি কারোর প্রশংসা করতেন না। করলেও আড়ালে করতেন। প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য যে সারাজীবনে রমাপদবাবু আর আমার প্রশংসা করেননি। ওই একবারই করেছিলেন। সেই প্রথম, সেই শেষ।
তারপর ‘হলুদ বসন্ত’ বেরোনোর পরে একদিন প্রায় মাঝরাত্তিরে আমার টেলিফোনটি বেজে উঠলো। তখন আমার মাথার কাছে টেলিফোন থাকত। তুললাম। ফোনের ওপাশ থেকে এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘বুদ্ধদেব গুহ বলছেন?’ বললাম, হ্যাঁ। উনি বললেন, ‘আমার নাম সন্তোষকুমার ঘোষ। আপনাকে দেখি মাঝেমাঝে রমাপদর ঘরে যান। তা বলছি আপনার এই ‘হলুদ বসন্ত’ লেখাটা এক্ষুনি পড়ে শেষ করলাম।’ একটু থেমে তারপর বললেন, “নীলাঙ্গুরীয়’-র পরে এত ভালো প্রেমের উপন্যাস আমি বাংলা সাহিত্যে আর পড়িনি। খুব ভালো লেগেছে। আপনি আরও লিখুন। আর আনন্দবাজারে যখন আসেন তখন মাঝেমধ্যে একদিন আমার সঙ্গে এসে আলাপ করে যাবেন। আমি ওই তলাতেই বসি। আমার নাম বললেই যে কেউ আমার ঘর আপনাকে দেখিয়ে দেবে।’’ তো এই একটা জীবনে মস্ত বড় প্রাপ্তি আমার। সন্তোষকুমার ঘোষের মত একজন দিকপাল সাংবাদিক এবং লেখকও আমার মত নতুন লেখকের এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। রমাপদবাবুর সঙ্গে পরে আমার অন্তরঙ্গতা হয় এবং ওঁর মত সুহৃদ আমি আমার জীবনে আর পাইনি। উনি আমাকে এত সুযোগ দিয়েছেন লেখার যা বলবার নয়। সেই ঋণ ওঁর কাছে আমার অপরিশোধ্য কিন্তু অবশ্যই স্বীকার্য। পরে কখনও আবার সুযোগ সুবিধা হলে রমাপদবাবুকে নিয়ে আরও কিছু লেখার ইচ্ছে রইলো।