Written By দীপঙ্কর গুহ
শেষ টেস্ট এবং সিরিজ জিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এক নম্বরে ভারত। ছবিঃ সৌ-বিসিসিআই
ধন্যবাদ ললিত মোদী। ধন্যবাদ রাহুল দ্রাবিড়। ধন্যবাদ রবি শাস্ত্রী। ধন্যবাদ অস্ট্রেলিয়া। কোথাও প্রথম সারিতে ঐতিহাসিক জয় পাওয়া ভারতীয় দল নিয়ে ধন্যবাদজ্ঞাপন জানিয়ে কিছু লিখলাম না। কারণ, শুরুতে যাদের ধন্যবাদ জানালাম তাদের জন্যই এই ঐতিহাসিক সাফল্য পেল টিম ইন্ডিয়া। কোনও সন্দেহ নেই, কোহলি - রাহানের দল অভাবনীয়ভাবে যে সাফল্য মাঠে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে তুলে তার সব কৃতিত্ব তাঁদেরই। কিন্তু তবুও ধন্যবাদ শুরুতে উল্লেখিত নামেদের উদ্দেশ্যে।
কেন ললিত মোদি? আইপিএল শুরু করেছিলেন বলে। এই খেলাটা ভারতের মাটিতে তিনিই চালু করিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি কী করেছেন, সেসবে আগ্রহ নেই। আইন আইনের পথে চলুক। কিন্তু আইপিএল বিশ্বের তাবড়-তাবড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতের ক্রিকেটাররা আইপিএলের এই ১৩ বছরে বিশ্বের পয়লা থেকে একাদশ সেরাদের সঙ্গে কিংবা বিপক্ষে খেলেছে। আর বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। আমিও পারি বা আমরাও পারি - দিনের পর দিন তা আরও মজবুত হয়েছে।
কেন রাহুল দ্রাবিড়? এই দলটির অধিকাংশ ক্রিকেটারদের মেন্টর হয়ে হয়ে ওঠার জন্য। এই দলটার সাফল্যের বীজ বুনে দিয়েছেন যে তিনিই । রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলার সময় রাহানে কাছ থেকে "দ্য ওয়াল"কে দেখেছেন। আর শিখেছেন। পরে আবার ইন্ডিয়া এ দলের কোচ হয়ে এক ঝাঁক ক্রিকেটারকে আগলে রেখে মানসিকতাটিই ইস্পাত কঠিন বানিয়ে দিয়েছেন। শুভমান গিল, ময়াঙ্ক, হনুমা, পন্থ, শার্দূল, সুন্দর, সাইনি, কুলদীপ, সিরাজ....কে নয়! তাই তো রাহুল আজ খুশি। দেশের সাপ্লাই লাইন তৈরি করেই যাচ্ছেন। বেঙ্গালুরুতে ক্রিকেট আকাদেমিতে ঘষামাজা চলে আজও। চোট পেলে তাঁর সামনে আবার মানসিকভাবে এঁরা নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই করে চলে। তাই হয়তো সিনিয়র দলের কোচের পদ পেতে তিনি লালায়িত হন না।
কেন রবি শাস্ত্রী? সারাদিন কি করেন তিনি -জানি না। জানার ইচ্ছেই নেই। গত কয়েকটি বছর ধরে জেনেছি -বুঝেছি তিনি এই দলের বড়দাদা। ঘন্টা খানেক করে সময় দিয়ে এইসব ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বাসটি গেঁথে দিয়েছেন-তোমারই পারো। দূরদর্শী। তাই ঋষভ পন্থকে বাড়তি প্রশ্রয় দিয়েছেন। মঙ্গলবার ব্রিসবেন গাব্বায় প্রশ্রয় পাওয়া পন্থ দেশকে একটা ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়ে ম্যাচের সেরা হলেন। কিরমানি চেয়েছেন, ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে। তাঁর থেকে পন্থ উইকেটকিপিংটা আরও শানিয়ে