Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে নর্থ ইস্টের জয়ের নায়ক ফেদেরিকো গালেগো।--ফাইল ছবি।
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড—২ এটিকে মোহনবাগান—১
(মাচাডো, গালেগো) (রয় কৃষ্ণ)
আই এস এল লিগ টেবলে এক নম্বর হয়ে সামনের বছর এ এফ সি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার স্বপ্ন ধাক্কা খেল এটিকে মোহনবাগানের। মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসে গোয়ার ফাতোরদার নেহরু স্টেডিয়ামে তাদের হারতে হল এমন একটা টিমের কাছে যাদের তারা প্রথম লিগে ২-০ গোলে হারিয়েছিল। আর যারা ক্রমাগত হারার জন্য তাদের স্প্যানিশ কোচকে বাতিল করে স্বদেশি খালিদ জামিলের উপর দায়িত্ব অর্পণ করেছে। দায়িত্ব পাওয়ার দুটো ম্যাচের মধ্যেই মোহনবাগানের মতো হেভিওয়েট দলকে হারিয়ে প্রাক্তন আই লিগ জয়ী কোচ খালিদ বুঝিয়ে দিলেন মোহনবাগান অপ্রতিরোধ্য নয়। তাদেরকে ঘিরে যে মিথটা তৈরি হচ্ছে সেটা নেহাতই ভঙ্গুর। ম্যাচের ৬০ মিনিটে মাচাডোর গোলে এগিয়ে যায় নর্থ ইস্ট। ৭২ মিনিটে রয় কৃষ্ণ সমতা ফেরান। কিন্তু ৮১ মিনিটে ফেদেরিকো গালেগোর গোল মোহনবাগানকে হারিয়ে দেয়।
ম্যাচ জিততে গেলে গোল করতে হয়। মোহনবাগানে গোল করার লোক নেই তা নয়। কিন্তু আই এস এল যত শেষের দিকে এগোচ্ছে তত রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের কারিকুরি ধরা পড়ে যাচ্ছে। বিপক্ষ কোচেরা ভিডিওতে তাদের খেলা কাটাকুটি করে জব্দ করার ফন্দি ঠিক মতো এঁটে ফেলছেন। যার জন্য প্রথমার্দ্ধে খানিকটা চাপ বজায় রেখেও মোহনবাগান গোল করতে ব্যর্থ। খালিদ জামিলের ডিফেন্ডাররা কোনও রকম ম্যান মার্কিং করেননি। খানিকটা জোনাল মার্কিংয়ের প্যাঁচে পড়ে কৃষ্ণ এবং উইলিয়ামস আটকে যান। বিরতির পর তাই উইলিয়ামসকে তুলে নিয়ে মনবীরকে নামান আন্তোনিও হাবাস। তাতে মোহনবাগানের চাপ বাড়লেও গোলের দরজা খোলা যায়নি।
চোটের জন্য এডু গার্সিয়াকে পাওয়া যায়নি। হয়তো আরও দু একটা ম্যাচ তাঁকে পাওয়া যাবে না। তাঁর পরিবর্তে মোহনবাগানের খেলা তৈরি করার দায়িত্ব যাঁর উপর পড়েছিল সেই জাভি হার্নান্ডেজ নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ। গার্সিয়া থাকলে জাভিকে যেভাবে সাপোর্টিভ রোলে পাওয়া যায়, গার্সিয়ার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সেই ভূমিকায় পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি এটাও ঠিক জাভি তেমন সাহায্য পাননি প্রণয় হালদার এবং প্রবীর দাসদের কাছ থেকেও। একটা টিম তো ভাল খেলে একাধিক প্লেয়ারের সমবেত চেষ্টায়। তাই একজনকে দায়ী করাও যায় না। বাগানের আরেক বিদেশি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ যত দিন যাচ্ছে দলের বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে ব্যর্থ বিদেশিকে দিনের পর দিনে না টেনে নিয়ে গিয়ে স্বদেশিদের উপর নির্ভর করা উচিত কি না। তবে কৃষ্ণের গোলটা কিন্তু ম্যাকহিউ-র পাস থেকেই হয়েছে।
নর্থ ইস্ট প্রথম পাঁচটা দলের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তাদের উরুগুয়েন প্লে মেকার ফেদেরিকো গালেগো অবশ্যই সেরা পাঁচের মধ্যে পড়েন। সেটা তিনি বুঝিয়েও দিয়েছেন ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে। দুটো গোলের ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা রয়েছে। ৬০ মিনিটে তিরির একটি ক্লিয়ারেন্স ব্লক করেন গালেগো। বলটা তিনি ফরোয়ার্ড পাস করেন মাচাদোকে। তাঁকে বাঁধা দিতে আসেন তিরি। কিন্তু শোলডার পুশ করে বল ধরে এগিয়ে গিয়ে বিনা বাঁধায় গোল করে আসেন মাচাদো। মোহন ফুটবলাররা রেফারির কাছে আবেদন করেন মাচোদার ফাউলের জন্য। কিন্তু রেফারি তাঁদের ডাকে সাড়া দেননি। ৭২ মিনিটে প্রবীর দাসের পরিবর্ত মিডফিল্ডার কোমল থাটাল বক্সের সামনে খুঁজে পান কার্ল ম্যাকহিউকে। হোল্ডিং মিডফিল্ডার কার্লের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে গোল করতে ভুল করেননি রয় কৃষ্ণ। কিন্তু ম্যাচটা থেকে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফেরা লক্ষ্য ছিল গালেগোর। ৮১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে তিনি যে শট নিলেন তা পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে গোলে ঢুকে যায়। অরিন্দম ভট্টাচার্য অন্য দিনের মতো এদিনও বেশ কয়েকটি গোল বাঁচিয়েছেন। কিন্তু এই শটটা তাঁর পক্ষে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এই হারের ফলে মোহনবাগান লিগ টেবলে দু নম্বরেই রইল। তেরো ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২৪। আর সমসংখ্যক ম্যাচে মুম্বই সিটি এফ সি-র পয়েন্ট হল ৩০। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে হলে মোহনবাগানকে বাকি ম্যাচগুলোতে নিজেদের ভুলগুলো শোধরালেই হবে না, পরিচয় দিতে হবে উদ্ভাবনী শক্তিরও।