Written By দীপঙ্কর গুহ
ছবিঃসৌ-টুইটার।
ভারত বা ইংল্যান্ড কোনও দলই বিদেশের মাঠে "পিঙ্ক বল" টেস্ট এখনও জেতেনি। আবার দু-দলই হোম "পিঙ্ক বল" টেস্ট জিতেছে। ভারত হোমে বিশ্ব ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে হারালেও, বিদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম "পিঙ্ক বল" টেস্টে হারে। এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে সকলে আউট হয়ে যায়। ভারত টেস্টে সবচেয়ে কম রানের ইনিংসটি খেলে। বিশ্ব ক্রিকেটের পরিসংখ্যান বলছে আইসিসি এইধরনের ক্রিকেটকে মনোনয়ন দেওয়ার পর , প্রায় ১৫ টি ম্যাচ হয়েছে। অর্ধেকের বেশি হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে। আর সব ম্যাচ জিতেছে হোম টিম - অস্ট্রেলিয়া। এখনও পর্যন্ত একটিও ম্যাচ ড্র হয়নি। একমাত্র শ্রীলঙ্কাই সেই দল যেদল বিদেশের মাটিতে "পিঙ্ক বল"টেস্ট জিতেছে। ২০১৭ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানকে এবং ন'মাস পর বারবাডোজে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কী হবে আমেদাবাদের মোতেরায়? দিনের আলো কমে এলেই এই স্টেডিয়ামের ক্যানোপিতে ( ছাদের ঢাকনা) বসানো এলইডি লাইট গোটা মাঠে ছড়িয়ে পড়বে। এই ধরনের লাইটে মাঠের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে না। সন্ধ্যার এর এইসময় যে হাওয়া বইতে থাকে -তাতে সুইং বোলাররা বাড়তি সুবিধা পাবে। আর এই কারনে ইংল্যান্ডের সেরা উইকেট শিকারী পেসার জেমস অ্যান্ডারসন বাড়তি সুবিধা তুলে আনার ক্ষমতা রাখেন। আগের টেস্ট না খেলে বিশ্রাম পেয়ে অ্যান্ডারসন আরও তরতাজা। বিশ্বের প্রথম বোলার এই অ্যান্ডারসন-যিনি "পিঙ্ক বল" হাতে নিয়ে উইকেট তুলে নেন। ২০১৭ তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিগ ব্রাথওয়েটকে উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলিয়ে ফিরিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন। আর সেই ম্যাচ ব্রিটিশ ব্রিগেড জিতেছিল- এক ইনিংস ও ২০৯ রানে। বিশাল ব্যবধানে জয়। যদিও সেই ম্যাচেই অ্যালস্টার কুক ডবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। এখনকার অধিনায়ক রুট তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন সেঞ্চুরি করে। ইংল্যান্ড পেসাররা দাপট দেখিয়ে ওঃ ইন্ডিজকে ১৬৮ ও ১৩৭ রানে থামিয়ে দিয়েছিল সেই টেস্টে। এরপর অ্যাশেজ সিরিজেও হয় " পিঙ্ক বল" টেস্ট। তাতেও অ্যান্ডারসনের অডিলেডে বোলিং ( ৫/৪৩) ছিল নজর কাড়া। যদিও ইংল্যান্ড রুটের ৬৭ রানে ভর করে ২৩৩ রান তোলে। অজিরা ১২০ রানে জেতে। কয়েকমাস পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঘটে বড় বিপর্যয়। ইংল্যান্ড অকল্যান্ড "পিঙ্ক বল"টেস্টে মাত্র ২০.৪ ওভারে ৫৮ রানে ইনিংস শেষ করেছিল। বিশ্বের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে অজিদের এটি ছিল সবচেয়ে কম রানের তালিকায় সপ্তমতম। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবচয়ে কম রানের ইনিংস। সেই ম্যাচে কিউই পেসার জুটি ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদি ইংল্যান্ডকে কোনঠাসা করে দিয়েছিল ২৭ রানে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে। ক্রেগ ওভারটন সেদিন লড়াকু অপরাজিত ৩৩ রান না করলে আরও বড় লজ্জায় ডুবতে হত ইংল্যান্ডকে। সেই ম্যাচেই আবার কেন উইলিয়ামস আর হেনরি নিকোলস জোড়া সেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড অবশ্য ৩২০ রান করে। কিন্তু তাতেও ইনিংস পরাজয় রুখতে পারেননি রুটরা। আর ভারত? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ড সভাপতি হয়েই ভারতে প্রথমবার "পিঙ্ক বল" টেস্ট খেলার উদ্যোগ নেন। ইডেনে ভারত খেলতে নামে বাংলাদেশ। দুটি টেস্টের সিরিজের শেষটি ছিল ইডেনের "পিঙ্ক বল" টেস্ট। ২০১৯ সালের কথা। ঈশান্ত শর্মার (৫/২২) দাপটের সামনে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি ( ১০৬ )। তিন ঘন্টার মধ্যে ইনিংস শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি ১৩৬ রানের ইনিংস সাজিয়ে দিলে দল প্রথম ইনিংসের লড়াইয়ে ২৪১ রানে এগিয়ে যায়। আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ঈশান্ত শর্মা আঘাত হানেন। টপ অর্ডারের তিন উইকেট নিয়ে নেন। যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের সেরা সংগ্রাহক মুসফিকুর রহিম ( ৭৪রান)। এই ইনিংসে ১৯৫ থামে বাংলাদেশের। ম্যাচের তৃতীয় দিন ন'টি ওভারও লাগেনি ভারতের ম্যাচ জিততে। আর সেই ম্যাচ জিতে টিম ইন্ডিয়া টানা চারটি টেস্ট ম্যাচে ইনিংসে জেতার নজির গড়েছিল। আর অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাডিলেড "পিঙ্ক বল"টেস্ট ২০২০ র লজ্জাই ছিল টিম ইন্ডিয়ার। আর সেই টেস্ট নতুন বছর অন্য চেহারায় বিশ্ব ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনে রাহানের ভারতকে। আর এই ২০২১ এর দ্বিতীয় মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কোহলির ভারত। মোতেরায় " পিঙ্ক বল" টেস্ট কোহলি-রুটদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ।