Written By দীপঙ্কর গুহ
বিশ্বাস করুন এমনটা হবে ভাবিনি। মাঠে ফুটবল পায়ে রাজপুত্রকে দু'চোখ মেলে দেখেছি। কিন্তু সেই মারাদোনা চলে গেছেন - কিন্তু এ কী চলছে!! এখনই? দেশ শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু মারাদোনার সম্পত্তি নিয়ে আইন-আদালতে দরবার এখনই?
চোখ-ধাঁধানো ফুটবল খেলেছেন দিয়েগো মারাদোনা। খেলেছেন আর বিপুল অর্থ রোজগার করেছিলেন। মালিক ছিলেন বহু বাড়ির। লোভনীয় প্রচারস্বত্ব থেকে শুরু করে বেলারুশ থেকে পাওয়া চিত্তাকর্যক বহু সম্পত্তির মালিক মারাদোনা। গুগলে মারাদোনা লেটেস্ট নিউজ লিখে সার্চ করলে এক বিচিত্র এক বিষয় হতবাক করেছে। সবে দশদিনও হয়নি ৬০ বছর বয়সে মারা গেছেন মারাদোনা। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে মারাদোনা যে অর্থ-সম্পদ রেখে গেছেন - তার উত্তরাধিকার নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে! মারাদোনার ব্যক্তিগত জীবনে বহু নারীর আসা-যাওয়া, এবং তাদের গর্ভজাত সন্তানদের কারণেই নাকি সৃষ্টি হতে পারে এই জটিলতা। কাজেই তিনি মারা যাবার সাথে সাথে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ কত এবং ঠিক কতজন তাঁর উত্তরাধিকারের দাবিদার হবেন - তা নিয়ে।
মারাদোনার সন্তান ক'জন? আটটি সন্তান, নাকি আরো বেশি? মারাদোনার ছিল এক বিশাল পরিবার। বিভিন্ন তথ্য ঘাঁটলে খবর মিলছে--ছয়জন নারীর সাথে কয়েক দশক ধরে রোমান্টিক সম্পর্কের সূত্রে তাঁদের গর্ভে কমপক্ষে আটটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর সম্পত্তি এই সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আর্জেন্টিনার আইন বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিকরা নানান সংবাদ মাধ্যমে বলছেন, মারাদোনা কোনো উইল করে গেছেন বলে এখনও জানা যায়নি। তাই তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ঠিক করাটা কোনো সহজ-সরল ব্যাপার হবে না। জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না। প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে- মারাদোনার এই সন্তানেরা কারা? একজন সফল ফুটবলার হিসেবে ম্যারাডোনার জীবন ছিল নানান ঘটনায় ভরা। চাকচক্যে ভরা। আর নানা নারীর গর্ভে মারাদোনার সন্তান জন্মের খবর ছিল সেই জীবনের একটা নিয়মিত ঘটনা। মারাদোনার এক কন্যা একবার ঠাট্টা করে বলেছিলেন, তাঁর বাবার সন্তানের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে পুরো একটা ১১ জনের ফুটবল দল হয়ে যাবে। মারাদোনা নিজে অনেক দিন ধরেই দাবি করে এসেছিলেন, তাঁর প্রথম স্ত্রী ক্লডিয়া ভিলাফানে’র গর্ভে জন্মানো দুই মেয়ে জিয়ানিনা (বর্তমানে বয়স ৩১) এবং ডালমা (বর্তমান বয়স ৩৩) ছাড়া তাঁর আর কোনো সন্তান নেই। কুড়ি বছরের বিবাহিত জীবনের পাড় করে ২০০৩ সালে ক্লডিয়ার সাথে সেই মারাদোনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে অবশ্য মারাদোনা স্বীকার করেন, তিনি আরো ছয়টি সন্তানের বাবা। বছর পাঁচেক আগের খবর। ক্রিস্টিনা সিনাগ্রা এবং ভ্যালেরিয়া সাবালাইন নামে দুই নারীর সঙ্গে আদালতে আইনী লড়াইয়ের পর মারাদোনা স্বীকার করেন. তাঁদের দুই সন্তান যথাক্রমে দিয়েগো জুনিয়র (৩৪) এবং জানার (২৪) বাবা তিনিই। এরও আগে ২০১৩ সালে ভেরোনিকা ওইয়েদা নামে এক নারীর গর্ভে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র দিয়েগো ফার্নান্দোর জন্ম হয়। তাকে নিয়ে অবশ্য কোনো মামলা হয়নি। মারাদোনার আরও সন্তানের খবর পাওয়া যায় গত বছর। এর পর ২০১৯ সালে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। সবাইকে চমকে দিয়ে মারাদোনার আইনজীবী ঘোষণা করেছিলেন, বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার