Written By অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বর্ষা শেষ হতে চলল। কাছে এসে গেল পাহাড়ে ঘোরার দিন। কেউ যাবে কুলু-মানালি, কেউ বা আবার ইউমথাং। না হলে, হাতের কাছে তো রয়েইছে, চিরকালের চিরচেনা দার্জিলিং। ইদানীং যদিও পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ঘোরা, যাকে বলে ট্রেকিং, তার বেশ চল হয়েছে। রাজশেখর বসুর ভাষায়, ‘চললে হাঁপুনি আর থামলে কাঁপুনি’-র পরোয়া না করেই দলে দলে বাঙালি চলেছে রাকস্যাক পিঠে, আর ইচ্ছেমতো নোংরা করছে অপরূপ হিমালয়ের আঙিনা। ডাল ভাঙছে, পাতা ছিঁড়ছে, খিচুড়ির দাম নিয়ে নেপালি দাজুর সঙ্গে খাঁটি বাংলায় ঝগড়া করছে। বিষাক্ত নীল একোনাইটের ফুল তুলে গন্ধ শুঁকছে হাসি-হাসি মুখে। এক পা খাদে ঝুলিয়ে দিয়ে, দেদার সেলফি তুলছে। ভোরবেলার কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশে যে কোনো একটা পাহাড় দেখিয়ে বলে দিচ্ছে, ঐযে, ঐটা এভারেস্ট। তারপর আবার সেলফি, এবার ‘এভারেস্টের’ সঙ্গে! রঙ্গ আর কাকে বলে!
তবু, সেই বনপথের কথা বলতে ইচ্ছে করে। যেখানে মেঠো পাকদণ্ডী রডোডেনড্রনের ঝরা পাপড়িতে লাল হয়ে থাকে। হিমশিখর ছুঁয়ে হাওয়া ভেসে আসে, হাত বুলিয়ে দেয় ঘাম ঝরা কপালে। সোনালি শ্যামা পাখির ঝাঁক, বন চিরে হারিয়ে যায় কোথায়।…
মানেভঞ্জন। পাহাড়িয়া ছোট্ট মফস্বল। বিখ্যাত সান্দাকফু ট্রেকের শুরু এখান থেকেই। একটা রাত এখানে কাটিয়ে, বেরিয়ে পড়ুন সকালে। প্রথমদিন চেনা জায়গা, টংলু। সূর্যোদয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে, বেশ করে চা নাস্তা সেরে, বেরিয়ে পড়া আবার। আজ অল্প রাস্তা। নেপালের জৌবাড়ি হয়ে গৈরিবাস। মুমুংখোলা নদীর পারে রাত কাটবে কাঠের বাড়িতে। পরের দিন হারিয়ে যাওয়া চেনা রাস্তা ছেড়ে। পাহাড়ের বন ঝুঁকে পড়েছে চারপাশ থেকে। আলোছায়ার নকশিকাঁথা মুড়ি দেয়া শুঁড়িরাস্তা বেয়ে, কবেকার সব গাছের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলা। সে অনেকদিন আগে, একবার পথ হারিয়েছিলাম এই জঙ্গলে। আর বিকেলের মুখে খুঁজে পেয়েছিলাম ছোট্ট সেই গ্রাম ফেদিখোলা- আপনি এখন যাচ্ছেন সেখানেই।
বনের পর ঘাসজঙ্গল, তারপর ছোট ছোট গাঁও। তারপর আবার বন, আর ঐযে নীচে নিশান উড়ছে, দেখা দিয়েছে ফেদিখোলা। পাহাড় দিয়ে ঘেরা। নদী এখানে গান গায় দিনরাত। এখন দুয়েকটা দিন কাটিয়ে দিন এখানেই। নিশ্চিন্ত থাকুন। দার্জিলিং যাওয়ার গাড়ি মিলবে এখান থেকেই।
কীভাবে যাবেন
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ট্রেনে বা বাসে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি। সেখান থেকে গাড়িতে মানেভঞ্জন। শেয়ার জীপে ঘুম নেমে, সেখান থেকেও মানেভঞ্জনের গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড় থেকেও মানেভঞ্জনের শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
...........................................................................................................................................................................
মানেভঞ্জন, টংলু আর গৈরিবাসে থাকার জন্য আছে হোটেল আর ট্রেকার্স হাট। ফেদিখোলায় উঠতে হবে গ্রামের বাড়িতে। চাইলে যোগাযোগ করুনঃ জীবন কুমার ছেত্রী, মানেভঞ্জন, ০৯৭৩৩০ ৪৪৫১২।। ফেদিখোলা, সুমন দুকপা, ০৯৬৪৭৭ ২৯২৪২
6th March, 2021 11:13 pm
6th March, 2021 10:38 pm
6th March, 2021 07:54 pm
6th March, 2021 07:25 pm