Written By দীপঙ্কর গুহ
কেমন চলছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড? আইপিএল -১৩ আয়োজন করার জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে প্রস্তুতি। আজ রবিবার, আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের ভার্চুয়াল সভা বিকেল ৫টায়। তারপর সোমবার আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বসতে চলেছে বোর্ড কর্তারা। ইতিমধ্যে আইপিএলের টিভি স্বত্বাধিকারী স্টার ইন্ডিয়ার এবছরের মোট চুক্তি অর্থের ৫০% অর্থাৎ ২০০০ কোটি টাকা চলে এসেছে বোর্ডের কোষাগারে। অথচ প্রায় ছ'মাসের উপর হতে চলল রাজ্য সংস্থাগুলো প্রাপ্য কোটি -কোটি টাকা না পেয়ে দরবার করেই চলেছে। আর তারই মাঝে জানা গেল, বোর্ডের তিনটি গ্রেডের ক্রিকেটাররাও নাকি প্রায় ১০ মাস ধরে বেতনই পাচ্ছেন না!!
সকলেই জানে যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের টাকার অভাব নেই। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড বলে এত হাঁকডাক । কিন্তু ভারতীয় তারকা ক্রিকেটাররাই নাকি ১০ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না! এ ছাড়া কিছু টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ম্যাচ ফি এখনো দেওয়া হয়নি কোহলিদের। বিসিসিআইয়ের কাছে ক্রিকেটারদের প্রায় ৯৯ কোটি টাকা এখনও পাওনা!
বিরাট কোহলিরা গত বছর অক্টোবরের পর থেকে বেতন পাচ্ছেন না। সেপ্টেম্বরেই বোর্ডের বার্ষিক সভা হয়। সভাপতি হয়ে সৌরভ এন্ড কোম্পানি দায়িত্ব নেই। তারপরও এই জট! জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরের পর ২টি টেস্ট, ৯টি ওয়ানডে ও ৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে ভারত। এই ম্যাচগুলোর ম্যাচ ফি এখনও বকেয়া ক্রিকেটারদের। মোট ২৭ জন চুক্তিবদ্ধ তারকা ক্রিকেটার বোর্ডের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না।
এই ঘটনা অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডে, এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের সঙ্গে হলে- সেই দেশের ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যেত। ভারতে সদ্য ৯ মাসে তৈরি হওয়া ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার্সদের কোনো দাবি-দাওয়াই বোর্ডের সভার এজেন্ডাতেই ঠাঁই পায় না। বোর্ডের বাইরে থাকলেও মহা শক্তিমান এই প্রাক্তন পদাধিকারী চানই না সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত এই আইসিএকে পাত্তা দিতে। ফলে এখনকার বোর্ড কর্তারাও ওঁদের কথা শুনিয়ে সবকিছু অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
কেন এমন হাল? এ নিয়ে জানতে সভাপতি সৌরভ এখন আর মন্তব্য করতে পারবেন না। ২৬ জুলাই তিনি টানা ছ'বছরের কার্যকাল শেষ করেছেন। জুন মাসে শেষ হয়ে গেছে সচিব জয় শাহের মেয়াদ। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি আছে সৌরভ-জয়দের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে।
তাই এ ব্যাপারে জানতে বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধুমালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু ফোন কিংবা মেসেজে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বোর্ডের সিইও পদত্যাগ করেছেন। ক্রিকেট অপারেশন ম্যানেজারও দায়িত্ব ছেড়েছেন। মহিলাদের জাতীয় নির্বাচন কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নয়া কমিটিও গড়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র ভারতীয় ক্রিকেটার বলেছেন, " আমরা এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না। কেন্দ্রীয় চুক্তির নতুন তালিকা প্রকাশের পর থেকে কোনো খবর নেই। চার ধাপে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দেওয়া হতো এতোদিন । কিন্তু এখন আমরা জানি না কখন পারিশ্রমিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসবে। কেউ কিছুই জানি না। শুনেছিলাম ফেব্রুয়ারির নিউজিল্যান্ড সিরিজের পারিশ্রমিকের অর্থ আসতে পারে। কিন্তু এখনো সেই টাকা আসেনি।"
জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছাড়াও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও বয়সভিত্তিক দলগুলোর ক্রিকেটাররাও বেতন পাচ্ছেন না। নতুন মরশুম চলে আসছে, কিছু কিছু রাজ্য দলের ক্রিকেটাররা নাকি এখনো গত মরশুমেরই সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক পাননি। এখনকার নিয়মে ক্রিকেটারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠায় বোর্ড। তিনটি গ্রেডের ক্রিকেটারদের সব মিলিয়ে ৯৯ কোটি টাকা মাস মাহিনা আটকে আছে। ভারতের এ+ গ্রেডে থাকা তিন ক্রিকেটার- বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও জসপ্রিত বুমরা বছরে ৭ কোটি টাকা পান। এ, বি আর সি গ্রেডের ক্রিকেটাররা পান যথাক্রমে-৫ কোটি, ৩ কোটি ও ১ কোটি টাকা করে। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ম্যাচ ফি ধরা আছে ১৫ লাখ, ৬ লাখ ও ৩ লাখ টাকা ম্যাচ পিছু।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতন বোর্ডের ওয়েবসাইটে আর্থিক লেনদেনের হিসাব দেখাতে হয় এখন। ২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে বিসিসিআইয়ের ব্যাংক হিসাবে ৫ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা আছে। ২ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে রাখা। এছাড়া টিভি স্বত্বের চুক্তি মাফিক অর্থ আছে।
তাহলে কয়েক হাজার কোটি টাকার " ধনী" বিসিসিআইয়ের এমন করুণ দশা কেন! কেন বঞ্চিত ক্রিকেটাররা?