Written By শাহিদুল হাসান খোকন
অবশেষে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করার শুরু। মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৪২ জনকে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথম জাহাজটি চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরকে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ঘিরে পশ্চিমি দুনিয়ার ভূ-রাজনৈতিক খেলা বন্ধের পাশাপাশি, গতি আসবে মায়ানমারে স্থায়ী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায়।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে রোহিঙ্গাদের জাহাজে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মালপত্রও জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। রাতে তাঁদের রাখা হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী রেডি রেসপন্স বাথ জেটি ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রান্সজিট ক্যাম্পে।
এদিকে অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। তবে নানা বাস্তবতায় সেটি পিছিয়ে যাচ্ছিল। স্বেচ্ছায় যারা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁদের পাঠানোর মাধ্যমেই এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রমকে ঘিরে ভাসানচর দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে মজুত করা হয়েছে প্রায় ৭০ টন খাদ্যসামগ্রী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক একটি এনজিওর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বার বার অভিযোগ উঠেছে এনজিওদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা ভাসানচর যাচ্ছে না। তাই এবারের যাত্রায় কোনো এনজিও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে নয়।’
রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেওয়ার আগে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শন করে সরকারের পরিকল্পিত আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তাঁরা।
নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। তাঁরা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হন। পরে ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন।