Written By মানস চক্রবর্তী
অ্যাডাম লে ফন্ড্রে : ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে জোড়া গোল। মঙ্গলবার গোয়ায়।
মুম্বই সিটি এফসি— ৩ এস সি ইস্ট বেঙ্গল—০
(অ্যাডাম লে ফন্ড্রে-২, হের্নান সান্তানা)
সকাল দেখেই বেশিরভাগ সময় বোঝা যায় যে বাকি দিনটা কেমন যাবে। সাত মিনিটের মাথায় চোট পেয়ে ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক এবং রক্ষণের স্তম্ভ ড্যানিয়েল ফক্স বসে যেতে বাধ্য হলেন। তখনই আশঙ্কা করা গিয়েছিল, রাতটা ভাল যাবে না লাল হলুদের। বাস্তবিক হলও তাই। রবি ফাউলারের টিমকে উড়িয়ে দিয়ে মুম্বই সিটি এফ সি শুধু জিতলই না, ইস্ট বেঙ্গলের মনোবলটাকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে গেল। পর পর দুটো ম্যাচে হার। মঙ্গলবার আবার তিন গোলে। আই এস এল-এর শুরুটা খুব খারাপ হল। টিম গড়া হয়েছে দেরিতে। সেভাবে প্র্যাক্টিস হয়নি। এসব যুক্তি আর বেশিদিন লোকে গ্রহণ করবে না। আরে টিমটার নাম তো ইস্ট বেঙ্গল! রোজ রোজ হার দেখতে আর কাঁহাতক ভাল লাগে!
কুড়ি মিনিটের মধ্যে প্রথম গোল খেয়ে যায় ইস্ট বেঙ্গল। বিরতির পর ফিরে আসা তো দূর অস্ত। আরও গোল খেতে হল। ইস্ট বেঙ্গল টিমটাকে দেখলে মনে হচ্ছে মাধ্যমিক পাস করা ছাত্রকে এম এ ক্লাসের পরীক্ষায় বসানো হয়েছে। মুম্বই সিটি এখন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির শাখা ক্লাব। ই পি এল-এর নীল ম্যাঞ্চেস্টারের মতোই জার্সি তাদের। আর পেপ গুয়েরদিওলার ছেলেদের মতোই এদিন প্রেসিং ফুটবল খেলল সের্গেই লেবেরার ছেলেরা। এই কোচই গত বছর এফ সি গোয়াকে আই এস এল-এর লিগ পর্বের পর এক নম্বরে রেখেছিলেন। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আগেই তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় কর্তৃপক্ষের। দল ছেড়ে চলে যান তিনি। এবং এ বছর এসেছেন পড়শি ক্লাবের কোচ হয়ে। কিন্তু গোয়ার সেরা ফুটবলারদের নিয়ে এসেছেন। শুরু থেকেই ম্যাচের উপর জাঁকিয়ে বসে মুম্বই। বল পসেসনে ইস্ট বেঙ্গলকে অনেক পিছনে ফেলে দেয় তারা। ইস্ট বেঙ্গল মাঝমাঠে বল ধরে খেলার চেষ্টা করলেও মুম্বইয়ের ছেলেরা তাদের সে সুযোগ দেয়নি। আর চোখ মেলে দেখতে হল, ইস্ট বেঙ্গল খেলাটাকে ছড়াতেই পারেনি। উইং প্লে বলে যে একটা ব্যাপার আছে তা তাদের খেলা দেখে বোঝা যায়নি। দূর থেকে দু একটা শট নিয়েছেন বটে মহম্মদ রফিকরা। মুম্বই গোলকিপার অমরিন্দরকে হারাবার পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল না।
বরং গোল খাওয়ার আগে দেবজিৎ একটা নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছিলেন। জোড়া গোলের মালিক আ্যাডাম লে ফন্ড্রের গোলমুখী শট তিনি চাপড়ে বের করে দেন। কিন্তু কুড়ি মিনিটে আর পারেননি পতন রুখতে। একটা কর্নার পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। সেখান থেকে একটা লুজ বল পেয়ে রাওলিন বোর্জেস একটা লম্বা পাস বাড়ান হুগো বৌমনসকে। ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সকে বেআব্রু করে বৌমনস একদম প্লেটে করে বল সাজিয়ে দেন আ্যাডামকে। চার গজের মধ্যে থেকে বাইরে মারা সম্ভব হয়নি অ্যাডামের। এই সময় মনে হচ্ছিল ড্যানি ফক্সের চোট পাওয়াটা একদম শুইয়ে দিয়ে গেছে ইস্ট বেঙ্গলকে।
বিরতির পর লাল হলুদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। ফরোয়ার্ডে বলবন্ত, মাঝ মাঠে সুরচন্দ্র, মহম্ম্দ রফিকদের মতোই দুরবস্থা মাট্টি স্টেইনম্যান, জাক মাঘোমার। আর অ্যান্টনি পিলকিংটনের অবস্থা আরও খারাপ। না সামনে, না পিছনে কোথায় যে যাবেন বুঝে উঠতে পারেননি। স্কট নেভিল সাইড ব্যাকের জায়গা ছেড়ে সেন্ট্রাল ব্যাক হয়ে যান। কিন্তু তাঁর দু পাশে মহম্মদ ইর্শাদ এবং নারায়ন দাস কহতব্য নয়। ফল যা হওয়ার তাই হল। ৪৮ মিনিটেই দ্বিতীয় গোল খেয়ে যায় ইস্ট বেঙ্গল। অ্যাডাম লে ফন্ড্রে গোটা ডিফেন্সকে কাটিয়ে গোল করার মুখে তাঁর পায়ে পড়ে ফেলে দেন দেবজিৎ। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল হয়নি আ্যাডামের। দশ মিনিট পরেই তৃতীয় গোল। ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে গোল করে চলে যান হের্নান সান্তানা।
টুর্নামেন্টে খেলতে হয় কুড়িটা ম্যাচ। ম্যারাথন টুর্নামেন্টের এখনও অনেক বাকি। তাই ইস্ট বেঙ্গলের আশা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সকাল যদি দিনের নির্দেশ দেয় তাহলে বলতেই হচ্ছে এই সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার।