জেনেভা: ২০২২ সাল ছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বছর। পৃথিবীতে এসেছে প্রাণঘাতী বন্যা (Flood), তাপপ্রবাহ (Heat Wave), খরা (Drought) যার ফলে হিমশিম খেতে হয়েছে। গত বছরের আবহাওয়ার দীর্ঘ নিরীক্ষণ করে একথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের (United Nations) জলবায়ু সংক্রান্ত সংস্থা ওয়ার্ল্ড মিটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (WMO)। তারা জানিয়েছে, ২০২২ সালে এই গ্রহকে বিপর্যস্ত করেছে ভয়াবহ বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ যার ফলে কোটি কোটি ডলার খরচ হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ এও জানিয়েছে, দুনিয়া জুড়ে মহাসমুদ্রের তাপমাত্রা এবং অম্লত্ব রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে কুমেরু সাগর (Antarctic Sea) এবং ইউরোপিয়ান আল্পসের (Alps) হিমবাহের বরফ কমেছে রেকর্ড পরিমাণ। আধুনিক সময়ে সমুদ্রের জলের স্তর বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ এবং তাপমাত্রা ধরে রাখা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাসের পরিমাণও বেড়ে বিপজ্জনক হারে। পৃথিবীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা যেসব হিমবাহের (Glacier) প্রতি নজর রাখেন তা মাত্র একবছরে ১.৩ মিটার সঙ্কুচিত হয়েছে। ভয়ের কথা এই যে, এই প্রথমবার সুইৎজারল্যান্ডের (Switzerland) হিমবাহের সমস্ত বরফ গ্রীষ্মের সময় গলে গিয়েছে।
ডব্লুএমও-র সেক্রেটারি জেনারেল পেত্তেরি তালাস (Petteri Taalas) বলছেন, সমুদ্রের জলস্তর গত শতকের নয়ের দশকে যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল তার দ্বিগুণ হারে বাড়ছে এখন। এই শতাব্দীর শেষে গিয়ে মহাসমুদ্রের জলস্তর এক মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: COVID 19 Update | উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ, দৈনিক সংক্রমণ ফের ছুঁল ১২ হাজারের গণ্ডি
তালাস জানিয়েছেন, যে দূষণ আমরা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে ফেলেছি তাতে ২০৬০ পর্যন্ত এই নেতিবাচক বিষয়গুলো চলতে থাকবে। চেষ্টা করেও তাকে আটকানো যাবে না। তালাস বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই হিমবাহের বরফ গলার খেলায় হেরে গিয়েছি, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির খেলায় হেরে গিয়েছি। এটা দুঃসংবাদ।
২০২২ সালটা হয়তো উষ্ণতম বছর ছিল না কিন্তু দুনিয়া জুড়ে শেষ আটটা বছর পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম আট বছর। ব্রিটেন, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, বেলজিয়াম, লুক্সেমবুর্গ, ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডে এ পর্যন্ত সবথেকে গরম পড়েছিল। প্রসঙ্গত, পৃথিবী জুড়ে তাপমাত্রার হিসেব রাখা হয় ১৮৫০ সাল থেকে।
তালাস আরও বলেন, ২০২২ সালে পূর্ব আফ্রিকায় নাগাড়ে খরা, পাকিস্তানে রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি এবং চীন ও ইউরোপে রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দেখা দিয়েছে খাদ্যসঙ্কট, পরিযায়ী হতে বাধ্য হয়েছেন বহু মানুষ। ক্ষতিপূরণ দিতে খরচ হয়েছে কোটি কোটি ডলার। চীনে এর আগে এতদিন ধরে তাপপ্রবাহ কোনওদিন চলেনি। আফ্রিকায় খরার জেরে সোমালিয়া এবং ইথিওপিয়ার ১৭ লক্ষের বেশি মানুষ এলাকাছাড়া হয়েছেন। পাকিস্তানে বন্যায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল দেশটার এক-তৃতীয়াংশ যার ফলে ঘরছাড়া হয়েছিলেন ৮০ লক্ষ মানুষ।