Written By অনিরুদ্ধ সরকার
ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানা যায়, ‘পহেলা বৈশাখ’ কিম্বা ‘বাংলা নববর্ষে’র গোড়াপত্তন হয়েছে আকবরের হাত ধরে। আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ বলে পরিচিত। ভারতে ইসলামী শাসনকালে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হত। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বসরর চেয়ে ১১ কি ১২ দিন কম হয়। কারণ সৌরবৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। চাষাবাদের মত কিছু কাজ ঋতুনির্ভর। মোগল সম্রাট আকবর তাঁর সময় প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌরপঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। সম্রাট আকবার তাঁর দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ সিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর আগে তাঁর সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এই পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। সেকারণে ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনাও শুরু হয়। এর আগে বাংলাদেশে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্রমাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সাল অনুসারে বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়। মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং নানান আনন্দ উৎসব হত। এছাড়া বাংলাদেশের একাধিক ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা বৈশাখেই ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান চালু করেন। হালখাতা হল যে বছরটি চলে গেল সেই বছরের হিসাবের যোগবিয়োগ করে পুরনো খাতাটি তুলে রেখে নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন খাতার হিসাব চালু করা। প্রবীণরা বলেন, লাল শালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো নতুন এই হিসাব খাতায় ওপরে লেখা হতো ‘এলাহী ভরসা।’ এই ‘এলাহী’ শব্দটিও সম্রাট আকবরের ‘তারিখ ই এলাহী’ বা ‘দিন-ই-এলাহি’ থেকে এসেছে বলে জানা যায়। ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় যে, আগে বৈশাখের অনুষ্ঠানের চেয়ে চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানই ছিল আকর্ষণীয়। এই রেশ ধরেই নাকি বৈশাখের প্রথম পদার্পণ।‘মৈমনসিংহ গীতিকা’য় বাংলা নববর্ষের আবাহন ধ্বনিত হয়েছে—”আইল নতুন বছর লইয়া নব সাজ, কুঞ্জে ডাকে কোকিল-কেকা বনে গন্ধরাজ”। বাঙালির কাছে বৈশাখের ঐতিহ্য একেবারেই আলাদা এবং বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলা সংস্কৃতির ওপর একসময় থাবা বিস্তার করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতেই “ছায়ানট” ১লা বৈশাখ, ১৩৭২ এ রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গানটি গাওয়া হয়। “পহেলা বৈশাখ” বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম এক পরিচায়। বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। বাংলা মাসের এই নামগুলির মধ্যে ‘বৈশাখ’ নামটি এসেছে বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে।
16th April, 2021 08:39 am
15th April, 2021 08:59 pm
15th April, 2021 08:15 pm
15th April, 2021 06:51 pm