Written By অনিরুদ্ধ সরকার
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা দেবতাদের শিল্পী বা 'দেবশিল্পী' নামে পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা হলেন বিশ্বকর্মার মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তাঁর পিতা। মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলের শিল্পকলার দেবতা, দেবতাদের প্রাসাদ, বিভিন্ন অলঙ্কার এবং অস্ত্র নির্মাতা। বিশ্বকর্মার চার হাত, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি দাঁড়িপাল্লা থাকে। দাঁড়িপাল্লার দুটি পাল্লার একটি 'জ্ঞান' ও অন্যটি 'কর্মে'র প্রতীক।
হিন্দু পুরাণ জুড়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার একাধিক নির্মাণের কথা। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি- এই চার যুগ ধরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার অমর কীর্তি। সত্যযুগে বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন স্বর্গলোক।অকল্পনীয় এই প্রাসাদেই থাকতেন দেবরাজ ইন্দ্র। ত্রেতা যুগে বিশ্বকর্মা সৃষ্টি করেছিলেন সোনার লঙ্কা। দ্বাপর যুগে সৃষ্টি করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা।আর কলিযুগে বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ত্রেতা যুগে রাবণ রাজার রাজধানী ছিল সোনার লঙ্কা। পার্বতীর সঙ্গে বিয়ের পর মহাদেব এক সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণের ভার দেন বিশ্বকর্মাকে। স্বর্ণপ্রাসাদ নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। গৃহপ্রবেশের পুজোর জন্য রাবণ রাজকে আমন্ত্রণ জানান মহাদেব। পুজোর পর দক্ষিণা স্বরূপ মহাদেবের কাছে স্বর্ণলঙ্কা চান রাবণ। রাবণের হাতে স্বর্ণলঙ্কা তুলে দেন মহাদেব। সেই থেকেই রাবণের রাজধানী হয়ে যায় সোনার লঙ্কা।কেউ কেউ অবশ্য বলেন রাবণের ভাই কুবেরই লঙ্কার আসল মালিক।
এবার দ্বাপর যুগের কথা। শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা বিশ্বকর্মার এক অমর সৃষ্টি। মহাভারতে দ্বারকাকে শ্রীকৃষ্ণের কর্মভূমি হিসেবে উল্লিখিত। আরব সাগরের তীরে দ্বারকার সৌন্দর্য ছিল তুলনাহীন।শ্রীকৃষ্ণ মারা যাওয়ার পর দ্বারকা সমুদ্রের তলে চলে যায়।
কলিযুগে কৌরব ও পাণ্ডবদের রাজধানী হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতিতে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসেন।
ময় দানবের সহায়তায় পাণ্ডবদের সুন্দর শহর ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। পাণ্ডবদের থাকার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। যেখানে ভাইদের সঙ্গে থাকতেন যুধিষ্ঠির। সেই খাণ্ডবপ্রস্থে রাজধানী নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ। তৈরি হয় ইন্দ্রপ্রস্থ। ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল 'মায়ানগরী'। প্রাসাদের মাটি দেখলে মনে হত যেন স্বচ্ছ্ব জল টলটল করছে। পুকুরের স্বচ্ছ্ব জলের মধ্যে দিয়ে আয়নার মতো চকচক করতো মাটি। প্রাসাদ তৈরির পর পাণ্ডবদের নিমন্ত্রণ রক্ষায় ইন্দ্রপ্রস্থে যান কৌরবরা। মায়ানগরীর মায়া বুঝতে না পেরে পুকুরের জলে পড়ে যান দুর্যোধন। আর তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসে উঠেছিলেন দ্রৌপদী। 'অন্ধ বাবার অন্ধ ছেলে' বলে দুর্যোধনকে অপমান করেন দ্রৌপদী। আর এই ঘটনা থেকেই সূত্রপাত রক্তক্ষয়ী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের।
এছাড়া বিশ্বকর্মা বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরে অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের অস্ত্র প্রভৃতিও নির্মান করেন। শুধু তাই নয় পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেন দেবশিল্পী।