Written By অনিরুদ্ধ সরকার
এক ধর্ষিতাকে বিয়ে করার পর তাঁকে সুবিচার পাওয়ানোর জন্য স্বামী নিজে আইন পড়লেন এবং স্ত্রীকেও আইন পড়ালেন। এযেন কোনো সিনেমার চিত্রনাট্য। ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানায়। হরিয়ানার জিতেন্দ্র ছত্তরের কঠিন প্রতিজ্ঞা, “আমার স্ত্রীকে যারা ধর্ষণ করেছে তাঁদের শাস্তি দিয়েই ছাড়ব।” হরিয়ানার জিতেন্দ্র পেশায় একজন চাষি ছিলেন কিন্তু তিনি আইন পড়েন স্ত্রীকে সুবিচার পাওয়ানোর জন্য। শুধু তাই নয়, স্ত্রীকেও আইন পড়তে বলেন। একজন চাষি থেকে আইনজীবী হওয়ার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না জিতেন্দ্র’র।
২০১৫ সালের ঘটনা, হরিয়ানার ছত্তরে গ্রামে থাকতেন জিতেন্দ্র। পরিবারের দেখাশোনায় তার বিয়ে ঠিক হয় ত্রিশ কিমি দূরের ঝিন্দ গ্রামের মেয়ের সাথে। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁদের এনগেইজমেন্ট হয়। এনগেইজমেন্টের পর তাঁদের মধ্যে ফোনে কথাবার্তা শুরু হয়। একদিন মেয়েটি জিতেন্দ্রকে বলে তাঁকে তার কিছু বলার আছে। জিতেন্দ্র মেয়েটির সাথে দেখা করলে সে বলে, “আমি একজন ধর্ষিতা। আমাকে আটজন মিলে গণধর্ষণ করে। তারা ওই ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করে এবং ছবিও তোলে। কাউকে এই ঘটনার কথা জানালে ওই ছবি সবাইকে দেখিয়ে দেবার কথা বলে, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি কাউকে একথা জানাতে পারিনি। আমি চাই না কোনো মিথ্যের মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ক শুরু হোক।” সে ছলছল চোখে জিতেন্দ্রকে বলে, “আমি এই সম্পর্ক চাই না। দয়া করে আমাকে বিয়ে করবেন না।” একথা শুনে জিতেন্দ্র’র চোখেও জল আসে। সে বলে, “আমি যদি এখন আপনাকে বিয়ে না করি তাহলে ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করবে না। আর আমি আপনাকে বিয়েই করব না আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি ন্যায় বিচার পাবেন।” ডিসেম্বরে বিয়ে হয় তাঁদের। এরপরই শুরু হয় তাঁদের জীবনযুদ্ধ। এরপর ওই আটজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন জিতেন্দ্রর স্ত্রী। মামলা শুরু হয়। একের পর এক হুমকির সম্মুখীন হতে থাকেন তাঁরা। অভিযুক্তরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় জিতেন্দ্র ও তাঁর স্ত্রীকে। শুধু তাই নয় জিতেন্দ্রকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়। তাঁকে মামালা তুলে নিতে ভয় দেখানো হয়, পয়সার লোভ অবধি দেখানো হয়। এদিকে জেলা আদালত দোষীদের খালাস করে দেয়। জিতেন্দ্র এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গ্রামের জমি বিক্রি করে জিতেন্দ্র ১৪ লক্ষ টাকা মামালার খরচ যোগান। একটা সময়ের পর জিতেন্দ্রর পক্ষে আর কোর্ট এবং আইনজীবীকে দেওয়ার মত পয়সা থাকে না। কিন্তু হাল ছাড়ে না সে। কারণ তাঁকে লড়তে হবে। জিতেন্দ্র জানে কোনো লড়াই-এর পথই মসৃণ হয় না। তখন সে ঠিক করে সে আইন পড়বে। পড়া শুরু করে। শুধু তাই নয়, স্ত্রীকেও সে আইন পড়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। স্ত্রীও আইন পড়া শুরু করে। তারা শুরু করে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ সমস্যার কথা শুনতে। মহিলাদের নির্যাতনের হাত থেকে সুবিচার পাওয়ানোর জন্য তাঁরা এগিয়ে আসেন। তাঁদের একটি দুবছরের সন্তান রয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁরা চণ্ডিগড়ে থাকবেন আইনজীবী হিসেবে নতুন জীবন শুরু করবেন। আর দু’জন মিলে গ্রামের মেয়েদের যেভাবে আইনি সহায়তা দিয়ে আসছেন তা দেবেন। জিতেন্দ্র’র কথায়- “অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, লড়াই চলবে।”
ফাইল চিত্র