Written By সৌমেন রায়চৌধুরী
১৭৫৫ সাল। ব্যবসার জন্য শ্রীরামপুর আসেন ড্যানিশরা। এখানে এসেই উপনিবেশ স্থাপন করে তাঁরা। প্রায় ৯০ বছর তাঁদের উপনিবেশ ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত ছাড়ে ডেনিসরা। তখন থেকেই একপ্রকার অবহেলায় পড়েছিল ঔপনিবেশিক স্থাপত্যগুলি। সংরক্ষণের অভাবে ভগ্নপ্রায় হয়ে যায় তা। বহুদিন পর সেগুলির সংস্কার করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান রাজ্য সরকার। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় কাজ। হেরিটেজ দফতর, পর্যটন দফতর ওই স্থাপত্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তাতে সাহায্য করে ডেনমার্ক সরকার। সম্প্রতি সেই সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পর বড়দিনের আগে খৃষ্টান ধর্মের এই স্থাপত্য গুলিকে সামনে রেখে আরোও একবার সেজে উঠেছে ডেনিস উপনিবেশের এই শহর। সেই সময়ের ইতিহাসকে আরও একবার বর্তমানের সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছে রাজ্য সরকার।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে ড্যানিশদের ব্যবসা বড় আকার নেয়। শ্রীরামপুরে ড্যানিশ গভর্নর হাউজ, চার্চ, কোর্ট ও ডেনমার্ক টাভার্ন, হোটেল, কফি হাউজ় তৈরি করা হয়। এর পরই শ্রীরামপুরে উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ৩ জনে মিলে শ্রীরামপুর মিশন তৈরি করেন। সেই সময়ই পড়াশোনার প্রসার লাভের জন্য স্কুল, কলেজ তৈরি করা হয় এখানে। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই সময়ে তৈরি হওয়া স্থাপত্য নিদর্শনগুলি কালের নিয়মে ধ্বংস হতে শুরু করে। তার মধ্যে ছিল কোর্ট চত্বরের ডেনিস গভর্নর হাউজ, প্যাগোডা ও ডেনমার্ক টাভার্ন সহ একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপত্য। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণের প্রাথমিক কাজ চলতি বছরে শেষ হয়েছে । এরপর খুলে দেওয়া হয়েছে টাভার্ন ও মিউজিয়ামটি। টাভার্নটি লিজ নিয়েছে কলকাতার পার্ক হোটেল।
টাভার্নটি অষ্টাদশ শতাব্দীর। যখন এখানে ডেনমার্কের কলোনি ছিল তৎকালীন সময়ে শ্রীরামপুরের নাম ছিল ফ্রেডরিকনগর। ডেনমার্কের রাজা ফ্রেডরিকের নামেই এই উপনিবেশের নামকরণ করা হয়। ডেনমার্কের রাজা মিশনারিজদের আশ্রয় দেন। এবিষয়ে শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলার সন্তোষ কুমার সিং বলেন, ‘ড্যানিশ উপনিবেশের স্থাপত্য শ্রীরামপুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। রাজ্য সরকার ও ডেনমার্ক সরকারের প্রচেষ্টায় ডেনমার্ক টাভার্নটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৭৮৬ সালে যেমন ছিল সেই রকমই রূপ দেওয়া হয়েছে। বহু বিদেশি পর্যটকও ঘুরতে আসছেন এখানে।’