Written By দীপঙ্কর গুহ
ছবিঃ সৌ-টুইটার
ভারত-ইংল্যান্ডের চার টেস্টের সিরিজের তৃতীয় টেস্ট শুরু হল বুধবার। বেলা আড়াইটার সময় শুরু হল। দিন-রাতের পিঙ্ক বল টেস্ট। প্রথম দিনের শেষে উইকেট পড়লো ১৩ টি। তার মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার দু'জনই নিলেন ৮ টি! মোট রান সংগ্রহ হলঃ ২১১।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেরও নয়া প্রযুক্তির আলো নিভে গেল। রহস্যময় হয়ে উঠেছিল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম তখন । সকালে যা ছিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্টেডিয়াম-খেলা শুরুর আগে দুপুর-দুপুর নাম বদলে গেল। কিন্তু বদলানো না ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ভারতীয় উইকেটে স্পিন বল খেলার টেকনিক। ফলে ১১২ রানে ইনিংস শেষ।
টস জেতা দরকার ছিল কোহলির। তা হারলেন। কিন্তু সবকিছু হারালেন না। চেয়েছিলেন ব্যাট করতে প্রথম থেকেই। করলেন। তবে প্রথমদিনের শেষের দিক থেকে অর্ধেক সেশন। দিনের শেষে ভারতের রানঃ ৩ উইকেটে ৯৯। আরও ১৩ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ থেকে।
ক্রিজে ব্যাট হাতে 'হিটম্যান" রোহিত শর্মা। এক ডজন হাফ সেঞ্চুরি ( ৫৭ ব্যাটিং) হয়ে গেল টেস্টে। আছেন সঙ্গী দলের সহ-অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। ফিরেছেন শুভমন গিল(১১), চেতশ্বর পূজারা (০) এবং অধিনায়ক কোহলি (২৭)। পরিসংখানে দেখলাম, কোহলি আন্তর্জাতিক ম্যাচে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছেন - ৪৫৯ দিন আগে!
গুজরাটে ম্যাচ। গুজরাটের মানুষ দেশের প্রধানমন্ত্রী। নাম বদলে এই গর্বের ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি হয়ে গেল তাঁর নামেই। আর সেইদিনই এই রাজ্যেরই ক্রিকেটার সফল হলেন। অক্ষর প্যাটেল। তিনি কোনও "শাহ" নন, কোনও " মোদি" পদবীরও নন। তিনি স্পিন জাদুকর হয়ে উঠলেন। গোটা ইংল্যান্ড দল খেললো ৪৮.৪ওভার। আর তার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ওভার হাত ঘোরালেন অক্ষর। তাতে ক্ষয়ে গেল সব প্রতিরোধ। তিনি ৬ উইকেট নিলেন ৩৮ রান খরচ করে ( বোলিং বিশ্লেষণঃ ২১.৪-৬-৩৮-৬)। তাঁর সিনিয়র স্পিনার অশ্বিন নিলেন ৩ উইকেট ( ১৬-৬-২৬-৩)। আর শততম টেস্ট খেলতে নামা ইশান্ত নিলেন প্রথম উইকেটটি (৫-১-২৬-১)।
আর ব্রিটিশ ব্রিগেড? ম্যাচের শুরুতে ওপেনার জ্যাক ক্রলির প্রায় দুটি ঘন্টা উইকেটে কাটিয়ে ৫৩ রান তোলা। আর ম্যাচে দিনের খেলা শেষ হতে বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচের দুটি উইকেট। ক্রলি করলেন ৮৪ বলে ৫৩ রান । আর বাকিরা করলেন ২১১ বলে আরও ৫৩ রান। "বার্মি আর্মি "( ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাব) সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে- এমন বিশ্বসেরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এমন ২২ গজ পিচ নিয়ে। প্রথমদিনের প্রথম ঘন্টা থেকে বল স্পিন করতেই পারে, তা বলে ধূলো উড়বে! দিনের শেষে এমন দাবিও ভাসিয়ে রাখা হল -এক প্রান্তের উইকেটে "গাড্ডা" তৈরি হয়ে গেছে যে বল করতেই অসুবিধা হচ্ছে। সঙ্গে হৈচৈ আম্পায়ারিং মান নিয়ে। তৃতীয় আম্পায়ার ভারতীয়। যাবতীয় প্রযুক্তি আছে হাতের কাছে। নিজের দক্ষতা -অভিজ্ঞতা জাহির না করে একটু সময় নিয়ে "নট আউট" বলতেই পারতেন। এক লহমায় দেখে বলাতেই অবিশ্বাস রুটদের। কিন্তু প্রযুক্তি বারবার দেখানোতে স্পষ্ট- আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত সঠিক। বেঠিক ছিল -সিদ্ধান্ত জানালোর স্কিলটি।
একটা হিসেব টিম ইন্ডিয়ার ম্যানেজমেন্ট টিম ঠিক করেছে। ৯ নম্বর পর্যন্ত ব্যাটসম্যান ( ওয়াসিংটন সুন্দর কিবাং অক্ষর)। সিরাজের বদলে বুমরা। আর কুলদীপের বদলে সুন্দর। প্রথমদিন বাঁহাতি স্পিনারদের দাপটেও একটি ওভারও করার সুযোগ পাননি সুন্দর।
আর ইংল্যান্ড? প্রথম টেস্ট জিতেও দ্বিতীয় টেস্টে করেছিল চারটি রদবদল। দ্বিতীয় টেস্ট হেরে তৃতীয় টেস্টেও সেই চার ক্রিকেটার বদল। প্রথম টেস্টের সফল স্পিনার বেসকে খেলানো হল না এমন পিচে। তিন পেসার ( অ্যান্ডারসন, জফ্রা আর্চার আর স্টুয়ার্ট ব্রড) আর এক স্পিনার। বাকি সাত ব্যাটসম্যান। উইকেট বুঝতে না পেরে এক স্পিনারে এই টেস্ট খেলতে নেমে শুরুতেই ব্যাকফুটে রুটরা। পিঙ্ক বলে স্পিনাররা প্রথমদিন থেকেই ভেল্কি দেখাচ্ছে এতো বলটিই না ইজ্জত খোয়ায়।
দ্বিতীয়দিন কি হিটম্যানের দিন? শিশিরে রোহিতের যে সমস্যা হচ্ছে না - বোঝা হয়ে গেছে। ইংল্যান্ড পেসাররা মাথাব্যাথার কারণ হতে পারেননি। চিন্তা শুধু বাইশ গজের জমি নিয়ে। বল মর্জি মাফিক চলছে মাঝেমাঝে। গিল-কোহলি-পূজারা বলের মর্জিটাই মাপতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেখা যাক ব্যাটিংয়ের ল্যাজ ছোট্ট করে খেলতে নেমে বিরাট-রবিরা বাজি জেতেন কিনা।