Written By অনিরুদ্ধ সরকার
শুধু ঈদের দিন কিম্বা রমজান মাস-ই নয়, মহিলাদের জন্য বছরভর নামাজ পড়ার ব্যবস্থা কলকাতার দুই খ্যাতনামা মসজিদে। মঙ্গলবার ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে নাখোদা ও টিপু সুলতান মসজিদ। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের খোঁজে প্রথমেই নাখোদা মসজিদে। পড়ন্ত বিকেল, জাকারিয়া স্ট্রিটের হরেক রকম খাবার দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম নাখোদা মসজিদে।আট থেকে আশি সবার মুখে খুশির হাসি, রমজান শেষে আসছে ঈদ।মসজিদে দেখা মিলল মহিলারা নমাজ পড়ছেন। কলেজ পড়ুয়া হিনা পারভিন জানিয়েছে, সে বাড়িতেই নমাজ পড়ার পক্ষপাতী। আরেক বয়স্কা জসমিন বেগম স্মৃতি রোমন্থন করে জানালেন, প্রতি বছর রমজান মাসে তিনি মসজিদ আসেন, নমাজ পড়েন আর নমাজ শেষে ইফতারে যোগ দেন। এক অদ্ভুত ভালো লাগা আছে এর মধ্যে যার কোনো ব্যাখ্যা নেই তাঁর কাছে। আসলে ধর্মের কাজ ‘জোড়া দেওয়া’। নাখোদা মসজিদেও তার প্রমাণ মিলল। দেশি-বিদেশি, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই মেতে উঠেছেন ইফতারে। 'নমাজ' তো একটা রেওয়াজ মাত্র।নমাজ শেষে নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমি জানালেন, “শরিয়তে বলা হয়েছে, একমাত্র পর্দাঘেরা স্থানে বসেই মহিলারা নমাজ পড়তে পারবেন।” এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বহু মহিলা আসেন মসজিদে নমাজ পড়তে এবং তাঁরা মসজিদের এককোণায় বসে নমাজ পড়েন। এবার থেকে তাঁদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।মহিলাদের জন্য আলাদা নমাজ পড়ার জায়গা, স্নানঘর এবং বিশ্রাম ঘরেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
কচ্ছের সুন্নি মুসলমান 'কাচ্ছি মেমন' সম্প্রদায় এবং কিছু ধর্মপ্রাণ মুসলিম ধর্মাবলম্বীর আর্থিক সহায়তায় ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় কলকাতার বুকে গড়ে উঠেছিল নাখোদা মসজিদ। এই মসজিদ নির্মাণে মেমন সম্প্রদায়ের নেতা সমুদ্র বণিক আবদুর রহিম ওসমানের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন 'নাবিক'। 'নাখোদা' শব্দের অর্থও নাবিক।
মসজিদের মূল ফটক ফতেপুর সিক্রির বুলন্দ দরওয়াজার আদলে তৈরি। রয়েছে আকবরের সমাধি ও লালকেল্লার স্থাপত্য শৈলীও। চারতলা এই মসজিদে রয়েছে ১৫১ ফুট উঁচু ৩টি গম্বুজ ও ২টি স্তম্ভ। মসজিদের ভেতরে রয়েছে সুন্দর একটি ঝাড়বাতি। মার্বেলের মেঝে। এক সঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রার্থনা করতে পারেন এখানে।
ঈদের আগে একইভাবে সেজে উঠেছে ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ।১৮৪২ সালে টিপু সুলতানের কনিষ্ঠ পুত্র গুলাম মহম্মদ পিতার নামে টিপু সুলতান মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।কলকাতার প্রাচীন মসজিদ গুলির মধ্যে এটি অন্যতম।সেখানেও খুশির হাওয়া। নাখোদা মসজিদের মত সেখানেও মহিলাদের জন্য আলাদা নমাজ পড়ার জায়গা, স্নানঘর এবং বিশ্রাম ঘরেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।টিপু সুলতান মসজিদে দেখা হল নমাজ ফিরতি নার্গিসের সঙ্গে। তাঁর কথায়, “মক্কায় মহিলাদের নমাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। আর এখানে মেয়েদের যেহেতু নমাজ পড়ার নির্দিষ্ট জায়গা নেই তাই একটু তো অসুবিধা হয়-ই। তবে মসজিদে মেয়েদের নমাজের নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করে দিলে খুব ভালো হয়।” শিক্ষিকা নাসরিনের কথায়, “মুর্শিদাবাদের ভাবতা এবং বেশ কিছু মসজিদে মেয়েদের নমাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া আছে। সেখানে নিয়মিত নমাজ পড়া হয়। তবে নাখোদা এবং টিপু সুলতান মসজিদের এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক।” ইতিহাসের নিরিখে শহরের প্রাচীনতম এই দুই মসজিদের এহেন ভাবনাচিন্তায় রমজান মাসেই খুশির হাওয়া বাড়ল মুসলিম মহিলাদের মধ্যে।