গুয়াহাটি: স্বাধীনতার পরে ৭৫ বছর পার করেছে দেশ। এই স্বাধীনতা পেতে কম লড়াই করতে হয়নি। একই সঙ্গে যে জাতীয় পতাকার ইতিহাসও অত্যন্ত গর্বের। ভারতের বর্তমান জাতীয় পতাকা তিনটি সমান ভাগে বিভক্ত। উপরে গাঢ় গেরুয়া, মাঝখানে সাদা এবং নীচে গাঢ় সবুজ। সাদা অংশে গাঢ় নীল রঙের অশোক চক্র। নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পতাকা (National Flag of India) এই রূপ পেয়েছে। দেশের পঁচানব্বই শতাংশ ভারতীয়দের জাতীয় পতাকা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই৷ মত ফ্ল্যাগ ফাউন্ডেশন সিইও মেজর জেনারেল (অব.) অসীম কোহলি (Flag Foundation of India CEO Major General (Retd.) Asim Kohli)।
এক সাক্ষাৎকারে আশিম কোহলি জানান, জাতীয় পতাকা প্রসঙ্গে ভারতীয় আইনে অনেক কথাই বলা হয়েছে। জাতীয় পতাকা নিয়ে দেশের গর্ব করেন সেই ভারতীয়দের ৯৫ শতাংশের ত্রিবর্ণ (Tricolour) সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই৷ তারা নিশ্চিত নন যে এটিকে দিনরাত উত্তোলন করা যেতে পারে এবং এটি খাদি বা তুলা দিয়ে তৈরি করা। তিনি এটা খুবই দুঃখের বিষয় দেশে মানুষের নিজের জাতীয় পতাকা সমন্ধে ধারনা নেই।
তিনি আরও বলেছিলেন যে তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন যখন কিছু “শিক্ষিত এবং প্রবীণ” ব্যক্তি তাকে বলেছিল যে তারা ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের শেষে পতাকাটি নামিয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা বছরে ৩৫৬ দিন উত্তোলন করা আপনার অধিকার রয়েছে। আমরা বলি ‘আমেরিকাতে যাও’ এবং দেশের পতাকা সর্বত্র উড়তে দেখে আপনার ভালো লাগবে। ভারতে কেন এমন হয় না? একমাত্র কারণ হল সঠিক তথ্য কোনো মাধ্যমে মানুষের কাছে যাচ্ছে না,” তিনি বলেন।
আরও পড়ুন:Con Maduro | যোগাযোগ বাড়াতে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের নতুন টিভি শো
সাধারণ মানুষকে জাতীয় পতাকার সমন্ধে সঠিক ধারনা দিতে জানিয়েছেন, পতাকাটি তুলো, খাদি, সিল্ক এবং পলিয়েস্টার দিয়ে তৈরি হতে পারে। উপরের অংশ গেরুয়া, মাঝের অংশ সাদা এবং নীচের অংশ সবুজ হবে। মাঝের সাদা অংশে গাঢ় নীল রঙের অশোকচক্র, যাতে ২৪টি স্পোক থাকবে। পতাকাটির আয়তন ৩:২ অনুপাতে হতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, যদি সংবিধান সমন্ধে ধারনা রাখেন তবে সে জানতে পারবে সেখানে জাতীয় পতাকা গেরুয়া রং উপরের দিকে রাখতে হবে। ছিঁড়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত পতাকা তোলা যাবে না। পতাকা মাটিতে রাখা যাবে না। আগুনে পোড়ানোও নিষিদ্ধ। ঘর সাজানোর কাজেও ব্যবহার করা যাবে না জাতীয় পতাকা। আইন অনুযায়ী, জাতীয় পতাকার প্রতি কোনওরকম অসম্মান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি, তিন বছরের জেল এবং জরিমানা হতে পারে।
জাতীয় সম্মানের অপমান প্রতিরোধ আইন ১৯৭১ সালে একজন ভারতীয়কে ত্রিবর্ণের ল্যাপেল পিন বা ব্যাজ পরতে দেওয়া হয়নি। আইনের সংশোধনের পরে, এখন এটিকে কোমরের উপরে পরতে পারে তবে এটিকে সম্মানের সঙ্গে পরতে হবে। মেজর জেনারেল কোহলি বলেন, আপনি বাড়িতে যে ভাবে ভগবানের মূর্তিকে সম্মান দেন সেই ধরনের সম্মান জাতীয় পতাকা দিতে হবে।
শনিবার গুয়াহাটিতে সেনাবাহিনীর নারেঙ্গি মিলিটারি স্টেশনে তার ১০৭ তম “স্মৃতিসৌধের পতাকা” স্থাপন করা হয়। ফাউন্ডেশনটি লোকেদের তেরঙা সম্পর্কে শিক্ষিত করে এবং তাদের এটি উত্তোলন করতে অনুপ্রাণিত করে। ফাউন্ডেশন ২০০৯ সালে হরিয়ানায় প্রথম মনুমেন্টাল পতাকা স্থাপনে সহায়তা করেছিল। তারপরে, এটি সরকারী এবং বেসরকারী উভয় প্রতিষ্ঠানে তেরঙ্গা স্থাপন করে। কোহলি জানান, আমরা আনন্দিত যে কর্পোরেট সেক্টরের কিছু সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মনুমেন্টাল পতাকা স্থাপন করা শুরু করেছে। আমরা হর ঘর তিরঙ্গার কথা বললাম। আমাদের ফোকাস এখন এটি হর দিন তিরঙ্গা হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল সাধারণ মানুষের পতাকা হয়ে ওঠে।