Written By অনিমেষ বৈশ্য
তিনি যেমন ডিস্কো ড্যান্সারের নায়ক, তেমনই তিনি তাহাদের কথা-রও নায়ক। বিচিত্র চরিত্রে অভিনয় করা মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীর মজ্জাগত। তবে শুধু রূপালি পর্দা নয়, জীবনটাকেও রঙ্গমঞ্চের আদলে তৈরি করেছেন উত্তর কলকাতার গৌরাঙ্গ। একদা নকশালপন্থী, তারপর সিপিএম, তারপর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, তারপর ব্রিগেডের মঞ্চে নরেন্দ্র মোদীকে সুসোয়াগতম...। মৃগয়ার নায়ক কখন যে রাজনীতির ময়দানকে মৃগয়াক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছেন তার তত্ত্বতালাশ করতে গিয়ে রীতিমতো ধাঁধা লাগার জোগাড়।
তাঁর একটা গান ছিল, ‘কলকাতারই রকে কত আড্ডা মেরেছি/ বোম্বে গিয়ে জিরো থেকে হিরো হয়েছি।’ মিথ্যে কথা বলেননি বাঙালিবাবু। হতাশার কানাগলিতে ঘুরপাক খাওয়া বাঙালি যুবকরা মিঠুনের লড়াইয়ে খুঁজে পেয়েছে বেঁচে থাকার সুবাতাস। এর বারান্দায় শুয়ে, ওর কলে জল খেয়েও যে বোম্বেতে টক্কর নেওয়া যায় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন মিঠুন। তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি জল ঢোঁড়া নন, বেলে বোড়া নন, তিনি আদতে বাংলার জাত গোখরো। তুড়ি মেরে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করার একটা নিজস্ব ধাঁচা তৈরি করেছেন এমএলএ ফাটাকেষ্ট। বৃন্দাবনের টিকিট কেটে দুষ্টকে ‘মায়ের ভোগে’ পাঠিয়ে দিয়ে তিনি প্রচুর খুচরো পয়সার ঝনঝনানি শুনেছেন। তবে সে সবই পর্দায়। রাজনীতির ময়দানের পিকচার আভি বাকি হ্যায়।
মিঠুন মুম্বই থেকে মূল ধারার বাংলা ছবি করতে এলেন যখন, তখন তাঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। মুম্বইতে তাঁর বাজারও পড়ে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি যখন কলকাতায় এসে মোদীর হাত ধরলেন তখন অতি বামপন্থার ঝাঁজ তাঁর নেই। মমতার ঝাঁজও তিনি ঘামে-রক্তে ঠাহর করতে পারছেন না। ব্রিগেডের মঞ্চে উঠলেন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে। মোদীও তাঁকে ‘বাংলার ছেলে’ বলে সম্বোধন করলেন। বাংলার মেয়ে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উদয় হলেন বাংলার ছেলে মিঠুন। খুব সচেতন ভাবেই মোদী তাঁর গায়ে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় ‘বাঙলার ছেলে’ তকমাটা সেঁটে দিলেন। ব্রিগেড থেকে নতুন এক সমীকরণের জন্ম হল। বাংলার মেয়ে বনাম বাংলার ছেলে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনই রাজনীতিতে আসছেন না। তা হলে বাঙালি বাবুর পিদিমটা কে জ্বালিয়ে রাখবেন? দিলীপ ঘোষদের দিয়ে যে এ কাজ হবে না, তা বিলক্ষণ জানেন মোদী-শাহরা। তাই আরব সাগরের তীর থেকে নিয়ে এলেন বাঙালি অবতারকে, যাঁর বিপ্লব স্পন্দিত বুকে একদা লেনিন ছিলেন, তিনি এখন জয় শ্রীরামের চেলা। ব্রিগেডে বলেছেন বটে, ‘এক ছোবলেই ছবি’, তবে কে ছোবল দেবেন, কে-ই বা ছবি হবেন তা পরে দেখা যাবে। তিনি বুকে চাপড় মেরে বলেছিলেন, ‘আমি গর্বিত, আমি বাঙালি।’
তবে তিনি কোন অবতারে আবির্ভূত হবেন, তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে আমজনতা। তিনি মিনিস্টার ফাটা কেষ্ট নাকি শুকনো লঙ্কার চিনু নন্দী---বোঝা যাবে ২ মে-র পর।