নিতে পারেন-তাহলে তিনি অনেক ম্যাচের রং একাই বদলে দিতে পারেন। জানি, বিশ্বের এখনকার সেরা টেস্ট উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা এই দলে সাইড বেঞ্চে বসে। দলের আজ পন্থের মতো অকুতোভয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান চাই। দলে বাড়তি বোলার নিয়ে নামতে হবে জেনে সেরা উইকেটকিপারকে প্রথম একাদশের বাইরে রেখে দল সাজিয়ে দিয়েছিলেন রবি।
কেন অস্ট্রেলিয়া? বিরাট কোহলি সমেত ভারতীয় ব্যাটিংকে ৩৬ রানে থামিয়ে দেওয়ার জন্য-ধন্যবাদ। সেদিনই শপথটা ওঁরা মনের ভিতর গেঁথে নিয়েছিলেন। বদলা আর বদল- দুটোই চাই। ব্রিসবেন তার সাক্ষী হয়ে রইলো। অ্যাডিলেডে ৩৬ রানের লজ্জাসমেত ৮ উইকেটে হার। রাহানের নেতৃত্বে মেলবোর্ন বদলা নিল টিম ইন্ডিয়া। সেই ৮ উইকেটেই জয়। এরপর সিডনিতে ১৩১ ওভার পেয়ে অজিরা ৪০৭ রানের পাহাড় চাপিয়েও ভারত বধ করতে ব্যর্থ হল। গিল-পন্থ-সুন্দর-শার্দূলদের বদলে দেওয়ার খেল শুরু। তৃতীয় টেস্ট চতুর্থ ইনিংসে ৫ উইকেটে ৩৩৪ তুলে ড্র হয়েছিল। বদলের বারুদে জ্বললো সোমবার।
চতুর্থ টেস্টের শেষদিন কি পরিস্থিতি ছিল? ভারতকে ৩২৪ রানের আগে থামাতে হবে। হাতে ৯৬.১ ওভার। বিশ্বের সেরা বোলিং শক্তি অস্ট্রেলিয়ার। আর টিম ইন্ডিয়ার কি আছে? সিডনিতে একবার শিঁকে ছিঁড়ে গেছে। এই ছিল মনোভাব। সকালে দশ ওভার না গড়াতেই রোহিত ফিরলেন। শুভমন গিল ব্যাট হাতে শাসন করতে শুরু করলেন। বেচারা! ১৪৬ বলে ৯১ রানের ইনিংসটা লম্বা হল না। উল্টো দিকে পূজারাকে উপড়ে ফেলা দেওয়া কঠিন হবে বলে, শুরু হল বডিলাইন বোলিং । তাতেও ২১১ বলে ৫৬ রান। এই দুজন অস্ট্রেলিয়ার জয়ের স্বপ্নকে ভেঙে দিয়ে গেলেন। ড্র দেখতে শুরু করে অজিরা। নেতা রাহানে ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংসটি আঁচটা দিয়েছিলেন-তাঁরা কী চান। মানছি- আজ জয় না পেলে আফশোষ হত- রাহানে, ময়াঙ্ক আর সুন্দরের ওভাবে আউট হওয়ায়। কিন্তু বদলে গেলেন যে ঋষভ পন্থ! সিডনি টেস্টে বেহিসাবি ড্রাইভটি না নিলে ৯৭ রানে ফিরতেন না। ড্র ম্যাচটি ভারত জিতে যেতেও পারতো। সেই পন্থই মঙ্গলবার হিসেবি ছিলেন। তাই ৫ ওভারে ১৫ রান পেলেই জয় দেখেও চালিয়ে দেননি। ম্যাচ জয়ের শেষ "গর্বের বাউন্ডারি"টি তিনিই হাঁকালেন। ১৩৮ বলে অপরাজিত ৮৯। ম্যাচের সেরা তিনিই। ভারত ৩ উইকেটে জয়ী। ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন টিম পেইন এন্ড টিম অস্ট্রেলিয়া। ৩৬ রানের ধাক্কাটা দেওয়ার জন্য। এই জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়লা নম্বরে উঠে এল ভারত। সরতে হল অজিদের। এবার ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে চার টেস্টের সিরিজে সামনে জো রুটের ইংল্যান্ড। বদলা নিয়ে করোনা কালের দম আটকানো অবস্থা সামলে ছ'মাস পর দেশে ফিরছে দল। এটা বদলে যাওয়া ভারতীয় দল। সাবাশ।