কিউবায় জন্মানো তিনটি শিশুর পিতৃত্ব স্বীকার মেনে নিয়েছেন। জানা গেছে, কোকেন আসক্তি থেকে সেরে ওঠার চিকিৎসার জন্য ২০০০ সালের পর থেকে বেশ কয়েক বছর দিয়েগো কিউবায় কাটিয়েছিলেন। এতেই শেষ নয়। আরো অন্তত দু'জনের হদিশ মিলেছে - যারা মনে করেন মারাদোনাই তাদের বাবা। এরা কে কে? সান্টিয়াগো লারা (বর্তমানে বয়স ১৯) আর মাগালি জিল (বয়স ২৩)। এরা দুজনেই দাবী করেছেন, মারাদোনাই যে তাঁদের বাবা - তা প্রমাণ করার জন্য তাঁরা আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মারাদোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করতে হলে এই প্রমাণটা তাঁদের করা দরকার। অপরাধ বিজ্ঞান মেনে সব প্রমাণ করতে গেলে তাহলে তো মারাদোনার লাশ কবর থেকে তোলা হতে পারে? এমন সম্ভাবনা সত্যিই আছে। সান্টিয়াগো লারার আইনজীবী ইতোমধ্যেই আদালতের কাছে এমনই আর্জি পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে মারাদোনার লাশ কবর থেকে তোলা দরকার। তবে লারা ও জিল যদি শেষ পর্যন্ত এটা প্রমাণ করতে সক্ষমও হন যে, ম্যারাডোনাই তাঁদের বাবা - তাহলেও তাঁরা কি পরিমাণ সম্পত্তি পাবেন সেটা স্পষ্ট নয়।
আইনজীবীরা এখন মারাদোনার ভূসম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করার জন্য হিসেব-নিকেশ করতে ব্যস্ত। তাঁরা মনে করছেন, প্রয়াত তারকা এই ফুটবলারের সম্পত্তির অংশ পাবার জন্য আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াই হতে পারে। হতে পারে পারিবারিক বিবাদ, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে সম্পত্তির ভাগ পাবার মতলবে কেউ কেউ হয়তো ‘মারাদোনার সন্তানের’ সুযোগ সন্ধানী দাবিও তুলে এই সারিতে পড়তে পারেন। বুয়েন্স আয়ার্সের একজন আইনজীবী এলিয়াস কির জফের কথা উল্লেখ্য করেছে সেখানকার প্রচার মাধ্যম। এই আইনজীবী বলছেন, ‘মনে হয় মারাদোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ব্যাপারটা এক মহা অশান্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে, আর এর জট ছাড়াতে অনেক সময় লেগে যাবে।’ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে মারাদোনার সম্পত্তির মূল্য কত? মারাদোনা কী পরিমাণ সম্পত্তির মালিক ছিলেন, তা নিয়ে কোনো বিশদ রিপোর্ট নেই। তবে নানান তথ্যে নানান হিসাব মিলছে। প্রথম হিসেব । স্পোর্টস কার থেকে শুরু করে ধনরত্ন মিলিয়ে তাঁর সম্পদগুলো (যা জানা যাচ্ছে) মোট মূল্য নির্ধারণ। আর্জেন্টিনার এক পত্রিকায় প্রকাশিত হিসাবে দেখা গেছে, আর্জেন্টিনার সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৭৫ মিলিয়ন (সাড়ে৭ কোটি) ডলার থেকে ১০০ মিলিয়ন (১০কোটি) ডলার পর্যন্ত হতে পারে। দ্বিতীয় হিসেব। মারাদোনার মোট সম্পত্তি ও বকেয়া বা ঋণের হিসেবের হদিশ মিলেছে সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থ নামে একটি ওয়েবসাইটে। এই সাইটটি বিখ্যাত লোকদের সমস্ত সম্পত্তির ওপর রিপোর্ট করে। এখানে বলা হয়েছে, আর্থিক বিশ্লেষণ, বাজার গবেষণা এবং গোপন সূত্রের খবর, সব কিছু বিবেচনা করে তাঁদের মতে, মারাদোনার মোট সম্পদের মূল্য ৫ লাখ ডলার।
মারাদোনার কিছু সম্পত্তির খবর এরই মধ্যে বিশ্বের নানান পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে। তা থেকে অনেক চমকপ্রদ তথ্য মিলছে। এক) আর্জেন্টিনায় মারাদোনার অন্তত পাঁচটি বাড়ি আছে। তবে সেগুলি, কোনো ‘বেভারলি হিলসের প্রাসাদ’ বলা যায় না। দুই) একটি রোলস রয়েস গোস্ট (মূল্য প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার) এবং একটি বিএমডব্লিউ আই-এইট (দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার) গাড়ি আছে। তিন) বেলারুস সফরের সময় মারাদোনাকে উপহার