Written By অনিরুদ্ধ সরকার
১৯৬১র ১৯ মে অসমের শিলচরে ১১ জন বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৫২ র ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য শহিদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, সফিক, বরকত ও জব্বার। সেই ভাষা আন্দোলনের ৯ বছর পর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এমন আরও একটি আন্দোলন হয়েছিল এবং সে আন্দোলেনে একজন নারীসহ এগারোজন বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন অসমের বরাক উপত্যকায় সে কথা আমাদের অনেকেরই হয়ত অজানা। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইতে, অসমের শিলচরের রেলস্টেশনটির নাম হয়েছে ভাষা শহিদ স্টেশন।
পৃথিবীতে একই ভাষার জন্য দুটি আলাদা রাষ্ট্রে প্রাণ দেওয়ার ইতিহাস আর কোথাও নেই।অসমের ‘বরাক’ নদীর নামে জায়গার নামকরণ হয় বরাক উপত্যকা।১৯৬১ সালে তৎকালীন ‘অসম প্রাদেশিক সরকার’ বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার বাঙালি অধ্যুষিত শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির বাংলাভাষাভাষীদের প্রাণের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধু অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাঙালিরা। বিক্ষোভ ধীরেধীরে আন্দোলনের রূপ নেয়। ১৯৬১র ১৯ মে । সকাল থেকে ধর্মঘট চলছে। শিলচর রেলওয়ে স্টেশনের রেলপথ অবরোধ করেছে অবরোধকারীরা। সেসময় অসম রাইফেলসের একটি ব্যাটালিয়ন বাংলাভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১জন ভাষাসৈনিক। যারা হলেন কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডীচরণ সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব, হিতেশ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন দাস, তারিণী দেবনাথ, সুনীল সরকার এবং সুকুমার পুরকায়স্থ। নিহতদের মধ্যে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া কমলা ভট্টাচার্য বিশ্বের প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ। এই গুলি চালানোর ঘটনায় আহত হন অসংখ্য মানুষ। এই ঘটনায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে শিলচর শহরে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় শিলচর রেলওয়ে স্টেশন ও আশেপাশের এলাকা এবং শোকে স্তব্ধ ও হতবাক হয়ে যান বরাক উপত্যকার বাঙালিরা। সমগ্র বরাক উপত্যকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ২০ মে শোকার্ত আন্দোলনকারীরা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে শহীদদের দেহ নিয়ে শিলচর শহরে শোকমিছিল বের করে। তারপরেও চারটি ঘটনায় নিজের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে আরও চারজনকে। তারপর থেকেই অসমের একটি ডিভিশন হওয়া সত্ত্বেও বরাকের কাছাড়, হাইলাকান্দি আর করিমগঞ্জের সরকারি কাজের ভাষা বাংলা।অসম সরকার আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় বাংলাকে দ্বিতীয় রাজভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে।