Written By শাজাহান আলি
কলকাতা ফুটবল লিগ জয় করে জঙ্গলমহলের বাড়িতে এলো পিন্টু মাহাত ৷ নতুন পরিচয় নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ির জন্য মেদিনীপুর ষ্টেশনে নামতেই ফুলোর তোড়া হাতে ধরিয়ে এক প্রকার তুলে নিয়ে গেলেন বন্ধুরা ৷ বাড়ি ফিরে নিজের মাটির ঝুপড়িতে বাড়িতে বসে খাওয়া দাওয়া সারল আত্মীয়দের সঙ্গে। জঙ্গলমহলের নতুন হিরোর সঙ্গে দেখা করতে ফুল নিয়ে হাজির অসংখ্য বন্ধুবান্ধব। সংবর্ধনাও জুটল জঙ্গলের বিভিন্ন ক্লাব থেকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত ঢডরাশোল গ্রামের বাসিন্দা পিন্টু মাহাত৷ প্রায় আট বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চাঁদড়া গ্রাম থেকে মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ট্রায়াল দিতে কলকাতায় চলে গিয়েছিল। প্রথম দিনই তার খেলা মুগ্ধ করেছিল নির্বাচকদের। ভালো খেলার সুবাধে পিন্টু নির্বাচকদের হৃদয়ই জয় করেনি, স্থান দখল করেছিল কোচ অমিয় ঘোষের বাড়িতে থাকার৷ নিজের বাড়িতেই ছেলেটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন অমিয়বাবু। টানা তিন বছর রেখেছিলেন নিজের কাছে। এরপর মোহনবাগান অ্যাকাডেমি হয়ে গত তিন বছর মোহনবাগানের সিনিয়র দলে খেলছেন পিন্টু মাহাতো। সেই প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডারই এখন মোহনবাগানের নতুন গর্ব ৷
পিন্টুর বাবা সুধীর মাহাতোর তেমন কোনো সম্পত্তি বা জমি নেই ৷ সামান্য একটু কুঁড়ে ঘরের ভেতরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে বড়ো করেছেন ৷ রোজগার বলতে মজুরি, গুটি কয়েক ছাগল-গরু৷ সুধীর বাব স্ত্রী বালিকা মাহাতোকে নিয়ে হাড়ভাঙা মজুরী করে মানুষ করেছেন ছেলে মেয়েকে ৷ কয়েকবছর আগে বিয়ে হয়েছে পিন্টুর দিদির৷ একসময়ের মাওবাদী উপদ্রুত জঙ্গলমহলের ঢডরাশোল গ্রামের সেই পিন্টু মাহাতো এখন নজর কেড়েছে রাজ্যের ৷আজ মা তাঁর জন্য মাংস রান্না করেছিল ৷ জামাইবাবু ও বন্ধুদের সঙ্গে মাটিতে বসেই সেই খাবার খেয়েছে সে ৷ ততক্ষনে টিভিতে দাপিয়ে খেলা দেখানো পিন্টুকে দেখতে ভীড় জমে গিয়েছিল তাঁর মাটির ঝবাড়ির সামনে ৷ গুড়গুড়িপাল এলাকার আশার আলো ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ৷ ক্লাবের সভাপতি সুভাষ নন্দী বলেন “ পিন্টু আমাদের গর্ব৷ ওকে সম্মান দিতে পেরে আমরাও খুশি ৷ জঙ্গলমহলে আর সন্ত্রাশ নয়,পিন্টুর মতো উদীয়মান সুর্যরাও থাকে সেটা রাজ্য জেনেছে আজ৷” এদিন পিন্টু বলেন “ আমার মতো জঙ্গলমহলে অনেক পিন্টুই রয়েছে ৷ তাদেরও আমার মতো সঠিক গাইড প্রয়োজন ৷তাহলে অনেকেই উঠে আসবে ৷ আমার পরের লক্ষ্য আইলিগ ও ভারতীয় টিমের হয়ে খেলা ৷”
পিন্টু মাহাতর ভাঙ্গা ঘরে এখন চাঁদের আলো, সে আলো সাফল্যের, প্রত্যাশার।