দেয়া হয়েছিল একটি ‘হান্টার ওভারকামার’ জলে-রাস্তায় চলে এমন এক গাড়ি। যা জেমস বন্ড সিরিজের গাড়ি বলে জনপ্রিয়। চার) একটি হীরের আংটি, যার দাম ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার। পাঁচ) কোমানির সাথে একটি চুক্তি হয় যাতে তারা "প্রো-ইভোলিউশন সকার" নামে থ্রি-ডি ভিডিও গেমে মারাদোনা মতো দেখতে একটি চরিত্রকে ব্যবহার করতে পারে। মারাদোনা যেমন অর্থ রোজগার করেছেন, তেমনি বেহিসাবির মতো উড়িয়েওছেন। সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থ লিখেছে , মারাদোনা সক্রিয় ফুটবলার ও ম্যানেজারের ভূমিকায় বেতন ও বিজ্ঞাপন থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করেছেন। এর একটা বড় অংশ এসেছিল ইতালির নাপোলি ক্লাবে খেলার সময়। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তখন মারাদোনা বেতন পেতেন ৩০ লাখ ডলার। তার ওপর বিজ্ঞাপন থেকে পেতেন ৮০ লাখ থেকে এক কোটি ডলার পর্যন্ত। কিন্তু ইতালি তাকে দিয়েছে যেমন, নিয়েছেও কম নয়। ২০০৫ সালে ইতালির সরকার ঘোষণা করেছিল, মারাদোনার ৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের কর বাকি। দিয়েগো এই কর দিতে অস্বীকার করেছিলেন এবং মারা না গেলেও হয়তো কখনো দিতেন না। কিন্তু এর জন্য সেলেব্রিটি নেটওয়ার্থের হিসেবে তাঁর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৫ লাখ ডলার। মারাদোনার এক বন্ধু সাংবাদিক লুই ভেনচুরা হালে জানিয়েছেন, দিয়েগো দু-হাতে টাকা খরচ করতেন একথা সবাই জানেন। এক টিভি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, মারা যাওয়ারর সময় মারাদোনার তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। বলতে গেলে তিনি দরিদ্র অবস্থাতেই মারা গেছেন। এটা বিশ্বাসযোগ্য! তাঁর সম্পত্তি কিভাবে ভাগ-বাঁটোয়ারা হবে? মারাদোনার সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী, বান্ধবী বা ছেলেমেয়েদের প্রকাশ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে একাধিকবার। তিনি একবার তাঁর মেয়ে জিযানিনার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আমি কিছু রেখে যাবো না - আমি সবকিছু দান করে দেবো।’ আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী একজন তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পারেন, তবে বাকিটা তার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানরা পাবে। কিন্তু যেহেতু তিনি কোনো উইল করে যাননি, এবং মৃত্যুর সময় তাঁর কোনো বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন না - তাই মারাদোনার সব সম্পত্তিই সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে। এমনটাই শোনা যাচ্ছে। দেশের আইন বলছে, কেউ নিজেকে মারাদোনার উত্তরাধিকারী মনে করলে - তিনি স্বীকৃত হোন বা না হোন - তাঁকে দিয়েগোর মৃত্যুর ৯ দিনের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ চেয়ে আবেদন করতে হবে। মারাদোনার তৃতীয় কন্যা জানা এরই মধ্যে এই নিয়মেই আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। উত্তরাধিকারীদের নাম ঘোষণা এবং সম্পত্তি ভাগ করে কাকে কি দেওয়া হবে তা ঠিক করবেন একজন বিচারক, জানিয়েছেন একজন আইনজীবী। তবে এর ধনসম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা হতে নিশ্চিতভাবেই কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
বিশ্বাস করুন এমনটা হবে ভাবিনি। মাঠে ফুটবল পায়ে রাজপুত্রকে দু'চোখ মেলে দেখেছি। কিন্তু সেই মারাদোনা চলে গেছেন - কিন্তু এ কী চলছে!! এখনই? দেশ শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু মারাদোনার সম্পত্তি নিয়ে আইন-আদালতে দরবার এখনই?
