Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর স্টিভ স্মিথের উল্লাস। শুক্রবার সিডনিতে।
পঞ্চাশ ওভারে ৩৭৫ রান তুলতে গেলে ইনিংসের শুরুতে দরকার হয় একটা বড় পার্টনারশিপ। কিন্তু বিরাট কোহলিদের সেটাই হল না। প্রথম উইকেটে মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং শিখর ধওয়ান ৫৩ রান তোলার পরেই শুরু হল পতন। প্রথমে ফিরলেন মায়াঙ্ক (২২)। তারপর স্কোর বোর্ডে ১০১ রান উঠতে না উঠতেই একে একে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন বিরাট কোহলি (২১). শ্রেয়স আয়ার (২) এবং কে এল রাহুল (১২)। সিডনিতে প্রথম এক দিনের ম্যাচে ভারতের জয়ের আশা তখন্ই শেষ হয়ে যায়। পরে অবশ্য হার্দিক পান্ডিয়া (৭৬ বলে ৯০) এবং শিখর ধওয়ান (৮৬ বলে ৭৪) পঞ্চম উইকেটে ১২৮ রান তুলে ভারতের জয়ের আশা খানিকটা জিইয়ে রাখেন। তবে ওদের দুজনের বিদায়ের পর জেতানোর মতো লোক ছিল না। তাই পঞ্চাশ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ৩৭৪-৬ এর জবাবে ভারত ৩০৮-৮ তুলে সিডনিতে প্রথম এক দিনের ম্যাচে ৬৬ রানে হেরে গেল।
সিডনির উইকেট ছিল রানে ভরা। এই নিয়ে গত আটটি ম্যাচে প্রথম ব্যাট করা সাতটি দলই জিতল। সঙ্গত কারণেই অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ টস জিতে ব্যাটিং নেন। এবং ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে প্রথম উইকেটে ম্যাচের সুরটা তৈরি করে দেন। ভারতীয় বোলারদের যথেচ্ছ ঠেঙিয়ে দুজনে মিলে প্রথম উইকেটে তোলেন ১৫৬ রান। এর মধ্যে ওয়ার্নার করেন ৭৬ বলে ৬৯ রান, যাতে ছিল ছয়টি বাউন্ডারি। এর পর স্টিভ স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে ফিঞ্চ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন ইনিংসকে। এবং তারই মধ্যে ফিঞ্চ নিজের সেঞ্চুরিটি করে ফেলেন। ১২৪ বলে করা তাঁর ১১৪ রানে ছিল নয়টি বাউন্ডারি এবং দুটি ওভারবাউন্ডারি। ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে ছিলেন মহম্মদ শামি। ফিঞ্চকে তুলে নেন যশপ্রীত বুমরা। দ্বিতীয় উইকেটে ফিঞ্চ এবং স্মিথ জোড়েন ১০৮ রান।
ফিঞ্চ যখন আউট হন তখন স্মিথ সেঞ্চুরি থেকে একটু দূরে। এবং এরই মধ্যে তিনি দেখলেন মার্কাস স্টয়নিস (০) এলেন ও গেলেন। তবে আই পি এল-এ ব্যর্থ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিন্তু খুবই ভাল ব্যাটিং করলেন। মাত্র ১৯ বলে ৪৫ করলেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর বিদায়ের পর মার্নাস লাবুশানেও বেশিক্ষণ টেকেননি। দুই বলে দুই করে নভদীপ সাইনির শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। তবে তাতে আটকানো যায়নি স্মিথের সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৬৬ বলে ১০৫ রান করে শামির বলে বোল্ড হন তিনি। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল এগারোটি চার ও চারটি ওভারবাউন্ডারিতে। তাঁকে ম্যাচের সেরা বাছা ছাড়া উপায় ছিল না। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মহম্মদ শামি (৩-৫৯)। তবে প্রচুর রান দিলেও উইকেট পেয়েছেন যশপ্রীত বুমরা (১-৭৩), নভদীপ সাইনি (১-৮৩) এবং যজুবেন্দ্র চহাল (১-৮৯)। তবে দশ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি রবীন্দ্র জাডেজা।
শেষ পর্যন্ত ভারতকে জেতাতে না পারলেও চমৎকার ব্যাটিং করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি যখন ক্রিজে আসেন ভারত তখন ১০১ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। সিনিয়র পার্টনার শিখর ধওয়ানকে সঙ্গী করে পাল্টা লড়াইটা অজি শিবিরে পৌছে দেন হার্দিকই। ৭৬ বলে ৯০ রান করার পথে মেরেছেন সাতটি চার এবং চারটি ছয়। এবং এরই মধ্যে পেরিয়ে গেলেন এক দিনের ক্রিকেটে এক হাজার রান। আসলে ২২৯ রানের মাথায় শিখর ধওয়ান আউট হয়ে গেলে হার্দিক বেশি ঝুঁকি নিতে যান। সেটাই তাঁর পতন ডেকে আনে। পরিস্থিতি বুঝে শিখর স্বভাববিরোধী ব্যাটিং করেন। তাঁর ৮৬ বলে ৭৪ রানে কোনও ওভারবাউন্ডারি নেই। আছে শুধু দশটি বাউন্ডারি। শিখর এবং হার্দিক যখন ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছেন তখন তাঁদের দুজনকেই ফিরিয়ে দেন আ্যাডাম জাম্পা। এর সঙ্গে কে লে রাহুল এবং রবীন্দ্র জাডেজাকেও (৩৭ বলে ২৫) তুলে নেওয়ায় তাঁর বোলিংই সবচেয়ে ভাল হয়। ৫৪ রানে চার উইকেট নিয়েছেন তিনি। শেষ দিকে চালিয়ে খেলে ৩৫ বলে নভদীপ সাইনির ৩৫ বলে ২৯ কোনও কাজে আসেনি। বিরাট কোহলির উইকেটসহ তিন উইকেট নিয়েছেন জস হ্যাজেলউড (৩-৫৫)। মিচেল স্টার্ক (১-৬৫) উইকেট পেলেও প্যাট কামিংসের হাত শূণ্য (০-৫২)।
সিরিজ তিন ম্যাচের। ভারত প্রথম ম্যাচ হারল। এখনও সিরিজ জয়ের সুযোগ আছে। রবিবার সিডনিতেই দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচ এবং ২ ডিসেম্বর ক্যানবেরাতে জিতে সিরিজ পেতে হলে বিরাট কোহলিকে রান পেতে হবে। কোহলি বড় রান না পেলে ভারতের সিরিজ জয়ের আশা করা বৃথা।