Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
গোল করার পর ফলের উচ্ছ্বাস (বাঁ দিকে)। (ডান দিকে) এভাবেই বার বার আটকে গেলেন ব্রাইট। শুক্রবার গোয়ায়।
মুম্বই সিটি এফ সি—১ এস সি ইস্ট বেঙ্গল—০
(মোর্তাদা ফল)
স্কোর শিট দেখে বোঝা যাবে না শেষ কুড়ি মিনিট কী প্রাধান্য নিয়ে খেলেছে ইস্ট বেঙ্গল। বল পসেসনে তারা তখন ৮০-২০ এগিয়ে। একটার পর একটা আক্রমণ আরব সাগরের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে মুম্বই ডিফেন্সে। আর দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সেগুলোকে আটকাবার চেষ্টা করছে মোর্তাদা ফলের নেতৃত্বে মুম্বই ডিফেন্স। প্রথম লিগে এই টিমটার কাছেই তিন গোল হজম করতে হয়েছিল রবি ফাউলারের টিমকে। কিন্তু সময় পেয়ে সেই মুম্বইকেই বাগে পেয়ে গিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু দুটো কারণে তারা ম্যাচটায় গোল পেল না। এক) গোল করার মতো পজিটিভ স্ট্রাইকার নেই। ব্রাইটকে নামানো হল ৬২ মিনিটে। এই নাইজিরিয় নামার পরে ইস্ট বেঙ্গলের আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে। কিন্তু অ্যান্টনি পিলকিংটন, অ্যারন অ্যারোমা বা হরমনপ্রীতের মতো গোলকানা স্ট্রাইকার থাকলে গোল হবে কী করে? খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে সুবিধেজনক অবস্থায় বল পেয়ে হরমনপ্রীত বাইরে হেড না করলে হয়তো একটা পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পারত ইস্ট বেঙ্গল। আর দুই) ইস্ট বেঙ্গল মাঝ মাঠে তেমন পেনিট্রেটিভ ফোর্স নেই। সব কাগুজে বাঘ।
তাই শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রাধান্য নিয়ে খেলেও সাত ম্যাচ আপরাজিত থাকার পর হারতে হল। তেরো ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দশ নম্বরেই থাকল ইস্ট বেঙ্গল। আর বারো ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে মগডালেই থাকল সের্গেই লোবেরার মুম্বই। জেতার মতো খেলেও হেরে মাঠ ছাড়তে হল নারায়ণ দাসেদের। নারায়ণ এদিন আই এস এল-এ তাঁর শততম ম্যাচটি খেললেন। দলের পক্ষ থেকে সতীর্থদের সই করা একটি জার্সি তাঁর হাতে তুলে দেন কোচ রবি ফাউলার। পরিবর্তে যদি কোচের হাতে তিন পয়েন্ট তুলে দিতে পারতেন নারায়ণের সতীর্থরা তাহলে রাতটা সেলিব্রেট করা যেত। কিন্তু তা আর হল কোথায়?
শুক্রবার রবি ফাউলার যে টিম করেছিলেন তাতে ব্রাইটকে রাখেননি। আহত রাজু গায়কোয়াড়কে এখনও ফিট করা যায়নি। তাই ডিফেন্সে অঙ্কিত মুখার্জি, স্কট নেভিল, ড্যানিয়েল ফক্সের সঙ্গে নারায়ণ দাস। মাঝ মাঠে মিলন সিংয়ের সঙ্গে মাট্টি স্টেইনম্যান ডিফেন্সিভ ব্লকার। আর তাদের সামনে সুরচন্দ্র, পিলকিংটন এবং মাঘোমা। সামনে হরমনপ্রীত। এই টিম নিয়ে মুম্বইয়ের মতো দুরন্ত ফর্মে থাকা টিমের বিরুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল শুরু থেকেই অ্যাটাকিং ফুটবল খেলতে থাকে। বল পসেসনে তারা ৬৩ শতাংশে পৌছে গেছে। কিন্তু তাদের যা কারিকুরি সবই মুম্বইয়ের বক্সের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলল। একটা না ছিল বলার মতো ফাইনাল পাস কিংবা সুন্দর একটা থ্রূ পাস যা থেকে গোল হতে পারে। তাই অমরিন্দর সিংকে উদ্বেগে ফেলার মতো কোনও মুহূর্তই কাটাতে হয়নি। এ রকম ভেদশক্তিহীন দল নিয়ে আই এস এল খেলা হয়তো যায়, কিন্তু সাফল্য পাওয়া মুশকিল।
মুম্বই যে দুর্দান্ত খেলেছে প্রথমার্দ্ধে তা বলা যাবে না। কিন্তু তারা সারাক্ষণ ব্যস্ত রেখেছে ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সকে ডাইরেক্ট ফুটবল খেলে। কাউন্টার অ্যাটাকে তারা খুব কম সময়ের মধ্যে পৌছে যাচ্ছিল গোল করার মতো জায়গায়। কিন্তু এলোমেলো শট করে সেগুলোকে নষ্ট করেছে মুম্বইয়ের হুগো বুমোস, অ্যাডাম লে ফন্দ্রে কিংবা সাই গডার্ডরা। আর এদিন মুম্বই একটু পা চালিয়ে খেলেছে। পাল্টা পা চালাতে কসুর করেনি ইস্ট বেঙ্গল। তাই ম্যাচটা বেশির ভাগ সময় ফিজিক্যাল হয়ে যায়।
২৭ মিনিটেই কাজের কাজটি করে ফেলে মুম্বই। সাই গডার্ডের কর্নার মেহতাব সিং হেড করে নামিয়ে দিলে বল চলে যায় বক্সের বাইরে থাকা হুগো বুমোসের কাছে। সেখান থেকে মাপা ক্রস মোতার্দা ফলের মাথায়। ছয় গজের মধ্যে থেকে হেডে গোল করতে ভুল করেননি ডিফেন্ডার ফল। দেবজিতের কিছু করার ছিল না। ৪৫ মিনিটে ২-০ হয়ে যেত যদি বিপিন সিংয়ের ক্রস থেকে আ্যাডম লে ফন্ড্রে শুধু দেবজিৎকে সামনে পেয়ে গোলে হেড করার বদলে বাইরে হেড না করতেন। গোলটি করা এবং দুদাফন্ত ডিফেন্স করার জন্য ম্যাচের সেরা ফল।
ফিরতি লিগে পর পর তিনটি কঠিন ম্যাচ ছিল ইস্ট বেঙ্গলের। গোয়া, চেন্নাইয়ানের সঙ্গে ড্র করলেও মুম্বইয়ের কাছে হারতে হল। তবে ইস্ট বেঙ্গল এখন অনেক তৈরি দল। সামনের ম্যাচগুলো থেকে তারা জয়ের আশা করতেই পারে।