Written By রঞ্জন সেনগুপ্ত
উদ্দ্যেশ্য মহৎ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত। আইন মোতাবেক যে সংস্থা এই তদন্ত করবে, তার নাম লোকাযুক্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৮ বছরের শাসনকালে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা কাজই শুরু করতে পারলো না ! গত নভেম্বরে কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম রায়কে লোকাযুক্ত হিসাবে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার । কিন্তু কাজ চালানোর বিধি তৈরি না হওয়ায় কার্যত অচল হয়ে রয়েছে লোকাযুক্ত । নবান্নের এক কর্তার কথায়, লোকাযুক্তকে কাজে লাগানোর বিষয়ে বাম সরকারের মতো এই সরকারও উদাসীন। জনগণের অভাব-অভিযোগকে মান্যতা দিতে ১৯৬৬ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনিক সংস্কার ট্রাইবুনাল যে দুটি সুপারিশ করেছিল, তারমধ্যে লোকাযুক্ত অন্যতম । ১৯৭১ সালে প্রথম লোকাযুক্ত গঠন করে মহারাষ্ট্র সরকার । এ রাজ্যে প্রথম লোকাযুক্ত আইন পাশ হয় ২০০৩ সালে । কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের প্রথম লোকাযুক্ত হিসাবে প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিযুক্ত করে ২০০৬ সালে । প্রথম দেড় বছর কাজ করার জন্য তিনি কোনও অফিস ঘর পাননি । ফলে ২০০৭ সালের শেষের দিকে তিনি কাজ শুরু করেন । লোকাযুক্ত পদ থেকে তিনি অবসর নেন ২০০৯ সালে । সূত্রের খবর, তাঁর আমলে ২০০৭ সালে ২০টি, ২০০৮ সালে ৮০টি এবং ২০০৯ সালে ২০০-র বেশি অভিযোগ জমা পরেছিল । বলাই বাহুল্য, তার বেশিরভাগেরই কোনও নিষ্পত্তি হয়নি । নবান্নের খবর, সেই আমলে এক বিধায়কের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে সরকারের কাছে শাস্তির সুপারিশ করেছিল লোকাযুক্ত । সরকার তা মানেনি । সেই বিধায়ক এখন শাসক দলের সঙ্গে রয়েছেন ।
২০০৯-এর পর ২০১৮, দ্বিতীয় লোকাযুক্ত নিয়োগ করতে নবান্ন ৯ বছর সময় নিয়েছে । কিন্তু নতুন লোকাযুক্তেরও কোনও কাজ নেই ! কারণ, সেই বিধি-বাম । নিয়ম হল, আইন কার্যকর করার জন্য বিধি প্রয়োজন । বিধিতেই আইন প্রয়োগের সরকারি পদ্ধতি বলা থাকে । ২০১৮-তে লোকাযুক্ত আইন সংশোধনের পরে তা পুরোমাত্রায় কার্যকর করতে বিধির প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন প্রশাসনের কর্তারা । কিন্তু এ নিয়ে লোকাযুক্তের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা ছাড়া কোনও অগ্রগতি হয়নি । গত বছর যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাবলিক অর্ডার রক্ষনাবেক্ষণ সংক্রান্ত কোনও দুর্নীতির অভিযোগ এলে তা লোকাযুক্তের বিচার্য হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । তবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্য কোনও দুর্নীতির অভিযোগ হলে তা বিধানসভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদনের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য লোকাযুক্ত গ্রহণ করতে পারবেন । আবার সরকারের অনুমতি ছাড়া আমলাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে না লোকাযুক্ত । সংশোধনীতে এমন বিধিনিষেধ রয়েছে । তারপরেও যতটা তদন্ত করার সুযোগ রয়েছে, তাও সম্ভব হচ্ছে না । আইনের বিধি তৈরি না হওয়ায় লোকাযুক্তের এই অচলাবস্থা কবে, কিভাবে কাটবে, তার উত্তর জানা নেই কারও ।