চোখ-ধাঁধানো ফুটবল খেলেছেন দিয়েগো মারাদোনা। খেলেছেন আর বিপুল অর্থ রোজগার করেছিলেন। মালিক ছিলেন বহু বাড়ির। লোভনীয় প্রচারস্বত্ব থেকে শুরু করে বেলারুশ থেকে পাওয়া চিত্তাকর্যক বহু সম্পত্তির মালিক মারাদোনা। গুগলে মারাদোনা লেটেস্ট নিউজ লিখে সার্চ করলে এক বিচিত্র এক বিষয় হতবাক করেছে। সবে দশদিনও হয়নি ৬০ বছর বয়সে মারা গেছেন মারাদোনা। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে মারাদোনা যে অর্থ-সম্পদ রেখে গেছেন - তার উত্তরাধিকার নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে! মারাদোনার ব্যক্তিগত জীবনে বহু নারীর আসা-যাওয়া, এবং তাদের গর্ভজাত সন্তানদের কারণেই নাকি সৃষ্টি হতে পারে এই জটিলতা। কাজেই তিনি মারা যাবার সাথে সাথে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ কত এবং ঠিক কতজন তাঁর উত্তরাধিকারের দাবিদার হবেন - তা নিয়ে।
মারাদোনার সন্তান ক'জন? আটটি সন্তান, নাকি আরো বেশি? মারাদোনার ছিল এক বিশাল পরিবার। বিভিন্ন তথ্য ঘাঁটলে খবর মিলছে--ছয়জন নারীর সাথে কয়েক দশক ধরে রোমান্টিক সম্পর্কের সূত্রে তাঁদের গর্ভে কমপক্ষে আটটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর সম্পত্তি এই সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আর্জেন্টিনার আইন বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিকরা নানান সংবাদ মাধ্যমে বলছেন, মারাদোনা কোনো উইল করে গেছেন বলে এখনও জানা যায়নি। তাই তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ঠিক করাটা কোনো সহজ-সরল ব্যাপার হবে না। জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না। প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে- মারাদোনার এই সন্তানেরা কারা? একজন সফল ফুটবলার হিসেবে ম্যারাডোনার জীবন ছিল নানান ঘটনায় ভরা। চাকচক্যে ভরা। আর নানা নারীর গর্ভে মারাদোনার সন্তান জন্মের খবর ছিল সেই জীবনের একটা নিয়মিত ঘটনা। মারাদোনার এক কন্যা একবার ঠাট্টা করে বলেছিলেন, তাঁর বাবার সন্তানের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে পুরো একটা ১১ জনের ফুটবল দল হয়ে যাবে। মারাদোনা নিজে অনেক দিন ধরেই দাবি করে এসেছিলেন, তাঁর প্রথম স্ত্রী ক্লডিয়া ভিলাফানে’র গর্ভে জন্মানো দুই মেয়ে জিয়ানিনা (বর্তমানে বয়স ৩১) এবং ডালমা (বর্তমান বয়স ৩৩) ছাড়া তাঁর আর কোনো সন্তান নেই। কুড়ি বছরের বিবাহিত জীবনের পাড় করে ২০০৩ সালে ক্লডিয়ার সাথে সেই মারাদোনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে অবশ্য মারাদোনা স্বীকার করেন, তিনি আরো ছয়টি সন্তানের বাবা। বছর পাঁচেক আগের খবর। ক্রিস্টিনা সিনাগ্রা এবং ভ্যালেরিয়া সাবালাইন নামে দুই নারীর সঙ্গে আদালতে আইনী লড়াইয়ের পর মারাদোনা স্বীকার করেন. তাঁদের দুই সন্তান যথাক্রমে দিয়েগো জুনিয়র (৩৪) এবং জানার (২৪) বাবা তিনিই। এরও আগে ২০১৩ সালে ভেরোনিকা ওইয়েদা নামে এক নারীর গর্ভে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র দিয়েগো ফার্নান্দোর জন্ম হয়। তাকে নিয়ে অবশ্য কোনো মামলা হয়নি। মারাদোনার আরও সন্তানের খবর পাওয়া যায় গত বছর। এর পর ২০১৯ সালে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। সবাইকে চমকে দিয়ে মারাদোনার আইনজীবী ঘোষণা করেছিলেন, বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার কিউবায় জন্মানো তিনটি শিশুর পিতৃত্ব স্বীকার মেনে নিয়েছেন। জানা গেছে, কোকেন আসক্তি থেকে সেরে