Written By দীপঙ্কর গুহ
কিং খানের ছেলে আরিয়ান আর জুহির মেয়ে জাহ্নবী নিলাম টেবলে। ছবিঃসৌ-টুইটার
হায়দরাবাদ পারে। আমরা - বাংলায় বসেও তা পারিনি। এখনও পারিনি। পারবো বলে টের পাচ্ছি না। কি পারলো হায়দরাবাদ? খবরটা আজই পেলাম। হায়দরাবাদের মাঠে নামতে দেওয়া হবে না সানরাইজার্সকে! ঝাঁঝালো হুমকির মুখে ডেভিড ওয়ার্নাররা। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলে এবারও কোনো স্থানীয় ক্রিকেটার নেই। সেই কারণে "তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি"র বিধায়ক দনম নগেন্দর কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন হায়দরাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। তিনি সাড়া ফেলে দেওয়া এক বার্তায় নাকি জানিয়ে দিয়েছেন, স্থানীয় ক্রিকেটার এবারও দলে না থাকায় হায়দরাবাদে ম্যাচ খেলতে গেলে আটকানো হবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কর্তৃপক্ষকে। মিডিয়াকে নগেন্দ্র জানিয়েছেন, “হায়দরাবাদ একটি বিশ্বমানের শহর। মহম্মদ আজহারউদ্দিন-ভিভিএস লক্ষ্মণরা দেশের সফল ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় সাম্প্রতিককালে পরিকাঠামোগত প্রচুর উন্নতি হয়েছে। এখানে প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটারের অভাব নেই। ওরা রঞ্জি ট্রফি, অনুর্দ্ধ-১৯ সহ একাধিক টুর্নামেন্ট খেলছে। ওদের আইপিএলে নেওয়া উচিত, কিন্তু হচ্ছে কোথায়? ” এর পাশাপাশি তিনি আরো জানিয়েছেন, “কেবলমাত্র মহম্মদ সিরাজই নজর কেড়েছে নিজের প্রতিভায়। অন্যান্য ক্রিকেটাররাও রয়েছে। তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এই ডেভিড ওয়ার্নার- বল বিকৃতি কাণ্ডের মূল হোতা। তিনিই আবার এই শহর দলের ক্যাপ্টেন। আমরা সানরাইজার্স কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় ক্রিকেটার নেওয়ার দাবি জানালাম। তা না হলে হায়দরাবাদে যাতে ম্যাচ না হয় সেটা আমরা বুঝে নেব।” হুমকির পর হুমকি! নগেন্দ্র কার্যত কথাবার্তায় আগুন ছড়িয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় ক্রিকেটাররা না থাকায় এই দলের নাম থেকে যেন ‘হায়দরাবাদ’ শব্দ মুছে ফেলা হয়। শুধু এই বিধায়ক নগেন্দ্রই নন, জানা গিয়েছে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি মহম্মদ আজাহারউদ্দিনও স্থানীয় ক্রিকেটাররা সুযোগ না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। নিলামে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ মাত্র ১০.৭৫ কোটি টাকা নিয়ে নেমেছিল। নিলামের আগেই হায়দরাবাদ ঠিক করে নিয়েছিল কোনো বড় নামের পিছনে ছুটবে না তারা। সেই অনুযায়ী, নিলামে মাত্র তিন ক্রিকেটারকে সই করিয়েছে সানরাইজার্স- কেদার যাদব (২ কোটি), মুজিব উর রহমান (১.৫ কোটি টাকা) এবং জগদীশ সুচিত (৫০ লাখ)। আর আমরা? কলকাতা? বাংলা? সিএবি? বাংলার তো "ক্রিকেটপ্রেমী বিধায়ক"-এর খামতি নেই। ইডেনে ম্যাচ থাকলে ভিভিআইপি টিকিট নিয়ে বুক চিতিয়ে সদলবলে মাঠে ঢোকেন। কোই এই যে আইপিএল অকশন হয়ে গেল, এবারও একজন বাংলার ক্রিকেটারকে কেকেআর দলে নিল না-কোই কেউ তো টুঁ শব্দটিও করলেন না! সিএবিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মিনি অকশনে এবার নিয়ম বদল হওয়ায় পাঁচ ক্রিকেটারের নাম পাঠানো হয়েছিল। বিবেক সিং নাম কেনা বেচায় উঠতে দেখেছিলাম। