Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
শতবর্ষে অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল ক্লাবকর্তাদের চোখে। সলমন খানকে নিয়ে এসে জমজমাট গান-নাচের জলসা। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে এসে শতবার্ষিকী ফুটবল ম্যাচ। কিন্তু গত এক বছরে কিছুই হয়নি ইস্ট বেঙ্গলে। ব্যাপারগুলো অধরা স্বপ্নই রয়ে গেছে। কিন্তু শনিবার ক্লাবের শতবর্ষ পূর্তির দিনে যে স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশিত হল তা তো ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ বটেই, ময়দানে এ রকম স্মারক গ্রন্থ আর আছে বলে মনে হয় না। এর সঙ্গে তুলনা করা চলে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত মোহনবাগান ক্লাবের প্লাটিনাম জুবিলি স্মারক গ্রন্থের কথা। তবে দুঃখের হলেও ঘটনাটা সত্যি মোহনবাগান ক্লাবে শতবর্ষ পূর্তির কোনও অনুষ্ঠানও যেমন হয়নি, কোনও স্মারক গ্রন্থও তেমনি প্রকাশিত হয়নি।
কী নেই ইস্ট বেঙ্গলের স্মারক গ্রন্থে? সচিব কল্যাণ মজুমদার সম্পাদিত ৩৫০ পাতার ঝকঝকে, সম্পুর্ণ রঙিন, বৃহদাকায় গ্রন্থটি শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে। তার পরেই আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা। এর পর ফিফা ভাইসপ্রেসিডেন্ট এবং এ এফ সি প্রেসিডেন্ট হামাম বিন আলেম, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন প্রফুল প্যাটেলের শুভেচ্ছা। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের প্রাতঃস্মরণীয় ফুটবলাদের লেখাগুলি পড়লে ক্লাবের ইতিহাস জানা হয়ে যায়। কে নেই সেই তালিকায়? যিনি কখনও ইস্ট বেঙ্গলে খেলেননি সেই চুনী গোস্বামী থেকে শুরু করে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সর্বকালের সেরা কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা তো আছেই পাশাপাশি সুকুমার সমাজপতি, অশোক চ্যাটার্জি, সৈয়দ নইমুদ্দিন মহম্মদ হাবিব,, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, শ্যামল ঘোষ, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাষ্কর গাঙ্গুলি, তরুণ দে, বিকাশ পাঁজি, শিশির ঘোষ, তুষার রক্ষিত. অলক মুখার্জি, অতনু ভট্টাচার্য হয়ে বাইচুং ভুটিয়া, আই এম বিজয়ন, আ্যালভিটো ডিকুনহা, ডগলাস ডি সিলভা, সুনীল ছেত্রী—কে নাই লেখক তালিকায়? এমন কি যিনি ইস্ট বেঙ্গলের ব্ল্যাঙ্ক চেক ফেরত দিয়েছিলেন সেই মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সত্যজিৎ চ্যাটার্জি এবং সুব্রত ভট্টাচার্যও হাজির তাঁদের লেখা নিয়ে। ক্রিকেটের সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে আছেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তবে গ্রন্থটির সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিদের রচনা। সেখানে আছে কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা, বিচারপতি, উদ্যোগপতি এবং অবশ্যই প্রথিতযশা সাংবাদিকদের মূল্যবান রচনা। কবি-সাহিত্যিকদের তালিকাটি ঈর্ষণীয়। শঙ্খ ঘোষ, প্রফুল্ল রায়, পবিত্র সরকার, বুদ্ধদেব গুহ, সমরেশ মজুমদার, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, কমল চক্রবর্তী, জয় গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্তদের সঙ্গে উপস্থিত বাংলাদেশের কিংবদন্তি সেলিনা হোসেনও। চলচ্চিত্র ও থিয়েটার জগতের কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার, ঋতুপর্না সেনগুপ্তের সঙ্গে সঙ্গীতের আরতি মুখোপাধ্যায়, অজয় চক্রবর্তী ইন্দ্রাণী সেন, রূপঙ্কর, মনোময়দের সঙ্গে উপস্থিত জাদুকর পি সি সরকার (জুনিয়রও)। বিচারপতি শ্যামল কুমার সেন কিংবা পিয়ারলেসের সুনীলকান্তি রায়ের লেখা ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছে সংকলনটির। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সাবেক প্রশাসকরা কিংবা তাদের উত্তরসূরিরা হাজির তাঁদের লেখার পসরা নিয়ে। সুরেশ চৌধুরি, জ্যোতিষ গুহ, ডাঃ নৃপেন দাস কিংবা পল্টূ দাসের উত্তরসরিরা জানিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ক্লাবের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্কের কথা। জীবিতদের মধ্যে অজয় শ্রীমানী থেকে সুপ্রকাশ গড়গড়ি, পার্থ সেনগুপ্ত, মানস মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ ভট্টাচার্য, বাবলু গাঙ্গুলি কিংবা সদ্যপ্রয়াত সোমেন মিত্ররা জানিয়েছেন তাঁদের নানা আভিজ্ঞতার কথা। আর ক্লাবে সঙ্গে যাঁর নাম এখন সমার্থক শব্দ সেই দেবব্রত সরকারের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি যেন ইস্ট বেঙ্গলের গত চল্লিশ বছরের চলন্ত ইতিহাস।
সাংবাদিকদের তালিকাটাও দীর্ঘ। আশোক দাশগুপ্ত, কিশোর ভিমানি, রূপক সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য, মানস চক্রবর্তী, জয়ন্ত চক্রবর্তী, অরুণ সেনগুপ্ত, রাতুল ঘোষ, দেবাশিস দত্ত, জয় চৌধুরি, অনিন্দ্য জানা, অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়, নোভি কাপাডিয়া, পুলকেশ মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব দাশগুপ্ত—বাদ যাননি কেউই। পাতায় পাতায় ছবি, যার বেশিরভাগই ইতিহাস থেকে তুলে আনা বইটিকে শুধু অমূল্যই নয়, অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য করে তুলেছে। আর পরিসংখ্যানের কথা যদি বলা যায় তাহলে এটা পাশে থাকলেই টাটকা একশো বছরের ইতিহাস। এ রকম সংকলন কলকাতা ময়দানের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল সংযোজন।