ওঠার চিকিৎসার জন্য ২০০০ সালের পর থেকে বেশ কয়েক বছর দিয়েগো কিউবায় কাটিয়েছিলেন। এতেই শেষ নয়। আরো অন্তত দু'জনের হদিশ মিলেছে - যারা মনে করেন মারাদোনাই তাদের বাবা। এরা কে কে? সান্টিয়াগো লারা (বর্তমানে বয়স ১৯) আর মাগালি জিল (বয়স ২৩)। এরা দুজনেই দাবী করেছেন, মারাদোনাই যে তাঁদের বাবা - তা প্রমাণ করার জন্য তাঁরা আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মারাদোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করতে হলে এই প্রমাণটা তাঁদের করা দরকার। অপরাধ বিজ্ঞান মেনে সব প্রমাণ করতে গেলে তাহলে তো মারাদোনার লাশ কবর থেকে তোলা হতে পারে? এমন সম্ভাবনা সত্যিই আছে। সান্টিয়াগো লারার আইনজীবী ইতোমধ্যেই আদালতের কাছে এমনই আর্জি পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে মারাদোনার লাশ কবর থেকে তোলা দরকার। তবে লারা ও জিল যদি শেষ পর্যন্ত এটা প্রমাণ করতে সক্ষমও হন যে, ম্যারাডোনাই তাঁদের বাবা - তাহলেও তাঁরা কি পরিমাণ সম্পত্তি পাবেন সেটা স্পষ্ট নয়।
আইনজীবীরা এখন মারাদোনার ভূসম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করার জন্য হিসেব-নিকেশ করতে ব্যস্ত। তাঁরা মনে করছেন, প্রয়াত তারকা এই ফুটবলারের সম্পত্তির অংশ পাবার জন্য আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াই হতে পারে। হতে পারে পারিবারিক বিবাদ, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে সম্পত্তির ভাগ পাবার মতলবে কেউ কেউ হয়তো ‘মারাদোনার সন্তানের’ সুযোগ সন্ধানী দাবিও তুলে এই সারিতে পড়তে পারেন। বুয়েন্স আয়ার্সের একজন আইনজীবী এলিয়াস কির জফের কথা উল্লেখ্য করেছে সেখানকার প্রচার মাধ্যম। এই আইনজীবী বলছেন, ‘মনে হয় মারাদোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ব্যাপারটা এক মহা অশান্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে, আর এর জট ছাড়াতে অনেক সময় লেগে যাবে।’ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে মারাদোনার সম্পত্তির মূল্য কত? মারাদোনা কী পরিমাণ সম্পত্তির মালিক ছিলেন, তা নিয়ে কোনো বিশদ রিপোর্ট নেই। তবে নানান তথ্যে নানান হিসাব মিলছে। প্রথম হিসেব । স্পোর্টস কার থেকে শুরু করে ধনরত্ন মিলিয়ে তাঁর সম্পদগুলো (যা জানা যাচ্ছে) মোট মূল্য নির্ধারণ। আর্জেন্টিনার এক পত্রিকায় প্রকাশিত হিসাবে দেখা গেছে, আর্জেন্টিনার সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৭৫ মিলিয়ন (সাড়ে৭ কোটি) ডলার থেকে ১০০ মিলিয়ন (১০কোটি) ডলার পর্যন্ত হতে পারে। দ্বিতীয় হিসেব। মারাদোনার মোট সম্পত্তি ও বকেয়া বা ঋণের হিসেবের হদিশ মিলেছে সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থ নামে একটি ওয়েবসাইটে। এই সাইটটি বিখ্যাত লোকদের সমস্ত সম্পত্তির ওপর রিপোর্ট করে। এখানে বলা হয়েছে, আর্থিক বিশ্লেষণ, বাজার গবেষণা এবং গোপন সূত্রের খবর, সব কিছু বিবেচনা করে তাঁদের মতে, মারাদোনার মোট সম্পদের মূল্য ৫ লাখ ডলার।
