Written By দেবোপম সরকার
আবারও দুঃখের খবর টলিপাড়ায়। কয়েক মাস আগে প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্ত্রী দীপা চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হয়েছে। আজ রবিবার ভোর তিনটে নাগাদ সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হওয়ার মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যেই মারা গেলেন স্ত্রী দীপা চট্টোপাধ্যায়। আজকেই কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর প্রয়ানে শোকস্তব্ধ টলিপাড়া। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালেও। গত বছর ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ৪ মাসের মধ্যেই চলে গেলেন তাঁর স্ত্রী দীপা চট্টোপাধ্যায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোজফিতে স্নাতক দীপার সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে হয় ১৯৬০ সালের ১৮ এপ্রিল। সংবাদমাধ্যমকে সৌমিত্র কন্যা পৌলমী বসু জানান, তাঁর মা দীপা চট্টোপাধ্যায় ৪৫ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।
সারা জীবন এক অসাধারণ ব্যক্তির সঙ্গে ঘর সংসার করতে গিয়ে বিরাট আত্মত্যাগ করেছিলেন দীপা চট্টোপাধ্যায়। স্বামী প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলচিত্র জগৎ নাটক কবিতায় জগতে অসামান্য সফল এক ব্যক্তি। সৌমিত্র’র গোটা সংসারকে আগলে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সর্বদাই অল্প কথার মানুষ। তবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বন্ধু বৎসল ও অতিথি পরায়ণ দয়ালু মনের মানুষ। নায়ক স্বামীর সাফল্যের অন্যতম প্রেরণা ছিলেন দীপা দেবী। যার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন অন্তরাল জীবন। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ফিলোজফি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ। দীপা দেবী দারুন ব্যাডমিন্টন খেলতেন। সময় পেলেই ব্যাডমিন্টন অনুশীলন করতেন। স্বামীর কথা মাথায় রেখে ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ারও বাদ দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় প্রথম ছবি অপুর সংসার মুক্তি পেয়েছে অল্পবিস্তর নাম হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে করলেন ১৯৬০ সালে। কলেজ জীবন থেকেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর নিবিড় ভালোবাসা এবং প্রেম। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তখন নাটক করছেন চুটিয়ে এবং আকাশবাণীতে ঘোষক হিসেবে অল্প মাইনের চাকরি করছেন। দীপা ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রেম এবং বিয়ে করার মেনে নিতে পারেননি দীপা দেবীর বাবা। ফলে কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন দীপা দেবীকে। কিন্তু দীপা দেবী বদ্ধপরিকর তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করবেন। এরপর সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশনায় বড় পর্দায় অপুর সংসার মুক্তি পেল। সেই সিনেমার সাফল্যের পর দীপা দেবীর বাবা বিয়ে দেবার জন্য মত দিলেন। জীবনে ওঠানামা দুঃখ দারিদ্রতা সবকিছুকেই হাসিমুখে মানিয়ে নিয়ে সবাইকে আকড়ে সংসার করে গেছেন দীপা দেবী। এক পুত্র এবং একমাত্র কন্যাই ছিল তাঁর অন্তরাল জীবনের সঙ্গী। জীবনে একমাত্র উত্তমকুমারের আহবানে বিলম্বিত লয় নামক এক সিনেমায় এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন দীপা দেবী সেই প্রথম এবং সেই শেষ। ক্রমেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছেলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে নিজেকে আরও সংসার কেন্দ্রিক করে তোলেন। তবে তা নিয়ে কিন্তু কখনও তিনি এক বিন্দু বিসর্গ বিরক্তি প্রকাশ করেননি। তাঁকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। কয়েক মাস আগেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সিনেমা প্রেমী মানুষ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুর আগে তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি সেই সময়ে দীপা দেবীও ছিলেন বিছানায় শয্যাশায়ী। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পুরো পরিবারের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস ধরে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ব্লাড ক্যান্সার হবার দরুন ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে আসতেন। সেখানেই আজ রবিবার ভোর তিনটে নাগাদ চির ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন দীপা চট্টোপাধ্যায় এবং হয়তো বিধাতার লিখনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছেই চলে গেলেন সারা জীবনের মতো বলেও মন্তব্য শুভানুধ্যায়ীদের। রেখে গেলেন ছেলে কন্যা এবং নাতিকে। অনেক প্রবীণ সিনেমা জগতের মানুষরা যারা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধু ছিলেন তাঁরাও আজ গভীর ভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত।