Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসীরা একেই বুঝি বলে শনির দশা। করোনা এবং লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতকে প্রলেপ লাগা শুরুও হয়নি আর এরই মধ্যে দেশে লাগল নতুন মড়ক। সাম্প্রতিক আতঙ্কের নাম বার্ড ফ্লু। বার্ড ফ্লু মানেই হাঁস-মুর্গীর মাংস এবং ডিম নিষিদ্ধ। হু হু করে কমতে শুরু করেছে ডিম এবং মাংসের দাম আর তার জেরেই ফের মাথায় হাত পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের। এরই মধ্যে দেশের বহু রাজ্যে ডিম এবং মাংস বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে।
করোনার ভয়ে এতদিন সিঁটিয়ে ছিলেন দেশবাসী। অতি সম্প্রতি প্রতিষেধকের বণ্টন শুরু হওয়ায় আপাতত নিশ্চিন্ত হতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। তারই মধ্যে এল নতুন আতঙ্ক। এবার মড়ক লাগল পাখিদের। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বার্ড ফ্লু। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, কেরল, রাজস্থানে আগেই বার্ড ফ্লু সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। এবার রোগ সংক্রমিত হয়েছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরাখণ্ডে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মৎস্য, পশুপালন এবং দুগ্ধজাত পণ্য মন্ত্রকের তরফে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি আশ্বাস দিলেও চিন্তা কমছে না ব্যবসায়ীদের। বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে ডিম এবং মাংস খাওয়া একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এর জেরেই প্রায় অর্ধেক দামে ডিম এবং মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তর ভারতের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের। সেখানেই বার্ড ফ্লুর হামলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফলে আতঙ্কও ছড়িয়েছে যথেষ্ট। দিল্লি এবং হিমাচলপ্রদেশ ডিম এবং মুরগির মাংসের একটা বড় বাজার। সেখানে রোগ সংক্রমণ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা বেড়েছে আরও। এরই মধ্যে রাজধানীতে ডিম ও মাংস আমদানি বন্ধ হয়েছে। একই নির্দেশ জারি হয়েছে হিমাচলেও।
দিল্লিতে বয়লার চিকেনের কেজি প্রতি দাম ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ থেকে ১০৫ টাকা। মহারাষ্ট্রে কেজি প্রতি মাংসের দাম ৮২ থেকে কমে হয়েছে ৫৮ টাকা। গুজরাটে মাংস বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫ টাকায়। ডিমের দামও কমেছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। যদিও বাংলায় এখনও পর্যন্ত বার্ড ফ্লু-র সংক্রমণ হয়নি বলেই দাবি করেছে প্রশাসন। তা সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য রাজ্যের হাল দেখে আতঙ্কগ্রস্ত এ রাজ্যের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরাও। যদিও দেশের সব রাজ্যকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দেশের অন্যান্য রাজ্যে যেভাবে রোগ সংক্রমণ হচ্ছে তাতে এ রাজ্যেও যথেষ্ট গুজব তৈরি হয়েছে আর এর জেরে তাঁদের ব্যবসাও মার খাবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজ্যের পোল্ট্রি মালিকরা।
রাজ্যে প্রায় ৫ লক্ষ পোল্ট্রি মালিক রয়েছেন। এই কাজে জড়িত রয়েছে আরও ১৫ লক্ষ। তাই নতুন করে এরাজ্যেও পাখির মড়ক লাগলে মাথায় হাত পড়বে বহু মানুষের। সঙ্গে রয়েছে গুজবের আতঙ্কও। তাই এখন থেকেই সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন রাজ্যের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা।
উত্তর ভারতে প্রধানত পরিযায়ী পাখিদের থেকেই বার্ডু ফ্লু ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাখিদের তো আর আটকে রাখা যায় না। তাই কোন রোগগ্রস্ত পরিযায়ী পাখি উড়ে এসে রাজ্যে রোগ সংক্রমণ করবে তা ভেবেই চোখের ঘুম ছুটেছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের।