Written By কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
গত বছর আই পি এল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ট্রফি নিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ক্রিকেটারদের উৎসব।--ফাইল ছবি।
করোনার জন্য গত বছরের আই পি এল এপ্রিল থেকে পিছিয়ে গিয়ে হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। পুরো টুর্নামেন্টই হয়েছিল আমিরশাহিতে। এবার নির্ধারিত সময়েই আই পি এল শুরু হচ্ছে। সব খেলাই হবে ভারতে। যদিও সারা দেশে এখন করোনার দ্বিতীয় দফার আক্রমণ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতটাই যে আপাতত যে ছয়টি শহরে আই পি এল শুরু করার কথা ভাবা হয়েছে তাদের মধ্যে মুম্বই-এর করোনা গ্রাফ ক্রমশ উর্দ্ধমুখী। আগামি শুক্রবার রাত আটটা থেকে সোমবার সকাল সাতটা অবধি সে শহরে লক ডাউন। এবং লক ডাউনের মধ্যেই শনিবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ম্যাচ দেওয়া হয়েছে। সে ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা চেন্নাই সুপার কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের। ওয়াংখেড়েতে ম্যাচ হবে, কিন্তু সেই মাঠের আটজন মাঠকর্মীই করোনা আক্রান্ত। মুম্বইতে শিবির করেছে দিল্লি এবং রয়াল চ্যালেঞ্জ বাঙ্গালোর। দুই দলেরই একজন করে ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত। দিল্লির অক্ষর প্যাটেল আর বাঙ্গালোরের দেবদত্ত পাল্লিকাল।
এই সব মাথায় নিয়েই আই পি এল শুরু হচ্ছে ৯ এপ্রিল। আপাতত দুটি শহরে খেলা হবে। চেন্নাই আর মুম্বই। পরে এই দুই শহরের সঙ্গে যুক্ত হবে আমেদাবাদ, দিল্লি, কলকাতা ও বেঙ্গালুরু। কোনও টিমই নিজেদের শহরে খেলার সুযোগ পাবে না। কোনও মাঠেই থাকবে না দর্শকদের প্রবেশাধিকার। প্রথম দিন চেন্নাইয়ে গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে মোকাবিলা রয়াল চ্যালেঞ্জ বাঙ্গালোরের। পরের দিন মুম্বইয়ে মুখোমুখি চেন্নাই সুপার কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালস। ১১ এপ্রিল চেন্নাইয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম ম্যাচ। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আর ১২ এপ্রিল মুম্বইয়ে রাজস্থান রয়ালসের সামনে পাঞ্জাব কিংস। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ম্যাচগুলি হবে চেন্নাই আর মুম্বইয়ে। ২৬ এপ্রিল আমেদাবাদে প্রথম ম্যাচ। সে ম্যাচে কলকাতার সঙ্গে লড়াই পাঞ্জাব কিংসের। দিল্লিতে প্রথম ম্যাচ ২৮ এপ্রিল। খেলবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। বেঙ্গালুরু আর কলকাতায় প্রথম ম্যাচ ৯ মে। সেদিন দুপুর তিনটেয় চেন্নাই সুপার কিংস আর পাঞ্জাব কিংসের ম্যাচ দিয়ে খেলা শুরু হবে বেঙ্গালুরুতে। আর সেদিনই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কলকাতায় প্রথম ম্যাচে খেলবে আর সি বি আর সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আই পি এল-এর দুটি কোয়ালিফায়ার, একটি এলিমিনেটর ও ফাইনাল আমেদাবাদে। ফাইনাল হবে রবিবার ৩০ মে।
তেরো পেরিয়ে চোদ্দয় পা দিচ্ছে আই পি এল। ভারতীয় ক্রিকেটের সোনার রাজহাঁস। গোটা ভারতীয় বোর্ডের খরচ চালায় আই পি এল। শুধু টিভি সত্ত্ব থেকেই হয় চার হাজার টাকা। এছাড়া আছে বিভিন্ন স্পনসর থেকে আয়। গতবার ভিভো সরে গিয়েছিল ভারত-চিন রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতির জন্য। এবার আবার তারা ফিরে এসেছে। রয়েছে অন্য স্পনসররাও। তাই রঞ্জি ট্রফি না হলে ক্ষতি নেই। আই পি এল-এর জন্য সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবেই। সে করোনার প্রকোপ বাড়ুক আর কমুক।
তবে আই পি এল-কে শুধু বাণিজ্যিক বিনোদন ভাবলে ভুল করা হবে। তেরো বসন্ত পেরিয়ে এখন সে ভারতীয় ক্রিকেটের মেরুদণ্ড। নতুন নতুন প্লেয়ার আবিষ্কারের জায়গা হল আই পি এল। এই কুড়ি বিশের লড়াই থেকেই জাতীয় দলে ঢুকেছেন বা প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন শুভমন গিল, থঙ্গরাসু নটরাজন, ওয়াশিংটন সুন্দর, মহম্মদ সিরাজ, নভদীপ সাইনি, শ্রেয়স আয়ার কিংবা শার্দুল ঠাকুর-ক্রূনাল পান্ডিয়ারা। আসলে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রায় দু মাস প্র্যাক্টিস করে কিংবা ম্যাচ খেলার একটা সুফল পাওয়া যায় এবং সেটাই এখন পাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। কুড়ি ওভারের দ্বৈরথ খুঁজে দিচ্ছে টেস্টের দুর্দান্ত প্রতিভাদের। আই পি এল তাই এখন শুধু সোনার রাজহাঁস নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের ধাত্রীগৃহও বটে।
আটটি টিমের মধ্যে তিনটি টিম এখনও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ট্রফিটি ধরার সুযোগ পায়নি। এরা হল বিরাট কোহলির বাঙ্গালোর, কে এল রাহুলের পঞ্জাব আর ঋষভ পন্থের দিল্লি। এবার তারা নতুন করে ঝাঁপাবে ট্রফি জয়ের জন্য। কিন্তু পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, তিন বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসকেও রাখতে হবে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের তালিকায়। এদের বাইরে আছে প্রাক্তন তিন চ্যাম্পিয়ন কলকাতা, হায়দরাবাদ ও রাজস্থানও। তাই বাদ দেওয়া যাবে না কাউকেই। ক্রিকেট এমনিতেই মহান অনিশ্চয়তার খেলা। আর আই পি এল-এ সেই অনিশ্চয়তার পরিমাণ আরও বেশি। তাই কোনও একটা টিমকে ফেভারিট না ভেবে সন্ধ্যায় আই পি এল-এর লড়াই উপভোগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।