Written By কলকাতা ওয়েব ডেস্ক
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে গলছে সুমের কুমেরুর বরফ। জেগে উঠছে হাজার বছরের পুরো জীবাণু। শুরু হবে আরও মৃত্যুমিছিল। অথচ নির্বিকার রাষ্ট্রনায়করা।
বহুদিন ধরেই বৈজ্ঞানিকরা রাষ্ট্রনায়কদের সতর্ক করতে চেয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে। কর্ণপাত করেননি তাঁরা। এখন করোনা আসার পরে টনক নড়েছে গোটা দুনিয়ার। লক্ষ লক্ষ বছরের পুরানো হারিয়ে যাওয়া ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আবার ফিরে আসছে না তো এই পৃথিবীতে? আবারো কি ধ্বংস হয়ে যাবে মানব সভ্যতা?
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণঘাতী অতীতের অনেক মাইক্রোবস ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন দিন কিন্তু আসতে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে গলতে শুরু করেছে হাজার হাজার বছর ধরে সুমেরু ও কুমেরু-তে দাঁড়িয়ে থাকা বরফের পাহাড়। পৃথিবীর দুই প্রান্তে বছরের পর বছর ধরে যে বরফের আস্তরণ জমা হয়ে রয়েছে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে তা প্রতিদিনই গলতে শুরু করেছে। ফলে বরফ স্তূপের গভীরে চাপা পড়ে থাকা এই সমস্ত প্রাণঘাতী ভাইরাস-ব্যাক্টিরিয়াও ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গেই মৃতদেহে চাপা পড়ে থাকা জীবাণু বাইরে বেরিয়ে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ফ্রান্সের এইক্স-মারসেলি ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোবসের জন্য খুব ভাল সংরক্ষকের কাজ করে বরফের স্তূপ। কারণ অত্যন্ত ঠান্ডা, কোনও অক্সিজেন নেই এবং সূর্যের আলোও পৌঁছয় না। ফলে যুগ যুগ ধরে বরফের তলায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে এরা।
যখনই এই বরফের স্তর পাতলা হয়ে যায়, সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে, সক্রিয় হয়ে ওঠে এই মাইক্রোবস গুলো। প্রাণঘাতী তো বটেই, বরং আগে থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা নিয়ে জেগে ওঠে তারা। এক একটা ভাইরাস এর ক্ষমতা আছে গোটা দুনিয়া সাফ করে দেবার।
২০১৬ সালে সাইবেরিয়ার এক ১২ বছরের শিশুর অ্যান্থ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছিলেন, বহু বছর আগে ওই এলাকায় অ্যান্থ্রাক্সের কবলে প্রচুর রেনডিয়ারের মৃত্যু হয়েছিল। সেই দেহগুলো বরফের নীচে চাপা পড়েছিল। বরফ গলে সক্রিয় হয়ে ওঠে অ্যান্থ্রাক্সের জীবাণু। কোনও ভাবে জল এবং খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়েই ওই শিশুর সংক্রমণ ঘটায়।
শুধু এই একটা ঘটনাই নয়, গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বরফের নীচে চাপা পড়ে থাকা একাধিক প্রাণঘাতী জীবাণুর খোঁজ পেয়েছেন। যেমন ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা আলাস্কার একটি বরফ হ্রদ থেকে ৩২ হাজার বছরের পুরনো এক ব্যাক্টিরিয়া কার্নোব্যাকটেরিয়াম প্লেইসটোসেনিয়াময়ের খোঁজ পেয়েছেন। সূর্যের আলোয় আসার পর থেকেই আশ্চর্য ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে ৩২ হাজার বছর আগের এই ব্যাকটেরিয়া। এবং মারাত্মকভাবে সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হয় তা। এর দু’বছর পর ২০০৭ সালে আন্টার্কটিকার বরফে চাপা পড়ে থাকা ৮০ লক্ষ বছর পুরনো এক ব্যাক্টিরিয়ারও সন্ধান পাওয়া গেছে। ১৯১৮ সালে সারা বিশ্বের ত্রাস হয়ে উঠেছিল স্প্যানিস ফ্লু। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই সংক্রমণের জেরে। আলাস্কার তুন্দ্রায় বরফের তলার গণ কবর দেওয়া হয়েছিল মানুষদের। সেই জায়গা থেকেই স্প্যানিস ফ্লু ভাইরাসের জেনেটিক অংশ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার প্রায় ১০০ বছর পর, ২০১৪ সালে স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাস এর সন্ধান মেলে সেই গণ কবর থেকে। এমনকী একই ভাবে সাইবেরিয়ায় বরফের তলা থেকে গুটি বসন্ত এবং বিউবোনিক প্লেগ-এর ভাইরাসও মিলেছে। ১৮৯০ সালে সাইবেরিয়াতে মহামারি আকার নিয়েছিল গুটি বসন্ত। ৪০ শতাংশ জনবসতি সাফ হয়ে গিয়েছিল এই রোগে। এখনো মাটির তলায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রয়েছে সেই মারণ ভাইরাস। ৩০ থেকে ৮০ হাজার বছর আগে ছিল নিয়ানডার্থাল গ্রূপের মানুষ। রাশিয়া তে পাওয়া তাদের দেহাবশেষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে মিলেছে কিছু মারণ ভাইরাস এর সন্ধান। এবং দেখা গেছে একইভাবে রয়েছে তাদের মারণ ক্ষমতা ।
ফ্রান্সের মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বরফের তলায় থাকা জীবাণু নিয়ে জোর গবেষণা। একই গবেষণা চালাচ্ছেন নাসার বৈজ্ঞানিকরা। তাঁদের মতে, লক্ষ লক্ষ বছর আগের মারণ জীবাণুরা খুব সুন্দর ভাবে লুকিয়ে আছে বরফের নিচে। তাদের কর্মক্ষমতাও একই। এর মধ্যে যাদের ডিএনএ চেন বোরো, তারা অসম্ভব শক্তিশালী। এমনকি দেখা গেছে যে এতো লক্ষ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকলেও তাদের মারাত্মক রেসিস্টেন্স পাওয়ার। আমাদের হাতে বিন্দুমাত্র কোনোও এন্টিবায়োটিক নেই যেগুলো প্রয়োগ করে এই জীবাণু কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফস্তর ক্রমশ গলে যাচ্ছে। এতদিন যা বরফের নিচে ছিল তা উঠে আসছে সারফেসে। সূর্যালোক এবং বাতাসের স্পর্শ পাচ্ছে। ঘুম ভাঙছে এই জীবাণুর।
জীবাণুর ঘুম পাচ্ছে আর ঘুমিয়ে রয়েছেন রাষ্ট্রনায়করা। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিই ডেকে আনবে আবার মৃত্যুমিছিল।
ছবি সৌজন্যে- ডেইলি মেল/ইউটিউব