Written By মানস চক্রবর্তী
ওড়িশা এফ সি-র বিরুদ্ধে গোল করার পর রয় কৃষ্ণের উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার গোয়ায়।
এটিকে মোহনবাগান-১ ওড়িশা এফ সি-০
(রয় কৃষ্ণ)
রাখে কৃষ্ণ মারে কে? গোল করলে কৃষ্ণ, মোহনবাগানের জেতা আটকায় কে? যে ম্যাচে তাদের এক পয়েন্ট নিয়ে ফেরার কথা, সেই ম্যাচটাই রয় কৃষ্ণের গোলে জিতে তিন পয়েন্ট নিয়েই ঘরে ফিরল মোহনবাগান। পর পর তিন ম্যাচ জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক করে আন্তোনিও হাবাসের দল ক্রমশ এগিয়ে চলেছে প্লে অফ-এর দিকে। এদিন যেমন গোলটা এল ৯৫ মিনিটে। এই গোলটার জন্য যেমন কৃতিত্ব দিতে হবে কৃষ্ণকে, তেমনই মোহনবাগানের বাকি প্লেয়ারদেরও প্রশংসা করতে হবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা চেষ্টা করে গেছে গোল করার। এবং অবশেষে সফল হয়েছে। এটাই চ্যাম্পিয়নদের খেলা। আর এটাই চ্যাম্পিয়ন্স লাক। যেটা এবার মনে হচ্ছে মোহনবাগানের সঙ্গে রয়েছে। গোল করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে এবং ওড়িশার কড়া ডিফেন্সের সামনে আটকে যেতে যেতে অবশেষে মোহনবাগান সেই ডিফেন্সটা ভেঙে ফেলল। পর পর তিনটে ম্যাচে গোল করে ফিজি স্ট্রাইকার কৃষ্ণ জানিয়ে দিলেন গত বারের টপ স্কোরারের বুট জোড়া এবারও তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। সঙ্গত কারণেই ম্যাচের সেরা ফুটবলার তিনিই।
৯৪ মিনিটে সেন্টার সার্কলের একটু আগে ফ্রি কিক পেয়েছিল বাগান। তিরি বলটা ভাসিয়ে দিলেন বক্সের মধ্যে। একটু ডান দিকে। সন্দেশ ঝিঙ্গন বলটা নামিয়ে দিলেন রয় কৃষ্ণের জন্য। পঁচানব্বই মিনিট ধরে গোলের জন্য ঘুর ঘুর করতে থাকা কৃষ্ণ হেড করে বলটা পাঠালেন গোলে। কমলজিৎ একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বল পজেশনে মোহনবাগান টেক্কা দিলেও ওড়িশা কিন্তু সারাক্ষণ কোমর বেঁধে পাল্লা দিয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তের গোলে তারা কার্যত ভেঙে পড়ে। মাঠের মধ্যেই কাঁদতে কাঁদতে শুয়ে পড়তে দেখা যায় একাধিক প্লেয়ারকে। এই কান্না তাদের প্রাপ্য ছিল না।
ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে যে টিম নামিয়েছিলেন হাবাস তার থেকে একটি পরিবর্তন করেন। ডার্বিতে গোল করার পুরস্কার হিসেবে মনবীর সিংকে প্রথম একাদশে নামা তিনি। তবে মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে ওড়িশা কিন্তু শুরু থেকেই কোমর বেঁধে নামে। বল পজেশনে তারা পিছিয়ে থাকলে কী হবে আক্রমণে কোনও খামতি ছিল না। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলিনহো সারাক্ষণই মাঝ মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর পাশে জামশেদপুর ম্যাচে জোড়া গোলের মালিক আরেক ব্রাজিলিয়ান দিয়েগো মরিসিও সেভাবে সচল হলে ওড়িশার আক্রমণ আরও জোরদার হত। তবে প্রথমার্দ্ধের সেরা সুযোগটা এসেছিল ওড়িশার সামনেই যা থেকে গোল না হওয়া অপরাধই বলা যায়। মার্সেলিনহোর কর্নার কোল অ্যালেকজান্ডার ক্রস করে একেবারে সাজিয়ে দেন জ্যাকব ট্রেটের জন্য। ছয় গজের মধ্যে ফাঁকা গোল। কিন্তু জ্যাকব বাইরে হেড করলেন। রয় কৃষ্ণের পাশে মনবীরকে সেভাবে নজরে পড়ল না। বিরতির একটু আগে বক্সের মধ্যে সুবিধেজনক জায়গায় হেড করার মতো জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণ। কিন্তু তাঁর হেড অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যায়।
মোহনবাগানের বিখ্যাত মাঝমাঠ এবং বিপজ্জনক ফরোয়ার্ড লাইনকে সামলানোর জন্য স্টুয়ার্ট ব্যাক্সটার জোনাল মার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে পারেনি মোহনবাগান। সারা ম্যাচে ওড়িশা গোলকিপার কমলজিৎ সিংকে তেমন কঠিন বল ধরতে হয়নি। একেবারে শেষ মুহুর্তের গোলটি খাওয়া ছাড়া। তবে ৮২ মিনিটে তাঁকে এড়িয়ে একটি শট গোলে ঢোকার মুখে গোল লাইন থেকে ক্লিয়ার করেন অধিনায়ক স্টিভেন টেলর। আসলে দ্বিতীয়ার্দ্ধের মাঝামাঝি চোট পেয়ে মার্সেলিনহো বসে যাওয়ায় ওড়িশার আক্রমণের ঝাঁঝটা কমে যায়। তাও তারা প্রায় ছিনিয়ে নিচ্ছিল একটা পয়েন্ট। কিন্তু গোল করলে কৃষ্ণ মোহনবাগানের জেতা আটকায় কে?