Written By অনিরুদ্ধ সরকার
ডিজিটাল শিক্ষার যুগে এক শিক্ষক যখন গরীব পড়ুয়াদের কথা ভেবে পড়াচ্ছেন ব্ল্যাকবোর্ডে! স্কুল তাকে বলেনি। সরকার তাকে দায়িত্ব দেয় নি। রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা তাকে পড়াতে বলেন নি। শিক্ষক সংগঠনের উপদেশ নিয়ে নাম কিনতে তিনি পড়াতে যান না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটা করে তার ছবি বা ভিডিও ভাইরাল হোক সেকারণেও তিনি পড়ান না। তিনি পড়ান মূল্যবোধের তাগিদে। শিক্ষক মানেই তো তাই। কিন্তু কয়েক দশকে বাংলায় এই ভাবনা বদলেছে। তাই ভাবতে একটু কষ্ট হয়।
ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েরা খাতা বই নিয়ে চলেছে পড়তে! অনলাইন ক্লাসের ডিজিটাল শিক্ষা , টিভি চ্যানেলে কর্পোরেট প্রাইভেট শিক্ষাকে যখন সবাই মেনে নিয়েছেন সে সময় এই পড়ুয়ারা কোথায় যাচ্ছে ব্যাগ কাঁধে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনার দুমকার ডুমারথর গ্রামে চলছে এক অভিনব শিক্ষাদান পদ্ধতি। সেখানেই দলে দলে চলেছে এই ক্ষুদে পড়ুয়ারা। গ্রামের দেওয়ালে আঁকা প্রাচীন ব্ল্যাকবোর্ডে শিক্ষাদান সমানে টেক্কা দিয়েছে অনলাইন শিক্ষাকে। এই শিক্ষাদান পদ্ধতি চমকে দিয়েছে সারা দেশকে।
ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার জারমুন্ডি ব্লকের ডুমারথর গ্রামের মাটির ঘরের দেওয়ালে আঁকা হয়েছে সারি সারি ব্ল্যাকবোর্ড। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তার সামনে বসে পড়ুয়ারা করছেন ক্লাস। ওই ব্ল্যাকবোর্ডগুলিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের শেখানো প্রশ্নের উত্তর লিখছেন। অনলাইন 'শিক্ষা'বাজারের যুগে গরীব ছাত্রছাত্রীদের এভাবেই পড়াচ্ছেন স্কুল শিক্ষক ডাঃ স্বপন কুমার। তিনি একটি কমিউনিটি লাউড স্পিকার হাতে রেখে গরীব শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। ২০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী এই বিশেষ ক্লাসে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন প্রতিদিন। শিক্ষক স্বপন কুমার জানিয়েছেন, "পরপর জুড়ে থাকা কয়েকটি মাটির বাড়ির দেওয়ালে আঁকা হয়েছে বেশ কিছু কালো বোর্ড। ঠিক যেমন ব্ল্যাক বোর্ড থাকে স্কুলের দেওয়ালে। শিক্ষার্থীদের পড়া বলে দেওয়া হচ্ছে। বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে । বোর্ডে লিখে দেওয়া হচ্ছে । পড়ুয়ারাও উত্তর লিখছে সেখানে। লাউড স্পিকার ব্যবহার করা হচ্ছে পড়া বোঝাতে।" করোনা আবহে, অনলাইন পড়াশোনার সুযোগ না পাওয়া গ্রামের শিশুদের এভাবেই পড়াশোনার পাঠ দিচ্ছেন শিক্ষক।
করোনায় অনলাইন স্কুলকে টেক্কা দিচ্ছে এই ব্ল্যাকবোর্ড। এই পড়াশোনার ছবি তাক লাগিয়ে দিয়েছে সারা দেশের মানুষকে। করোনা মহামারিতে, শহরের বাচ্চারা যখন বাড়ি বসে অনলাইনে পড়াশোনা করছেন। তা নিয়েও হাজার অভাব অভিযোগ, তখন প্রত্যন্ত গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষার কথা ভেবেছেন এই শিক্ষক। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন বাঙালি শিক্ষককূলের বসে বসে বেতন নেওয়া নিয়ে একশ্রেণীর মানুষ নিয়মিত কটাক্ষ করে চলেছেন তখন পাশের রাজ্যের এক শিক্ষকের এই অভিনব শিক্ষাদান পদ্ধতি কার্যত এরাজ্যের শিক্ষকসমাজকে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছেন বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
অনলাইনে ক্লাসের যুগে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের বাচ্চারা স্বপন স্যারের ক্লাসে যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত। অনলাইনে পড়াশোনা করার মত যাদের অবস্থা নেই, তাদের ভরসা আজও এই ব্ল্যাকবোর্ড। এও যেন এক মূল্যবোধের শিক্ষা!
22nd April, 2021 09:51 pm
22nd April, 2021 07:31 pm
22nd April, 2021 06:50 pm
22nd April, 2021 05:49 pm