Written By অনিরুদ্ধ সরকার
বাংলাদেশে এই প্রথম কোন রাজনৈতিক দল পরপর তিনবার সরকার গঠন করতে চলেছে। তৃতীয়বারের মতো সংসদ নির্বাচনে জিতে রেকর্ড করেছে আওয়ামী লীগ।এক কথায় হ্যাট্রিক করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বিপুল ভোটে জয়ী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ বারের মত প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।এ বার ভোটের লড়াই ছিল মূলত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দী নেত্রী বিএনপি সুপ্রিমো খালেদা জিয়া এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন নি। তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দণ্ডের কারণে নির্বাচনের বাইরে। সূত্রের খবর, তিনি রয়েছেন লন্ডনে । কারাবন্দী নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়াই ভোটযুদ্ধে নামে বিএনপি। একাধিক নামী মুক্তিযোদ্ধাদের হাত ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে বিএনপি। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামাতের ২২ জন নেতাকে বিএনপি নিজেদের প্রতীক ধানের শিস ধার দেয় ও ভোটে অংশগ্রহণে সাহায্য করে। বিএনপি জোট যে কোনও ভাবে ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া ছিল। কিন্তু ভোটের ফল বের হলে দেখা গেল, গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২ লা্খ ৩২ হাজার ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনা। সেখানে বিএনপি প্রার্থী এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩টি ভোট। এই ভোটের ফারাক বুঝিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের দাপটে কিভাবে বিএনপি খড়কুটোর মত উড়ে গেল। বাংলাদেশের সংসদে মোট আসন সংখ্যা ৩০০। সরাসরি সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। এর বাইরে আরও ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সাধারণ ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে এই ৫০টি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সূত্র থেকে পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী আওয়ামী লীগ জোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপি ছ’টি এবং বাকিরা চারটি আসন পেয়েছে। এর আগের তিনবার নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছিল তা ছিল একতরফা, ওই নির্বাচনে বিএনপি সহ একাধিক বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। আর ১৯৯৬ সালেও সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। আর এবার তো রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে চলেছে আওয়ামী লীগ। এবছরের বাংলাদেশের নির্বাচন আরও একটি দিক থেকে ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের দেশ ‘বাংলাদেশ’ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে ঠিক তিন বছর পর। অর্থাৎ, এই ভোটে যারা জিতবে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালনের দায়িত্ব তারাই পালন করবে। ২০২১-এ স্বাধীনতার ৫০ বছর। সেই বছরকে পাখির চোখ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিএনপি কর্তারাও কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন হাসিনা। ভোটে জিতে হাসিনার এবার শুধু তা বাস্তবায়নের পালা। দলীয় সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম ভোট হচ্ছে বাংলাদেশে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশ জুড়ে সে কারণে ছিল একাধিক নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলা হয় ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশ। শনিবার থেকে মোবাইলের থ্রি-জি এবং ফোর-জি পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। নাশকতার মোকাবিলায় শনিবার ভোটের আগের দিন থেকেই গোটা দেশ ছিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়া। রাস্তায় গাড়ি বন্ধ, নদীতে স্টিমার বন্ধ। বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও শনিবার রাত থেকে ভোটের দিনের রাত পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ১৭ জন। যার মধ্যে শাসক দলের কর্মীর সংখ্যাটাই বেশি। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “ নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে।” বিএনপি’র অভিযোগ, নির্বাচনের আগে থেকেই ব্যালট বাক্সে ভোট ভরে রাখা হয়েছিল। তাদের এজেন্ট ও ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে শুধু তাই নয় প্রকাশ্যেই জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এই নির্বাচনকে কার্যত প্রহসন বলে ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবি তুলেছে ঐক্যফ্রন্ট। আওয়ামী লীগ এসব কথায় বেশী আমল দিতে নারাজ। তারা জানিয়েছে, “জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি ভোট পায়নি। মানুষ আমাদের পাশে আছে।” এবারে ভোটে বেশ কিছু হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম শোনা গেছিল যার মধ্যে ছিল হিরো আলমের নাম। বগুড়া-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেনের কাছে হেরে যান আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। অন্যদিকে নড়াইল-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রিকেটার নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। নীলফামারী-২ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন অভিনেতা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আর মানিকগঞ্জ-২ আসনে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এবার অপেক্ষা বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ করে আরও একবার ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার। এগিয়ে চলুক নৌকা। এগিয়ে চলুক গণতন্ত্র।