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখায়নি। কেকেআর তো নয়ই। ঋধিমান সাহা, শ্রীবস্ত গোস্বামী, শাহবাজ নাদিম, ঈশান্ত পোড়েলদের নিজ-নিজ দল এবারও রেখে দিয়েছে। কারোর কথা কেকেআর আগে কিন্তু ভাবেইনি। তাই ওঁরা অন্য দলে। এবারের মিনি অকশন দেখছিলাম। কেকেআর টেবলে বসেছিলেন এই দলের মালিকানায় থাকা শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান। আর জুহি চাওলা কন্যা জাহ্নবী। গ্ল্যামার বাড়াতে বসেছিলেন। ক্যামেরায় যা ধরা পড়লো-তাতে স্পষ্ট কেকেআরের রিং মাস্টার সিইও ভেঙ্কি মাইসোর। কতো টাকা নিয়ে কার জন্য কতোটা পর্যন্ত যাওয়া যাবে -সব জানতেন। মস্তানি দেখাচ্ছিলেন। একজন বাংলার ক্রিকেটার কি নেওয়া যেত না? আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা থাকা অনুষ্টুপ মজুমদার? পাতে দেওয়া যায় না? ঘরোয়া ক্রিকেটে- সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওঁর স্ট্রাইক রেট দেখেছেন - ভেঙ্কি? বিবেক সিংয়ের ব্যাটিং দেখেছেন? অভিমুন্য ঈশ্বরনকে চলতি টেস্ট সিরিজে স্ট্যান্ড বাই রাখা হয়েছিল। ব্যাস্- দায় শেষ। শুনছিলাম, রাজ্যের এক প্রাক্তন ক্রিকেটারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল -সিনিয়র দলের প্রতিভা থাকলে নাম পাঠাতে। পাঠিয়েছিলেন? নাকি ভুল করে নিজের নামটাই লিখে দিয়েছিলেন! রসিকতা করে লিখলাম। এটা করেননি। কিন্তু তিনি ও সিএবি'র কর্তারা কেউ হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি মহম্মদ আজহারের মতন এখনও প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেননি-বাংলার ক্রিকেটারদের কাউকে দলে না নিয়ে ঠিক করা হল না। বাংলার দুয়ারে সরকার নির্বাচনের ডাক। বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার শাহরুখ খানের সমালোচনা এখনকার শাসক দলের বিধায়ক করে কিছু বলবেন না। যেটা হায়দরাবাদে এমএলএ নগেন্দ্র করে দেখাতে পারেন। প্রতিবাদ চাই। একজোটে হয়ে প্রতিবাদ। কেকেআর দলে বাংলার ক্রিকেটার না রাখলে ইডেনে " নো আইপিএল "। যে দল "সোনার বাংলা" বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পথে-ঘাটে তাঁদের কেউ তো বলুক বাংলার ক্রিকেটারদের হয়ে! ওটাও দিল্লি না বল্লে করা যাবে না। কারণ সেলেবদের যে ওই দলের সবসময় প্রয়োজন। তাই সে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক স্বরই হোক আর যাই হোক। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? এখানেও বাংলা বঞ্চনার শিকার। কেন এর পাল্টা স্বর চড়ানো হবে না? কেন মেগা স্টারদের বিনা বাধায় দল নিয়ে ইডেনে ঢুকতে দেব? কেন হায়দরাবাদের মতো বলতে পারবো না- আরে স্টিভ স্মিথ তো বল বিকৃতির আরেক খলনায়ক। তাঁকে কোটি টাকা বিলিয়ে কেন কিনতে হল! কেকেআর নামের সঙ্গে আজও "ক্যালকাটা " নামটা জড়িয়ে। কেন আওয়াজ উঠবে না, কলকাতার নাম ছাড়ো। নাইট রাইডার্সে কলকাতা বা বাংলার কেউ নেই ২৫ জনে। মেনে নেবো। কিন্তু " কলকাতা "নামের মধু নেব-সিএবি'কে মোটা টাকা দেব কিন্তু প্লেয়ার নেব না। এসব চলবে না -- চলবে না। হোক হ্যাশট্যাগঃ নোক্রিকেটারনোকেকেআর(#NoCricketerNoKKR)