Written By দীপঙ্কর গুহ
২১। একুশ। একটি সংখ্যা। এই ২১ এর গেঁড়োয় ফেঁসে গেছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। কয়েকদিন আগে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছিল এআইএফএফ সব রাজ্য সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, কেন ২১ ডিসেম্বর সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা করা যাচ্ছে না। এক সপ্তাহের মধ্যে ২১টি অনুমোদিত সংস্থার থেকে অন্য চিঠি পৌঁছে গেছে দিল্লিতে ফেডারেশনের সদর দফতরে। এআইএফএফের মোট অনুমোদিত সংস্থা এখন-৩৬। তার থেকে ২১ টি অন্য সুরে চাপে ফেলে দিল প্রফুল্ল প্যাটেল ব্যাটেলিয়নকে। তাঁদের সকলের দাবি, ২১ এই চাই বার্ষিক সাধারণ সভা।
এই সভা কেন আপাতত বাতিল হবে সেটা সরাসরি আলোচনায় ঠিক হোক। সেই আলোচনার দিনক্ষণ জানাক ফেডারেশন। ফেডারেশনের বর্তমান এক্সিকিউটিভ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২১ ডিসেম্বর। সংস্থার সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেল তিনবার টানা ১২ বছর এই পদে আছেন। ২০১১ সালের স্পোর্টস কোডের নিয়মানুযায়ী প্রফুল্ল প্যাটেল সমেত কমিটিকে সরতে হবে। আরও চারবছর কোনও পদে বর্তমান সভাপতি প্যাটেল থাকতে পারবেন না।
২১ টি সংস্থার পাঠানো বয়ান বিভিন্ন রকমের হলেও, মোদ্দা দাবি একটি। বার্ষিক সাধারণ সভায় সংস্থার আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চাই। একটু পিছন দিকে ফিরে তাকানো যাক। ২০১৭ সালে দিল্লির পরিচিত আইনজীবী রাহুল মেহেরা জনস্বার্থবিরোধী মামলা করেন দিল্লি হাই কোর্টে। সেইসময় বলা হয়েছিল, ২০১৬ ডিসেম্বর মাসে ফেডারেশনের বার্ষিক সাধারণ সভা নাকি ২০১১ স্পোর্টস কোড না মেনে হয়েছিল। যা বেআইনি। শুনানির পর প্রফুল্ল প্যাটেল এবং কমিটিকে বাতিল করে দিয়েছিল দিল্লি হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে এই আইনি লড়াই পৌঁছলে, প্যাটেলদের আবার দায়িত্বে বহাল করা হয়। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি এবং প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গড়ে দেয় মহামান্য আদালত। এই কমিটির দায়িত্ব ছিল, সরকারি স্পোর্টস কোড মেনে ফেডারেশনের নয়া সংবিধান বানানোর। সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল আট সপ্তাহ। কিন্তু সেই সময়সীমা পেড়িয়ে যায়। তবে হালে কুরেশি দাবি করেছেন, নতুন সংবিধানের বয়ান জমা দেওয়া হয়ে গেছে চলতি বছরের শুরুতে।
ফেডারেশনের থেকে এই রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি দাবি করে অনুমোদিত সংস্থার কাছে চিঠি যায়। এই চিঠি পেয়ে ফুটবল ফেডারেশনের একাধিক সংস্থা ক্ষুব্ধ। বাংলার আইএফএ এই দলে নেই। তাদের থেকে কোনও চিঠি যায়নি। রাজ্য সংস্থার চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত এখন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি। প্রফুল্ল প্যাটেলের পর বাংলার এই প্রতিনিধির ফেডারেশন সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফুটবল মহলের ধারণা, তাই বিতর্ক এড়াতে আইএফএ ২১ এর দলে নাম লেখালো না। পূর্বাঞ্চল থেকে অসম,অরুণাচল, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা এবং ছত্রিশগড় এই ২১ এর দলে আছে। এছাড়া দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক, কেরল এবং আরো অনেকে।
এইসব সংস্থার কর্তাদের একাংশ অবাক নির্বাচনের এক মাস আগে কেন ফেডারেশন সুপ্রিম কোর্টে দরবার শুরু করলো? আরও অনেক আগে হতে পারতো। কমিশন নয়া সাংবিধানিক খসড়া দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল। তবুও এতোদিন নীরবতা কেন? প্রশ্ন উঠেছে, আবার নির্বাচনকে আটকাতেই কি এই ছক? স্পোর্টস আইনে পারদর্শী এক কর্তা জানালেন, নির্বাচন আটকে যাওয়ার পর আদালত যদি কোনও অ্যাডহক কমিটি বসিয়ে সংস্থা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়-তাহলে নাকি ফিফা ব্যান করতে পারে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে।
ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের নয়া খসড়া প্রস্তুত নয়। অথচ কুরেশি দাবি করেছেন, তা তৈরি হয়ে গেছে ২০১৯ ডিসেম্বরে। তাঁদের সাহায্য করা আইনজীবী ২০২০'র জানুয়ারিতে মুখবন্দ করা খাপে আদালতের নির্দেশমতন জমা দিয়ে দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের একটি পক্ষ পাল্টা দাবি জানিয়েছে, কুরেশির এতো দেরিতে কেন তা জমা দিলেন? সূত্রের খবর, খসড়া সংবিধানে নাকি সংস্থায় পেশাদারদের সংযুক্তিকরনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।