মারাদোনার কিছু সম্পত্তির খবর এরই মধ্যে বিশ্বের নানান পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে। তা থেকে অনেক চমকপ্রদ তথ্য মিলছে। এক) আর্জেন্টিনায় মারাদোনার অন্তত পাঁচটি বাড়ি আছে। তবে সেগুলি, কোনো ‘বেভারলি হিলসের প্রাসাদ’ বলা যায় না। দুই) একটি রোলস রয়েস গোস্ট (মূল্য প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার) এবং একটি বিএমডব্লিউ আই-এইট (দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার) গাড়ি আছে। তিন) বেলারুস সফরের সময় মারাদোনাকে উপহার দেয়া হয়েছিল একটি ‘হান্টার ওভারকামার’ জলে-রাস্তায় চলে এমন এক গাড়ি। যা জেমস বন্ড সিরিজের গাড়ি বলে জনপ্রিয়। চার) একটি হীরের আংটি, যার দাম ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার। পাঁচ) কোমানির সাথে একটি চুক্তি হয় যাতে তারা "প্রো-ইভোলিউশন সকার" নামে থ্রি-ডি ভিডিও গেমে মারাদোনা মতো দেখতে একটি চরিত্রকে ব্যবহার করতে পারে। মারাদোনা যেমন অর্থ রোজগার করেছেন, তেমনি বেহিসাবির মতো উড়িয়েওছেন। সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থ লিখেছে , মারাদোনা সক্রিয় ফুটবলার ও ম্যানেজারের ভূমিকায় বেতন ও বিজ্ঞাপন থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করেছেন। এর একটা বড় অংশ এসেছিল ইতালির নাপোলি ক্লাবে খেলার সময়। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তখন মারাদোনা বেতন পেতেন ৩০ লাখ ডলার। তার ওপর বিজ্ঞাপন থেকে পেতেন ৮০ লাখ থেকে এক কোটি ডলার পর্যন্ত। কিন্তু ইতালি তাকে দিয়েছে যেমন, নিয়েছেও কম নয়। ২০০৫ সালে ইতালির সরকার ঘোষণা করেছিল, মারাদোনার ৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের কর বাকি। দিয়েগো এই কর দিতে অস্বীকার করেছিলেন এবং মারা না গেলেও হয়তো কখনো দিতেন না। কিন্তু এর জন্য সেলেব্রিটি নেটওয়ার্থের হিসেবে তাঁর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৫ লাখ ডলার। মারাদোনার এক বন্ধু সাংবাদিক লুই ভেনচুরা হালে জানিয়েছেন, দিয়েগো দু-হাতে টাকা খরচ করতেন একথা সবাই জানেন। এক টিভি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, মারা যাওয়ারর সময় মারাদোনার তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। বলতে গেলে তিনি দরিদ্র অবস্থাতেই মারা গেছেন। এটা বিশ্বাসযোগ্য! তাঁর সম্পত্তি কিভাবে ভাগ-বাঁটোয়ারা হবে? মারাদোনার সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী, বান্ধবী বা ছেলেমেয়েদের প্রকাশ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে একাধিকবার। তিনি একবার তাঁর মেয়ে জিযানিনার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আমি কিছু রেখে যাবো না - আমি সবকিছু দান করে দেবো।’ আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী একজন তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পারেন, তবে বাকিটা তার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানরা পাবে। কিন্তু যেহেতু তিনি কোনো উইল করে যাননি, এবং মৃত্যুর সময় তাঁর কোনো বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন না - তাই মারাদোনার সব সম্পত্তিই সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে। এমনটাই শোনা যাচ্ছে। দেশের আইন বলছে, কেউ নিজেকে মারাদোনার উত্তরাধিকারী মনে করলে - তিনি স্বীকৃত হোন বা না হোন - তাঁকে দিয়েগোর মৃত্যুর ৯ দিনের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ চেয়ে আবেদন করতে হবে। মারাদোনার তৃতীয় কন্যা জানা এরই মধ্যে এই নিয়মেই আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। উত্তরাধিকারীদের নাম ঘোষণা এবং সম্পত্তি ভাগ করে কাকে কি দেওয়া হবে তা ঠিক করবেন একজন বিচারক, জানিয়েছেন একজন আইনজীবী। তবে এর ধনসম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা হতে নিশ্চিতভাবেই কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।